Home » লাইনচ্যুতির বৃত্তে রেল

লাইনচ্যুতির বৃত্তে রেল

রেলের জমিতে হাট-বাজার, বসতি বানিয়ে রেললাইনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা হয়েছে

0 মন্তব্য গুলি 6 জন দেখেছে 3 মিনিট পড়েছেন

রেল চলাচলে লইনচ্যুতির ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্নস্থানে বেশ কয়েকটি লাইচ্যুতির ঘটনা ঘটে। পুরোনো লাইন, দুর্বল রেল, কম স্লিপার, লাইনে পর্যাপ্ত পাথর ও ফিস প্লেট না থাকাসহ নানা করণে প্রায়ই ঘটছে এই দুর্ঘটনা। রেললাইনে সিগন্যাল ত্রুটিও রয়েছে। ভুল সিগন্যাল দেওয়াও ট্রেন লাইনচ্যুতির কারণ বলছেন সংশ্লিটরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নীতিমালায় বলা আছে, রেল ট্র্যাকের ১০ ফুটের মধ্যে সবসময় ১৪৪ ধারা জারি থাকবে অলিখিতভাবে। কেউ তার আশেপাশে আসতে পারবে না। কিন্তু বাস্তব চিত্র এর উল্টো। রেলের জমিতে হাট-বাজার, বসতি বানিয়ে রেললাইনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা হয়েছে। দুর্ঘটনা রোধে এসব অবৈধ দখল উচ্ছেদ করার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

জানা যায়, দেশে ২ হাজার ৮৭৭ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। এর মধ্যে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ৯৪৮ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ করে। এসব রেলপথে আড়াই হাজার অর্থাৎ ২ হাজার ৫৪১টি রেলক্রসিং আছে। সে হিসেবে রেললাইনের প্রায় প্রতি কিলোমিটারে একটা করে লেভেল ক্রসিং থাকার কথা। আর এসব রেল ক্রসিংয়ের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশে কোনো গেট নেই। ট্রেন চলাচলে যত দুর্ঘটনা ঘটে তার বেশিরভাগই বগি ও ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হয়ে।

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের পাওয়ার কারের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর ভোর পৌনে ৪টার দিকে আক্কেলপুর রেলস্টেশনের দক্ষিণে ভদ্রকালী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনা প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। দুর্ঘটনার পরে লাইনচ্যুত বগি ও পেছনের কয়েকটি বগি ফেলে রেখে মাত্র পাঁচটি বগি নিয়ে ট্রেনটি জয়পুরহাট স্টেশনে পৌঁছায়। সকাল ৮টার দিকে পার্বতীপুর থেকে একটি রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে হলহলিয়া রেলসেতুর আগে হঠাৎ বগিটি লাইনচ্যুত হয়। এ সময় বগি থেকে ধোঁয়া ও পোড়া গন্ধ বের হলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যাত্রীরা পাওয়ার কারের দায়িত্বে থাকা স্টাফদের ঘটনাটি জানান। রেলওয়ের সিøপারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনার পর পর ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রাম অভিমুখী কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি বগি গত ৬ সেপ্টেম্বর লাইনচ্যুত হয়। বেলা ৩টা ২০ মিনিটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের আউটারে শহরের কলেজপাড়া লেভেল ক্রসিং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ট্রেনের বগি লাইনচ্যুতির ঘটনায় ডাউন লাইনে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে ঢাকামুখী আপ লাইন দিয়ে সব ট্রেন চলাচল করছে। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন নির্ধারিত যাত্রাবিরতি দেয়। বেলা ৩টা ২০ মিনিটে রেলস্টেশনের আউটারে কলেজপাড়া লেভেল ক্রসিংয়ের কাছে ট্রেনের ‘চ’ বগির পেছনের চাকা বিকট শব্দে লাইনচ্যুত হয়। এতে ডাউন লাইনে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে ঢাকামুখী আপ লাইন দিয়ে সব ট্রেন চলাচল করছে।

banner

ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশন এলাকার কাছে গত ২৩ আগস্ট সকালে যাত্রীবাহী একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। এতে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ঢাকামুখী ওই লাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। সকাল ৮টা ১৭ মিনিটে ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। পরে বেলা ১টা ৫০ মিনিটের দিকে লাইনটি দিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।গত ২৪ আগস্ট রাজশাহীতে লাইনচ্যুত অবস্থায় একটি বগি রেখেই যাত্রা করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ঈশ্বরদীর মধ্যে চলাচল করা সিক্স ডাউন (লোকল) ট্রেন। প্রায় চার ঘণ্টা পর দুপুর ২টার দিকে ট্রেনের বগিটি উদ্ধার করা হয়। সকাল ১০টার দিকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনটির একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এরপর একটি বগি রেখে বেলা ১১ টা ৪০ মিনিটে ট্রেনটি ঈশ্বরদীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ৬ ও ৭ নাম্বার লাইনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটের ট্রেন চলাচল করে। এই লোকাল ট্রেনটির বগি লাইনচ্যুত হয় সাত নম্বর লাইনে। ট্রেনটি লাইনচ্যুতের ঘটনার রাজশাহীর সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ট্রেন চলাচল বন্ধ না হলেও দীর্ঘ চার ঘণ্টা পড়ে ছিল বগিটি। দীর্ঘ চেষ্টায় রেলওয়ের কর্মীরা লাইনচ্যুত বগিটি উদ্ধারে সক্ষম হয়।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সরকার রেলকে বেহিসাবি টাকা দিচ্ছে, বড় বড় প্রকল্প দিচ্ছে। টাকার ক্ষেত্রে কোনো কার্পণ্য করছে না। কিন্তু রেল সঠিকভাবে পরিকল্পনা নিতে পারছে না। যে কারণে এই পরিস্থিতি। লাইনগুলো রয়েছে সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা, লাইনের নিচে পাথর দেওয়া, উপযুক্ত বগি ও কোচ কেনা। যে ইঞ্জিন দিয়ে রেল চলে তার প্রায় ৭০ শতাংশেরই মেয়াদ নেই। একই অবস্থা কোচের ক্ষেত্রে।

“সুত্র: দৈনিক ইনকিলাব”

এই সম্পর্কিত আরো পোস্ট দেখতে পারেন

কমেন্ট লিখুন