Home » সিরাজগঞ্জে ছাত্রদলের সাবেক আট নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী

সিরাজগঞ্জে ছাত্রদলের সাবেক আট নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী

0 মন্তব্য গুলি 21 জন দেখেছে 5 মিনিট পড়েছেন

বিশেষ প্রতিনিধি:

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ইতিমধ্যে ঘোষনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এই ঘোষনাকে সাধুবাদ জানিয়েছে। এর ফলে নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে। বিভিন্ন দল ইতিমধ্যে নির্বাচনের জন্য মাঠে নেমেছে। সিরাজগঞ্জের ৬টি আসনে ছাত্রদলের সাবেক আট নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী। নিজেদের শক্তি জানান দিতে মাঠে নেমেছেন তারা। চলছে, মিটিং, মিছিল, গণসংযোগ। সাবেক ছাত্র নেতাদের সমর্থন জানিয়ে তাদের সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচারনা চালাচ্ছেন।

সিরাজগঞ্জ-১ (কাজীপুর-সদর আংশিক):
এই আসনে সাবেক ছাত্রদল নেতাদের মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশী সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান রানা ও কাজীপুর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট রবিউল হাসান। নাজমুল হাসান রানার কাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ জেলায় সুপরিচিতি আছে। আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে ছিলেন। বেশ কয়েকবার কারা বরনও করেছেন তিনি। রয়েছে একাধিক মামলা। গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিষ্ট সরকারের পতনের পর কাজীপুরে ব্যাপক শোডাউন করেছেন নাজমুল হাসান রানা। দলের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতা হিসেবে খ্যাতি রয়েছে তার। ২০০৮ সালের নির্বাচনে নাজমুল হাসান রানাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। পরে নেতাদের অনুরোধে মনোনয়ন পত্র প্রত্যহার করেন। যমুনা নদী বেষ্টিত কাজীপুরের চরাঞ্চল সহ নির্বাচনী এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। নির্বাচনী গণ সংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন নাজমুল হাসান তালুকদার রানা রানা। বসে নেই রবিউল হাসান। তিনিও দলের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতা। মামলা হামলার স্বীকার হয়েছেন তিনি। তার একটি পা কেটে দিয়েছে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। পঙ্গুত্ব নিয়ে তিনি জীবন যাপন করছেন। তিনি ও মনোনয়ন প্রত্যাশী।

সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ):
এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মির্জা মোস্তফা জামান ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও দপ্তর সম্পাদক, বর্তমান স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান।
সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মির্জা মোস্তফা জামানের বাবা সিরাজগঞ্জ-২ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মির্জা মোরাদুজ্জামান। বাবার মতো সৎ নেতা হিসেবে তারও ব্যাপক সুনাম রয়েছে। একাধিক মামলার কারনে বেশ কয়েকবার কারাবরন করেছেন। বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতন আন্দোলনে তার ভূমিকা প্রশংসনীয়। তিনি বর্তমানে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার বিশাল কর্মী বাহিনী ও সমর্থক রয়েছেন। দলমত নির্বিশেষে সিরাজগঞ্জের মানুষের কাছে তিনি একজন সৎ ও আদর্শবান নেতা হিসেবে পরিচিত। বাবার অসমাপ্ত কাজ তিনি করে যেতে চান। এজন্য তিনি মাঠে কাজ করছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা ও ধানের শীষের ভোট চাইতে তিনি এখন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। এদিকে ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে ফেলেছেন। তরুন এই নেতা প্রার্থী হওয়ায় তাকে নিয়েও আলোচনা চলছে। তিনি গণসংযোগ করছেন। তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা সম্পর্কে মানুষকে জানান দিচ্ছেন।

banner

সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ):
রায়গঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক ভিপি আইনুল হক এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি রায়গঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক ও রায়গঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। নির্বাচনী এলাকায় তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। এই আসনে যে কয়েকজন প্রার্থী রয়েছেন সবার চেয়ে এগিয়ে তিনি। বিগত সরকার পতন আন্দোলনে তার উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। মিছিল, মিটিং, সাবেশ, হরতাল, অবরোধ সবখানে তিনি উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার বলিষ্ট নেতৃত্বে হরতাল-অবরোধে মহাসড়ক ছিলো তার দখলে। এজন্য তাকে বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব সদস্যরা। রায়গঞ্জ উপজেলায় সর্বচ্চ মামলার আসামী ও একাধিক বার কারাগারে যেতে হয়েছে তাকে। জনপ্রিয় এই নেতা মনোনয়ন পাবেন বলে নেতাকর্মীরা মনে করছেন।

সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী):
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারন সম্পাদক আমীরুল ইসলাম খান আলীম এই আসনে মনোনয়ন পাবেন বলে তার সমর্থকদের ধারনা। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে ধানের শীষ প্রতিকে তিনি নির্বাচন করেছেন। জেলার ৬টি আসনের ধানের শীষের প্রার্থীদের মধ্যে তিনিই সর্বচ্চ ভোট পেয়েছিলেন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে তিনি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাকে নির্বাচনী এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। মিছিল-সভা-সমাবেশে বাঁধা দেওয়া হয়েছে। হামলা-মামলার শিকার দলীয় নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর নিয়েছেন। কারাগারে আটক নেতাকর্মীদের জামিনের ব্যবস্থা করেছেন। তার নেতৃত্বে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।

সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর):
তাঁত সমৃদ্ধ এই আসনে ছাত্রদলের সাবেক দুই নেতা মনোনয়ন চাইবেন। একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও এফ রহমান হলের সাবেক সভাপতি গোলাম সরোয়ার। আরেকজন ছাত্রদল মনোনীত শাহজাদপুর সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক কক্ষ ও পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ছালাম। তারা দুজনই নির্বাচনী এলাকা শাহজাদপুরে গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে শাহজাদপুর। ছাত্রদলের সাবেক এই দুই নেতা ইতিমধ্যে মানুষের কাছে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছেন। তাদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সব খানে।

সিরাজগঞ্জ-১ আসনের প্রার্থী নাজমুল হাসান রানা বলেন, জেলার মধ্যে সব চেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কাজীপুরে বিএনপি নেতাকর্মীরা। ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও মোহাম্মদ নাসিমের গুন্ডা বাহিনীর হামলা, ভাংচুর, মামলার কারনে গত ১৭ বছর দলীয় নেতাকর্মীরা কাজীপুরে থাকতে পারেনি। তার পরও নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন করেছি মাঠে নেতৃত্ব দিয়েছি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। পরে নেতাদের অনুরোধে আমার মনোনয়ন পত্র প্রত্যহার করে আব্দুল মজিদ মিনু ভাইকে দিয়ে দেই। এবারও দলের চেয়ারপার্সন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাকেই মনোনয়ন দেবেন বলে প্রত্যাশা করি।

সিরাজগঞ্জ-২ আসনের প্রার্থী মির্জা মোস্তফা জামান বলেন, দলের দুসময়ে অনেককে দেখা যায়নি। আওয়ামীগের সাথে আতাত করে চলেছেন। হাসিনার আমলে সিরাজগঞ্জের বিএনপির নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে একাধিকবার কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। তারপরও রাজপথ ছাড়িনি। ভয়ে পালিয়ে যায়নি। হরতাল-অবরোধ-মিছিল-মিটিং এ রাজপথে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। আমার বাবা এই আসনের এমপি ছিলেন। সিরাজগঞ্জের মানুষ তাকে সৎ ও আদর্শবান মানুষ হিসেবে জানতেন। সেই পথ ধরে আমি এগিয়ে যাচ্ছি। তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা নিয়ে আবারো মাঠে নেমেছি। আশা করি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।

সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের প্রার্থী ভিপি আইনুল হক বলেন, বিগত স্বৈরাচারী হাসিনার আমলে রাজপথ ছিলো আমার ঠিকানা। তা সবাই জানে। মৃত্যুর ভয় করিনি। রাজপথে থেকেছি। হরতাল-অবরোধে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন করেছি। এজন্য প্রশাসন ও আওয়ামীলীগ আমার প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলো। বগুড়া থেকে র‌্যাব আমাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে আটক রাখে তার পরও দমিয়ে যায়নি। আমি রাজপথের মানুষ। রাজপথে আছি, থাকবো। দল এবার আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে বিশ্বাস করি।

সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম ছালাম বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে প্রাথম যে দিন আদালত সাজা দেয় সেদিন আমি ঢাকার রাজপথে ছিলাম। পুলিশের টিয়ার সেলে আহত হই। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে জনসভায় আওয়ামীলীগ ও পুলিশ হামলা চালায়। আমি পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। তখন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা আমাকে মারপিট করে রাস্তায় ফেলে যায়। জুলাই গণ আন্দোলনে বেরিগেট ভেঙ্গে আহত হয়েছি। ধানের শীষ প্রতিকের আশায় কাজ করছি। আমি মনে করি দল এবার আমাকে মূল্যায়ন করবে।

এই সম্পর্কিত আরো পোস্ট দেখতে পারেন

কমেন্ট লিখুন