বহু আকাঙ্ক্ষিত সরকারি চাকরির প্রথম ধাপ হলো বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। যদিও এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতির প্রয়োজন, শেষ মুহূর্তের সঠিক কৌশলই অনেক সময় ফলাফলের দিক পরিবর্তন করে দিতে পারে। যেহেতু ৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে, তাই এই অল্প সময়ে কীভাবে সর্বোচ্চ ফলপ্রসূ প্রস্তুতি নেওয়া যায়, সে বিষয়ে কিছু কার্যকর পরামর্শ এখানে তুলে ধরা হলো। এই সময়ে মূল চ্যালেঞ্জ হলো সময় ব্যবস্থাপনা ও সঠিকভাবে প্রশ্ন সমাধান করা।
নতুন কিছু পড়া থেকে বিরত থাকা
পরীক্ষার মাত্র কয়েক দিন আগে নতুন কোনো বিষয় বা টপিক পড়া থেকে বিরত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। এই সময়ে নতুন কিছু শিখতে গেলে তা ভালোভাবে মনে রাখা কঠিন হতে পারে এবং এতে এতদিন ধরে যা পড়েছেন, তা ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এখন আপনার প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত রিভিশন। এতদিন ধরে যা পড়েছেন, তা বারবার ঝালিয়ে নেওয়া। এই কৌশলটি আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে।
রিভিশন ও গুরুত্বপূর্ণ টপিকস দ্রুত অনুশীলন
শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির মূল মন্ত্র হলো রিভিশন। আপনি এতদিন ধরে যে নোটস, বই এবং হাইলাইট করা অংশগুলো পড়েছেন, সেগুলো বারবার পড়ুন। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র, তথ্য, তারিখ এবং সংজ্ঞাগুলো পুনরায় দেখুন। প্রতিটি বিষয়কে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নিয়ে রিভিশন করুন:
বাংলা: ব্যাকরণ অংশের সন্ধি, সমাস, কারক, এক কথায় প্রকাশ, বাগধারা, প্রবাদ-প্রবচন, বানান ও বিরামচিহ্ন– এসবের নিয়মগুলো পুনরায় দেখুন। সাহিত্যের ক্ষেত্রে সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম, জন্ম-মৃত্যু তারিখ ও গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থগুলো রিভিশন করুন।
ইংরেজি
গ্রামারের নিয়ম, ভোকাবুলারি, গুরুত্বপূর্ণ ফ্রেজ, ইডিয়ম এবং সিনোনিম-অ্যান্টোনিমগুলো ভালোভাবে দেখে নিন।
গণিত ও মানসিক দক্ষতা
যে সূত্রগুলো মনে রাখতে সমস্যা হয়, সেগুলো বারবার অনুশীলন করুন। গণিত অংশের শতকরা, লাভ-ক্ষতি, গড়, সময়-দূরত্ব এবং মানসিক দক্ষতার ক্ষেত্রে রক্ত সম্পর্ক, সিরিজ-এর মতো টপিকগুলো দ্রুত ঝালিয়ে নিন।
বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি: সাম্প্রতিক ঘটনাবলি, গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি, দেশের সংবিধান, বিভিন্ন সংস্থার সদর দপ্তর ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের নাম বারবার অনুশীলন করুন। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা, সংবিধানের ধারা ও সাম্প্রতিক জাতীয় উন্নয়নের বিষয়গুলো। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির ক্ষেত্রে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সাম্প্রতিক যুদ্ধ-সংঘাতের ওপর জোর দিন।
সাধারণ বিজ্ঞান ও কম্পিউটার
বিজ্ঞানের মৌলিক সূত্র, দৈনন্দিন বিজ্ঞান, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার-সফটওয়্যার, ইন্টারনেট, অপারেটিং সিস্টেম ও শর্টকাট কী-এর মতো বিষয়গুলো মনে রাখুন।
এ মুহূর্তে মডেল টেস্ট না দিয়ে প্রস্তুতির দিকে মনোযোগ দিন। কারণ এই সময়ে মডেল টেস্টে কম নম্বর পেলে আপনার মানসিক চাপ অনেক বেড়ে যেতে পারে। এর বদলে যা পড়েছেন তা রিভিশন করে মনে রাখার চেষ্টা করুন।
তবে, পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্ন অনুশীলন খুবই ফলপ্রসূ হতে পারে। বিসিএস পরীক্ষায় আগের বছরের প্রশ্নপত্র থেকে অনেক সময় মিল পাওয়া যায়। প্রতিদিন অন্তত ২-৩ সেট পুরোনো প্রশ্ন সমাধান করলে পরীক্ষার ধরন ও সময় ব্যবস্থাপনার বিষয়ে একটি ভালো ধারণা তৈরি হবে। সমাধানের পর উত্তর মিলিয়ে ভুলগুলো চিহ্নিত করুন এবং কোন অধ্যায় থেকে বেশি প্রশ্ন আসে, সেই ট্রেন্ড বিশ্লেষণ করুন।
দুর্বলতা চিহ্নিত করে গুরুত্ব দেওয়া
এই শেষ মুহূর্তে নিজের দুর্বল জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে পারলে এবং সেগুলোতে বাড়তি মনোযোগ দিলে আপনার স্কোর উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার গণিতে কোনো নির্দিষ্ট অংশে দুর্বলতা থাকে, তাহলে নতুন করে সমাধান না করে শুধু সেই অধ্যায়ের সূত্রগুলো বারবার রিভিশন করুন। এতে পরীক্ষার হলে ভুল করার সম্ভাবনা কমে যাবে। শক্তিশালী বিষয়গুলোতে খুব বেশি সময় নষ্ট না করে দুর্বল অংশে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
শর্ট নোট ও মাইন্ড ম্যাপ ব্যবহার
শেষ সময়ে বড় বই খোলার দরকার নেই। নিজের তৈরি করা শর্ট নোট, ফ্ল্যাশকার্ড বা মাইন্ড ম্যাপ বারবার দেখুন। এতে মনে রাখা সহজ হবে এবং ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা কমবে। মাইন্ড ম্যাপের মাধ্যমে আপনি একটি বিষয়ের মূল ধারণাগুলো একটি পাতায় তুলে ধরতে পারেন, যা দ্রুত রিভিশনের জন্য খুবই কার্যকর।
প্রশ্নপত্র সমাধানের কৌশল
পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর প্রথমেই পুরো প্রশ্নপত্রটি একবার চোখ বুলিয়ে নিন। যেসব প্রশ্নের উত্তর আপনি নিশ্চিত, সেগুলো প্রথমে সমাধান করুন। এতে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে। যে প্রশ্নগুলোর উত্তর আপনি জানেন না বা নিশ্চিত নন, সেগুলোর জন্য বেশি সময় নষ্ট করবেন না। নেগেটিভ মার্কিং এর ঝুঁকি কমাতে আন্দাজে উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। যে উত্তরগুলো সম্পর্কে আপনার সামান্যতম ধারণা আছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করতে পারেন।
“সুত্র: দৈনিক সমকাল”