Home » মরদেহ ভাসছিল মেঘনায়

মরদেহ ভাসছিল মেঘনায়

0 মন্তব্য গুলি 6 জন দেখেছে 4 মিনিট পড়েছেন

অফিসে যাওয়ার কথা বলে বেরিয়ে এক দিন আগে নিখোঁজ সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের খোঁজ মিলেছে। তবে জীবিত পাওয়া যায়নি প্রবীণ এ সাংবাদিককে। রাজধানীর সিদ্বেশরী এলাকা থেকে নিখোঁজের ৩১ ঘণ্টা পর মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তার মরদেহ।

এদিকে বিভুরঞ্জন সরকারের মরদেহ উদ্ধারের সংবাদটি ছড়িয়ে পড়লে তার সহকর্মীরা দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন। ফেসবুকে তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা হৃদয়গ্রাহী স্মৃতিচারণ করছেন। অনেক সাধারণ মানুষও তার মৃত্যু নিয়ে বেদনাদায়ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জের কলাগাছিয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) সালেহ আহমেদ বলেন, ‘শুক্রবার বিকেলে কলাগাছিয়া এলাকায় মেঘনা নদীতে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তির লাশ ভাসতে দেখা যায়। নৌ-পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর রমনা থানা এলাকা থেকে নিখোঁজ সাংবাদিকের ছবির সঙ্গে মিল পায়।

তিনি জানান, রমনা থানায় করা জিডির সঙ্গে বিভুরঞ্জনের যে ছবিটি পরিবার দিয়েছিল, তার সঙ্গে মিলিয়ে দেখার পর বিষয়টি রমনা থানাকে জানায় মুন্সীগঞ্জের পুলিশ।

banner

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মেঘনা নদীতে লাশ পাওয়া গেছে। আমরা মোটামুটি কনফার্ম হয়েছি। তার পরিবার গেলে শনাক্ত করে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।’

এর আগে পরিবার জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে বাসা থেকে বের হন বিভুরঞ্জন। শুক্রবার সকালেও তিনি ফেরেননি। মোবাইল ফোনটি তিনি বাসায় রেখে গেছেন। কারও কাছে তার কোনো তথ্য না পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার ছেলে ঋত সরকার।

সেখানে তিনি বলেছেন, ‘প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার জন্য রওনা করেন বাবা। কিন্তু এরপর আর বাসায় ফেরেননি। আমরা বাবার অফিসে (বনশ্রী) খোঁজ নিই এবং জানতে পারি যে তিনি অফিসে উপস্থিত হননি। পরে আমরা সম্ভাব্য সব স্থানে অনেক খোঁজাখুঁজি করি। কিন্তু কোথাও পাওয়া না গেলে থানায় এসে সাধারণ ডায়েরির আবেদন করলাম।’

ডায়েরি করার সময় রমনা থানার ওসি গোলাম ফারুক বলেছিলেন, ‘আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। তবে উনি ফোনটা বাসায় রেখে গেছেন। ফোনটা সঙ্গে থাকলে হয়তো খুঁজে পেতে সুবিধা হতো।’

এদিকে বিভুরঞ্জনের কর্মস্থল আজকের পত্রিকা থেকে জানানো হয়েছে, ‘গত ১৬ আগস্ট থেকে সাত দিনের ছুটিতে রয়েছেন তিনি।’

৭১ বছর বয়সী বিভুরঞ্জন চাকরি করতেন ‘আজকের পত্রিকা’য়। এর বাইরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত কলাম লিখতেন। তিনি সর্বশেষ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে মেইল করেন বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টায়। সেখানে তিনি লেখেন, ‘জীবনের শেষ লেখা হিসেবে এটা ছাপতে পারেন।’

বিভুরঞ্জনের ছোট ভাই চিররঞ্জন সরকার বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে লেখেন, ‘আমার দাদা সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকার বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় অন্যান্য দিনের মতো অফিস (আজকের পত্রিকা) যাবেন বলে বাসা থেকে বের হন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি অফিসে যায়নি। পরিচিত পরিমণ্ডলের কোথাও যাননি। আজ কেউ তাকে দেখেনি। রাত ১টা পর্যন্ত তিনি বাসায় ফেরেননি। হাসপাতাল-পার্ক কোথাও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তার জন্য আমরা পরিবারের সবাই ভীষণ উদ্বেগের মধ্যে আছি।’

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কলাগাছিয়া নৌ-ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিভুরঞ্জন সরকারের লাশ উদ্ধার করে। পরে সন্ধ্যায় তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

সাংবাদিক মহলে শোকের ছায়া : গতকাল সন্ধ্যার দিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভুরঞ্জন সরকারের মরদেহ উদ্ধারের সংবাদটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে তার সহকর্মীরা দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন। ফেসবুকে তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা হৃদয়গ্রাহী স্মৃতিচারণ করছেন। এ ছাড়া অনেক সাধারণ মানুষও তার মৃত্যু নিয়ে বেদনাদায়ক প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।

‘আজকের কাগজে’র সাবেক সম্পাদক ড. গোলাম রহমান লিখেছেন, ‘আজকের পত্রিকায় থাকাকালীন আমার অন্যতম সহকর্মী এবং বন্ধু বিভুরঞ্জন সরকারের লাশ নারায়ণগঞ্জের অদূরে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তার আত্মার শান্তি কামনা করি। তার মৃত্যু অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়ে গেল! তার লেখা একটি লেখা থেকে সমাজের প্রতি তার অভিমান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি।’

সিনিয়র সাংবাদিক জ ই মামুন লেখেন, ‘নিখোঁজের দুদিন পর প্রখ্যাত কলামিস্ট, সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের মরদেহ পাওয়া গেল মেঘনা নদীতে। কী আক্ষেপ, হতাশা আর অভিমান নিয়ে তিনি চলে গেলেন। তা প্রতিটি শব্দে-অক্ষরে ফুটে উঠেছে তার জীবনের শেষ লেখায়। আমাদের ক্ষমা করবেন, শ্রদ্ধেয় বিভুদা!’

সাংবাদিক শরিফুল্লাহ কায়সার সুমন লেখেন, ‘পরিবার হয়তো নিশ্চিত করবেন এই লাশ বিভুদার। কিন্তু আসলে এই লাশ সৎ সাংবাদিকতার।’

হাসান মিসবাহ নামে একজন লেখেন, ‘মানুষ মারা গেলে তার জন্য কত হা-হুতাশ, কত দুঃখ এই সমাজের। অথচ বেঁচে থাকতে তার যন্ত্রণা বোঝা দূরে থাক, তার কথা শোনার সময়ও কারও নেই।’

সফিউল আজম রাজন নামের একজন লিখেছেন, ‘কতজন কত কিছু পেয়েছে। অথচ উনার মতো সৎ ও সাহসী সাংবাদিক কিছুই পাননি। উনার মতো লেখনী কয়জনের ছিল? রাম, শ্যাম, যদু, মধুও প্লট পেয়েছেন সাংবাদিক কোটায়। কিন্তু উনি দুবার আবেদন করেও পাননি। প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে কতজন সাহায্য পেয়েছেন। কিন্তু উনি আবেদন করলেও তাকে দেয়া হয়নি। এমন একজন মেধাবী ও কমিটেড মানুষ শুধু অভাবের কারণে এভাবে চলে গেলেন। এ দায় কার? জানি এ নিয়ে কারও কিছু যাবে আসবে না। কাঁদবে শুধু পরিবার। পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতি একরাশ ঘৃণা জানিয়ে রাখলাম।’

‘দুঃখই হোক আমার জীবনের শেষ সঙ্গী। আর পৃথিবীর সব প্রাণী সুখী হোক’ বিভুরঞ্জন সরকারের খোলা চিঠির এ মন্তব্য ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

 

সূত্রঃ দেশ রূপান্তর

এই সম্পর্কিত আরো পোস্ট দেখতে পারেন

কমেন্ট লিখুন