তৃণমূলের সংবাদ ডেস্ক :
এক সময়ের জমজমাট সাপের খেলা এখন কেবলই স্মৃতি হয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার সকালে ঠাকুরগাঁও শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কাঠের বাক্সে ফণা তুলেছিল গোখরো, কেউটে, চন্দ্রবোড়া, দাঁড়াশ আর অজগরের মতো সাপ। কিন্তু আশপাশে দর্শকের ভিড় ছিল না বললেই চলে। আধুনিক সচেতনতার ঢেউয়ে সাপুড়েদের চিরায়ত জীবন যেন বিলীন হতে বসেছে।
দিনাজপুর পৌর শহরের শেখপুরা মহল্লার প্রবীণ সাপুড়ে মো. আইনুদ্দিন (৭৫) ৪০ বছর ধরে সাপের খেলা দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। এ পেশার আয়েই তিনি দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে মানুষ করেছেন। কিন্তু এখন তার কণ্ঠে হতাশার সুর—“আগে ভিড় লেগে থাকত, এখন আর কেউ আসে না।”
তিনি জানান, ঢাকার সাভারের বাজার থেকে সাপ কিনতে হয়, যার বেশিরভাগই আসে ভারত থেকে। একেকটি বিষধর সাপ কিনতে খরচ হয় ৫-৬ হাজার টাকা। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও এই পেশায় টিকে থাকতে গিয়ে একাধিকবার সাপে কামড়েছেন তিনি। তবে তার বিশ্বাস, সাপে কামড়ের পর বাঁচার একমাত্র ভরসা মেডিকেলের ভ্যাকসিন।
আইনুদ্দিনের দলের অন্য সদস্য নুর ইসলাম ও হবিবুর রহমানও হতাশ। নুর ইসলাম বলেন, “আগে খেলা দেখিয়ে ওষুধ বিক্রি করে সংসার চলত, এখন আর কেউ কেনে না। হয়তো শিগগিরই ফলের দোকান দিতে হবে।” হবিবুর রহমানের কথায়ও ভেসে ওঠে অনিশ্চয়তা—“খেলা দিয়ে সংসার চলে না, নতুন পথ খুঁজতেই হবে।”
সাপুড়েরা খেলার আগে বিষদাঁত ভেঙে ফেললেও ঝুঁকি পুরোপুরি কমে না, কারণ প্রতি মাসেই নতুন বিষদাঁত গজায়। ফলে প্রায়ই সাপের কামড়ে আহত হন তারা। তবুও তারা স্বীকার করেন, নিজেদের তৈরি গাছগাছালির ওষুধ নয়—শুধু চিকিৎসাই পারে জীবন বাঁচাতে।
আইনুদ্দিন অকপটে বলেন, “কাউকে সাপে কামড়ালে প্রথম কাজ হওয়া উচিত মেডিকেলে গিয়ে ভ্যাকসিন নেওয়া। ওঝা বা ঝাড়ফুঁকে সময় নষ্ট করলে রোগীর প্রাণ যায়।”
ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলামও একই কথা বলেন। তার মতে, “যারা প্রতিদিন সাপ নিয়ে ঝুঁকি নেন, তারাও শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে ভরসা খোঁজেন। এই অভিজ্ঞতা জনসচেতনতার বড় বার্তা—সাপে কামড়ালে একমাত্র সমাধান ভ্যাকসিন।”
সময় বদলে যাচ্ছে, সাপুড়েদের পেশা হয়তো ম্লান হয়ে যাবে; কিন্তু তাদের অভিজ্ঞতা সমাজকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে—কুসংস্কার নয়, বিজ্ঞানের পথেই রয়েছে জীবনের সুরক্ষা।