Home » মেট্রোরেল স্টেশনে বুথ স্থাপনে ব্যাংকের আগ্রহ বাড়ছে কেন

মেট্রোরেল স্টেশনে বুথ স্থাপনে ব্যাংকের আগ্রহ বাড়ছে কেন

0 মন্তব্য গুলি 2 জন দেখেছে 4 মিনিট পড়েছেন

রাজধানীর ব্যস্ততম মেট্রোরেল এখন কেবল যাতায়াতের মাধ্যমই নয়, এটি বরং ব্যাংকগুলোর সেবা প্রদানের এক নতুন উপায় হয়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন ব্যাংক মেট্রোরেল স্টেশনগুলোতে এটিএম ও সিআরএম (ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন) বুথ স্থাপন করে চলেছে। স্টেশনগুলোতে ইতিমধ্যে ৬৬টি বুথ বসে গেছে।

মেট্রোরেল প্রতিদিন প্রায় ৪ লাখ যাত্রী বহন করছে। ফলে চলতি পথে মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোতে এটিএম ও সিআরএম বুথে টাকা লেনদেনের চাহিদা বাড়ছে।

ব্যাংকাররা আলাপকালে জানান, সাধারণত ব্যবসায়িক সম্ভাবনা এবং নিরাপত্তা ও খরচের কথা চিন্তা করেই এটিএম ও সিআরএম যন্ত্র বসানো হয়। কিন্তু মেট্রোরেলের ১৬ স্টেশনে বুথ বসানোর ক্ষেত্রে তা ভাবা হচ্ছে না। ধরে নেওয়া হয়েছে, মেট্রোরেলের যাত্রীদের অধিকাংশই কোনো না কোনো ব্যাংকের গ্রাহক। এ ছাড়া মেট্রোস্টেশনে সুপরিসর জায়গা থাকায় গ্রাহকেরা লেনদেনে বেশ স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। সেখানে নিরাপত্তাকর্মীরও প্রয়োজন পড়ে না। শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রও (এসি) বসাতে হচ্ছে না। ফলে খরচ কম হয়। তবে এর সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যেমন অন্যান্য এটিএম বা সিআরএমগুলো ২৪ ঘণ্টা চালু থাকলেও মেট্রোস্টেশনের বুথ থেকে সর্বোচ্চ ১৪ ঘণ্টা সেবা পাওয়া যায়। বন্ধের দিনে তো আরও কম সময় স্টেশন খোলা থাকে।

গ্রাহকদের আরও কাছে ব্যাংকিং

মেট্রোরেল ব্যবহারকারী যাত্রীরা আসা-যাওয়ার সময়ই সহজে টাকা তুলতে বা জমা দিতে পারেন। এতে সময় বাঁচে এবং লেনদেনও দ্রুত ও নিরাপদ হয়। জানা গেছে, মেট্রোস্টেশনগুলোতে মোট ১১টি ব্যাংক ১৪৪টি যন্ত্র স্থাপনের অনুমতি পেয়েছে। এর মধ্যে ১০টি ব্যাংক এখন পর্যন্ত ৬৬টি এটিএম ও সিআরএম খুলেছে।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের জুনে ঢাকার আগারগাঁও স্টেশনে প্রথম এটিএম বুথ বসায় ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি (ইবিএল)। এরপর অন্যরা এগিয়ে আসে। ইতিমধ্যে ১৬টি স্টেশনের সব কটিতে বুথ চালু করেছে ইবিএল ও ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক।

মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এটিএম বা সিআরএম যন্ত্র বসানোর জন্য টেন্ডার তথা দরপত্র আহ্বান করলে ব্যাংকগুলো তাতে অংশ নেয়। এর মধ্যে ১৬ স্টেশনের সব কটিতে বুথ বসানোর কাজ পায় ঢাকা ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ইউসিবি, ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক। এর মধ্যে ঢাকা ব্যাংক ইতিমধ্যে ২টি স্টেশনে, এনসিসি ব্যাংক ১০ স্টেশনে, ইউসিবি ৮ স্টেশনে, ইসলামী ব্যাংক ১ স্টেশনে, সিটি ব্যাংক ১ স্টেশনে ও ট্রাস্ট ব্যাংক ৬ স্টেশনে এটিএম বা সিআরএম বুথ চালু করেছে। মার্কেন্টাইল ব্যাংক ও ওয়ান ব্যাংক ৩টি করে স্টেশনে বুথ বসানোর অনুমতি পেয়েছে এবং চালু করেছে। সোনালী ব্যাংক ১০টি স্টেশনে বুথ বসানোর অনুমতি পেলেও এখনো চালু করেনি।

ব্যাংকগুলোর সূত্রে জানা যায়, ঢাকা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক স্টেশনগুলোতে সিআরএম যন্ত্র বসাচ্ছে। ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক সিআরএমের পাশাপাশি এটিএম যন্ত্রও বসাচ্ছে। অন্য ব্যাংকগুলো শুধু এটিএম যন্ত্র বসাচ্ছে।

খরচ কমেছে ব্যাংকের, আয় বাড়ছে রেলের

ব্যাংকগুলোর সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত একটি এটিএম বুথ পরিচালনার জন্য মাসে খরচ হয় প্রায় ১ লাখ টাকা, যার বড় অংশই যায় নিরাপত্তাকর্মী ও শীতাতপনিয়ন্ত্রণের পেছনে। কিন্তু মেট্রোস্টেশনের বুথগুলোতে এই বাড়তি খরচ নেই। ফলে একটি বুথ পরিচালনার জন্য ব্যাংকগুলোর খরচ কমে এসেছে মাত্র ৪৫ হাজার টাকায়, যার মধ্যে ৪০ হাজার টাকা আবার ভাড়া বাবদ পরিশোধ করতে হয়। এতে ব্যাংকগুলোর এটিএম পরিচালনার খরচ কমে আসছে।

এদিকে ব্যাংকগুলোর এটিএম ও সিআরএম বুথ এখন ডিএমটিসিএলের (ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড) আয়ের উৎস হয়ে উঠেছে। বুথ ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে প্রায় ৫৭ লাখ টাকা আয় করছে ডিএমটিসিএল।

জানতে চাইলে সিটি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক অরূপ হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্টেশনে বুথের পেছনে খরচ বেশ কম। এ ছাড়া নিরাপত্তা নিয়েও তেমন ভাবতে হচ্ছে না। আমরা ১৬ স্টেশনেই বুথ বসাচ্ছি। ইতিমধ্যে মতিঝিল স্টেশনে বুথ চালু হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে আরও চারটি স্টেশনে বুথ বসানোর কাজ শেষ হবে। এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে সব স্টেশনে বুথ চালু হয়ে যাবে।’

এটিএমের জায়গা নিচ্ছে সিআরএম

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো এখন এটিএমের পরিবর্তে সিআরএমের দিকে বেশি ঝুঁকছে। কারণ, সিআরএমের মাধ্যমে টাকা জমা ও উত্তোলন দুটিই করা যায়। যদিও একটি সিআরএমের দাম ১৩-১৫ লাখ টাকা, যা এটিএমের (৬-৭ লাখ টাকা) চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। তবু বহুমুখী সুবিধা এবং গ্রাহক চাহিদার কারণে এটিই এখন ব্যাংকগুলোর পছন্দে এগিয়ে রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এটিএম যন্ত্র কমছে, অন্যদিকে সিআরএম যন্ত্র বাড়ছে। গত মে মাস শেষে দেশে এটিএম যন্ত্র ছিল ১২ হাজার ৯২৫টি, যা জুনে কমে হয়েছে ১২ হাজার ৯১৮টি। আর মে মাসে সিআরএম যন্ত্র ছিল ৭ হাজার ৩৪৫টি, জুনে যা বেড়ে হয়েছে ৭ হাজার ৪১১টি। জুনে এটিএমে লেনদেন হয়েছে ২৪ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা ও সিআরএমে লেনদেন হয়েছে ১৭ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা।

ঢাকা ব্যাংকের রিটেইল ব্যবসা বিভাগের প্রধান এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেট্রোস্টেশনে সিআরএম বা এটিএম স্থাপনের মূল উদ্দেশ্য হলো যাত্রী ও দর্শনার্থীদের জন্য যাতায়াতের সময়েই সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা। এর ফলে তাঁরা নগদ অর্থ উত্তোলন, জমা, বিল পরিশোধ ও অন্যান্য লেনদেন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে পারছেন।’ ঢাকা ব্যাংক ইতিমধ্যে ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার স্টেশনে সিআরএম চালু করেছে বলে জানান তিনি।

সূত্রঃ প্রথম আলো

এই সম্পর্কিত আরো পোস্ট দেখতে পারেন

কমেন্ট লিখুন