মিকাত থেকে অথবা হারামের সীমানার বাইরে মিকাতের ভেতরের স্থান (হিল) থেকে ইহরামের নিয়ত করে বায়তুল্লাহ শরিফ তাওয়াফ করা, সাফা-মারওয়া সাঈ করা এবং মাথার চুল ফেলে দেওয়া বা ছোট করাকে ওমরাহ বলে। ৯ থেকে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত সময় ছাড়া বছরের যে কোনো সময় ওমরাহ পালন করা যায়। হজের পাঁচ দিন ওমরাহ করা মাকরুহ। (আল-বাহরুল আমিক, ৪/২০২১)।
ওমরাহে যাওয়ার জন্য মেয়াদযুক্ত পাসপোর্ট দরকার। পাসপোর্ট থাকলে দেখে নিন, পর্যাপ্ত মেয়াদ আছে কিনা। মেয়াদ না থাকলে মেয়াদ ঠিক করে নিন। আর যদি পাসপোর্টই না থাকে, তাহলে দ্রুত পাসপোর্ট করুন। ঘরে বসে ই-পাসপোর্টের আবেদন করা যায়। www.epassport.gov.bd ঠিকানায় অনলাইনে আবেদন করুন।
এজেন্সির সঙ্গে যাবেন, নাকি একা
বাংলাদেশ থেকে অধিকাংশ মানুষ এজেন্সির মাধ্যমে ওমরাহ করতে যান। ভিসা, টিকিট, হোটেল বুকিং, খাবারসহ যাবতীয় ব্যবস্থাপনার জন্য যাচাই করে বুঝেশুনে নির্ভরযোগ্য ও সেবাদানকারী মানসিকতাসম্পন্ন এজেন্সি নির্বাচন করুন। এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ও আস্থাভাজন মোয়াল্লিম ও আগে ওমরাহ পালনকারী ব্যক্তির সঙ্গে পরামর্শ করুন। এজেন্সির সঙ্গে চুক্তি হলে তারা ওমরাহ সফরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা (ভিসা, বিমানের টিকিট, হোটেল বুকিং ও খাবার) করে দেবেন।
প্রতারক চক্র ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত হজ ও ওমরাহ এজেন্সি না হয়েও বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ওমরাহ যাত্রীদের আকৃষ্ট করে। এতে ওমরাহ যাত্রীরা প্রতারণার শিকার হন। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রতিবছর যোগ্য হজ ও ওমরাহ এজেন্সির তালিকা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট ও হজ পোর্টালে (www.hajj.gov.bd) প্রকাশ করা হয়। লাইসেন্সপ্রাপ্ত যোগ্য হজ ও ওমরাহ এজেন্সির তালিকা যাচাই ছাড়া কাউকে অর্থ প্রদান করবেন না।
এজেন্সি ছাড়া একা গেলে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। যাদের আগে কোনো দেশে ভ্রমণ কিংবা ওমরাহর অভিজ্ঞতা নেই, তাদের জন্য একা সফর কষ্টসাধ্য। আর বিধিবিধান জানা না থাকলে ওমরাহর কাজগুলো সঠিকভাবে আদায় করতে সমস্যা হয়। এজেন্সির মাধ্যমে দলবদ্ধভাবে অভিজ্ঞ আলেম বা মোয়াল্লিমের সঙ্গে ওমরাহে যাওয়া উত্তম। এ ক্ষেত্রে খরচও কম হয় এবং বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায়।
ভিসা, টিকিট, হোটেল ও খাবার
বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন করে এজেন্সির কাছে পাসপোর্ট জমা দিন এবং ভিসা ও বিমানের টিকিট নিশ্চিত করুন। যাওয়া ও ফিরে আসার তারিখ নিশ্চিত করাসহ কোন বিমানে যাচ্ছেন, ফ্লাইট কি সরাসরি নাকি ট্রানজিট, মক্কা-মদিনায় কোন হোটেলে থাকবেন, হোটেল কতটুকু দূরে অবস্থিত, কীভাবে থাকবেন, প্রতিটি রুমে কতজন থাকবেন, কত বেলা খাবার পরিবেশন করা হবে, কোন বেলায় কী খাবার দেওয়া হবে, মক্কা-মদিনার জিয়ারতে কোন কোন স্থান দেখানো হবে– সবকিছু ভালোভাবে জেনে নিন। পাশাপাশি এজেন্সিকে দেওয়া টাকা লেনদেনের রসিদ গ্রহণ করুন।
উত্তম সফরসঙ্গী নির্বাচন
ওমরাহ সফরে যোগ্য আলেম ও সফরসঙ্গী নির্বাচন করা জরুরি। একাধিকবার ওমরাহর সফরকারী অভিজ্ঞ, ভালো ও পরহেজগার আলেম হলে সবচেয়ে উত্তম।
প্রশিক্ষণ
ওমরাহর বিধিবিধান ও নিয়মকানুন শুধু বই পড়ে বা শুনে হয় না। এ জন্য সরাসরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা জরুরি।
প্রয়োজনীয় পড়াশোনা
ওমরাহর গুরুত্ব, বিধিনিষেধ ও পালনের নিয়মকানুনসহ পুরো ওমরাহ সফরটি সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান রাখতে হবে। তাই এ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পড়ুন ও জানুন। প্রাসঙ্গিক বিষয়ে পড়াশোনা করে নিজেকে ঠিকমতো প্রস্তুত করে নিন।
স্বাস্থ্য পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রসঙ্গ
ওমরাহে যাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ওষুধ নিন। সৌদি আরবে নিজস্ব চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনো ওষুধ বিক্রি করা হয় না। সুতরাং সফরে যত দিন থাকবেন, তত দিনের চেয়ে অতিরিক্ত ওষুধ দেশ থেকেই নিয়ে নিন।
আগে মক্কা, নাকি মদিনা
ঢাকা থেকে আগে জেদ্দা হয়ে মক্কায় যাবেন, নাকি আগে মদিনায় যাবেন, তা জেনে নিন। সফর যদি আগে মদিনায় হয়, তাহলে ঢাকা থেকে স্বাভাবিক পোশাকে সফর করুন। মদিনা থেকে মক্কায় যাওয়ার সময় মিকাত থেকে ইহরাম করুন। আর যদি সরাসরি জেদ্দা হয়ে মক্কায় হয়, তাহলে বাসা থেকে কিংবা বিমানবন্দরে বা ট্রানজিট দেশে অথবা মিকাতের আগে বিমানে ইহরামের নিয়ত করুন।
ওমরাহর জন্য বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করবেন
ওমরাহর ভিসার জন্য Saudi Visa Bio অ্যাপের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন (পাসপোর্ট, মুখমণ্ডলের ছবি ও আঙুলের ছাপ) করতে হয়। এ রেজিস্ট্রেশন ছাড়া এখন আর ওমরাহর ভিসা দেওয়া হয় না। সুতরাং বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করুন।
তালবিয়া
লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।
অর্থ: ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, এই যে আমি। আর তোমার কোনো শরিক নেই, আমি হাজির। সব প্রশংসা ও কর্তৃত্ব শুধু তোমারই আর তোমার কোনো শরিক নেই।’
(বুখারি, হাদিস : ১৫৪৯)
“সুত্র: দৈনিক সমকাল”