তৃণমূলের সংবাদ ডেস্ক:
রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনই করছে না। স্থানীয় মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষায় ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে প্রকল্প এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে সবুজের বেষ্টনী বা গ্রিন বেল্ট। এই প্রকল্পের পার্শ্ববর্তী এলাকাসহ সেখানে মোট পাঁচ লাখ গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছেন বিদ্যুৎকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সম্প্রতি সরেজমিন ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র ও তার আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির চারপাশে গড়ে তোলা সবুজ বেষ্টনী বা গ্রিন বেল্টকে ঘিরে গড়ে উঠেছে ব্যতিক্রমী এক ইকোসিস্টেম। সেখানে রয়েছে পাখির কলোরব। সবুজ গাছের বেষ্টনী। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পাশেই মইদারা খালে ভেসে ওঠে ডলফিনের দল।
রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রের খালের চারপাশের জমি ও খালের পানিতে রামপাল প্রকল্পের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে এই সবুজের বেষ্টনী বা গ্রিন বেল্ট। আর গ্রিন বেল্টের সবুজে আকৃষ্ট হয়ে বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় উড়ে আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির দল। এর মধ্যে আছে নানা ধরনের অতিথি পাখি। বিকেল হলে মইদারা খালে ভেসে ওঠে ডলফিনের দল।
আপন মনে মইদারার পানিতে খেলায় মাতে তারা। শুরুতে এই প্রকল্পটি গড়ে তোলার প্রস্তুতি যখন চলছিল তখন পরিবেশবাদীরা বনের পশুপাখির ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করেছিলেন। কিন্তু একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশে ডলফিনের মতো স্পর্শকাতর প্রাণীর দাপাদাপি আর হরেক রকম পাখির কিচিরমিচির বলে দেয়, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবেশবান্ধব উদ্যোগে এখন পর্যন্ত সেখানকার ইকোসিস্টেমে কোনো ধরনের ব্যাঘাত ঘটেনি।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) রমানাথ পূজারী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গ্রিন বেল্টের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষে এখন দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ চলছে। এ জন্য বন বিভাগের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হচ্ছে।
সেখানে তাঁরা এক লাখ ছয় হাজার গাছ লাগাবেন। ৬০ হাজার গাছ এরই মধ্যে লাগানো হয়েছে। গত বর্ষাতেও প্রায় ৬০ হাজার গাছ লাগানো হয়েছিল। এ বছরও বর্ষায় গাছ লাগানো হচ্ছে। বছরের শেষ নাগাদ বাকি গাছ লাগানো শেষ হবে। তখন সব মিলে দুই লাখ গাছ লাগানো হবে।’
তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালের শুরু থেকে যে গ্রিন বেল্ট কার্যক্রম শুরু হয়, সেখানে এরই মধ্যে একটি ইকোসিস্টেম গড়ে ওঠেছে। সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও মাছ, ডলফিনসহ অন্যান্য প্রজাতির প্রাণী বিচরণ করছে। গোলপাতা, সুন্দরীর মতো ম্যানগ্রোভ গাছসহ এই এলাকার উপযোগী গাছ লাগানো হয়েছে।’
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, গ্রিন বেল্টটি ১৩৫ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে। বন বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী গ্রিন বেল্টের ভেতরে দুই লাখ গাছ লাগানো হচ্ছে। আর গ্রিন বেল্টের বাইরে আরো গাছ লাগিয়ে মোট পাঁচ লাখ গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন পাখির মধ্যে প্রকল্পের আশপাশে স্থানীয় পাখি ছাড়াও আছে অতিথি পাখির আনাগোনা। মাছরাঙা, ঘুঘু, কাঠঠোকরা, ময়না, কোকিল এবং বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির বিচরণ রয়েছে। গ্রিন বেল্টের কারণে প্রকল্প এলাকায় আরেকটি বন গজিয়ে উঠছে। বিভিন্ন গাছের মধ্যে ম্যানগ্রোভ বা শ্বাসমূল জাতীয় গাছ ছাড়াও আম, নারকেল, কাঁঠাল, অশোকসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হচ্ছে। গ্রিন বেল্টটি এখন প্রকল্পের আশপাশের পাখি ও উদ্ভিদ প্রজাতির বেড়ে ওঠা ও বসবাসের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এই গ্রিন বেল্ট বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন—সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকেও বন ও পরিবেশকে রক্ষা করবে। অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি এই কেন্দ্রের গ্রিন বেল্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে দেশের উপকূলকে রক্ষা করবে। রামপালের মতো দেশের অন্য কোনো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে লাখ লাখ বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ নেয়নি। ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্রিন বেল্ট গড়ে তোলার এই উদ্যোগটি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে দেশের অন্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ব্যতিক্রমী করে তুলেছে।
প্রকল্প কর্মকর্তারা আরো জানান, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশ কার্বন পজিটিভ রাখতে এই গ্রিন বেল্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির চারপাশে প্রকল্প এলাকা তথা গ্রিন বেল্টে আরো বেশি পরিমাণে গাছ লাগানো হচ্ছে।
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্রিন বেল্টের বিষয়ে বলেন, ‘কোনো একটি এলাকায় যদি লক্ষাধিক গাছ লাগানো হয়, তবে অবশ্যই এর কিছু ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে এতে সেই এলাকার তাপমাত্রা ও পরিবেশের ওপর এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ার কথা।’