Home » বইমেলা এবার ফেব্রুয়ারির আগেই?

বইমেলা এবার ফেব্রুয়ারির আগেই?

“ফেব্রুয়ারির আগেই মেলা করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ত সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই হয়ে যাবে,” বলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক।

0 মন্তব্য গুলি 1 জন দেখেছে 4 মিনিট পড়েছেন

তৃণমূলের সংবাদ ডেস্ক:

প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতে অমর একুশে বইমেলা আয়োজনের রীতি থাকলেও এবার তা এগিয়ে ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারিতে করার প্রস্তুতি নিচ্ছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান—বাংলা একাডেমি।

প্রকাশকরাও চাইছেন মেলা এগিয়ে আনা হোক; আবার কেউ কেউ প্রস্তাব করেছেন মাসব্যাপী না করে মেলা হোক ১৫ দিনের।

বইমেলা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার প্রস্তুতি চলছে। ওই মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বইমেলার নিরাপত্তায় বাড়তি মনোযোগ দিতে পারবে না। ফলে ফেব্রুয়ারির আগেই মেলা আয়োজনের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ একমত হয়েছে।

banner

প্রকাশকরা মনে করছেন, ফেব্রুয়ারির পরে বইমেলার ‘আমেজ’ থাকবে না। তখন আবহাওয়াও মেলার উপযোগী থাকবে না। আবার নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে, তারও ঠিক নেই।

ফলে বইমেলা ফেব্রুয়ারির আগেই আয়োজন হোক বলে প্রকাশক সমিতি লিখিত আকারে অভিমত জানিয়েছে। ওই চিঠির একটি কপি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম দেখেছে।

গত বৃহস্পতিবার বইমেলা কর্তৃপক্ষকে দেওয়া চিঠিতে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি সম্ভাব্য তিনটি সময়ের কথা বলেছে।

সেক্ষেত্রে ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি, ০১ জানুয়ারি হতে ৩১ জানুয়ারি কিংবা ৫ জানুয়ারি হতে ৫ ফেব্রুয়ারিতে মেলা করার কথা বলছে তারা।

সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির পরিচালক ও বইমেলা স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক আবুল বাশার ফিরোজ শেখ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা লিখিত আকারে মেলা কর্তৃপক্ষকে আমাদের প্রস্তাব জানিয়েছি।”

বই বিপণনকেন্দ্র ও প্রকাশনা সংস্থা—বাতিঘরের কর্ণধার দীপঙ্কর দাশের প্রস্তাব, মেলা ১৫ দিনের হোক।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফেব্রুয়ারির পর বইমেলা হলে আমেজ থাকবে না। আর মাসব্যাপী মেলা আয়োজনেরও পক্ষে নই আমি। পৃথিবীর কোথাও এত দীর্ঘ সময় বইমেলা হয় না। আমি মনে করি, বইমেলা ১৫ দিনের হতে পারে। এতে প্রকাশকদের অনেক খরচ কমবে, মেলা কর্তৃপক্ষ এবং রাষ্ট্রেরও খরচ কমবে।”

কী বলছে সমিতি

১৯৮৩ সালে এরশাদের সময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের কারণে একবার বইমেলা বন্ধ হয়েছিল। এছাড়া বইমেলা বন্ধ থাকার নজির নেই। তবে কোভিড মহামারীর সময় ২০২১, ২০২২, ২০২৩ সালে বইমেলার সময় পরিবর্তন করে মার্চ মাসে নেওয়া হয়েছিল।

পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি চিঠিতে বলেছে, কোভিডের সময় মার্চ মাসে বইমেলা আয়োজন করা হলেও সেটি মান হারিয়েছিল, লেখক-প্রকাশকরা আর্থিক ও ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং সেই ক্ষতির রেশ এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।

২০২৪ ও ২০২৫ সালের বইমেলাও ব্যাবসায়িক সফলতা লাভ করতে পারেনি বলে মনে করছে প্রকাশক সমিতি।

চিঠিতে বলা হয়েছে, “২০২১ হতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে বইমেলা তার শৌর্য ও বোধ হারাচ্ছে। একই ধারাবাহিকতায় ব্যাবসায়িক সফলতা না পাওয়া সৃজনশীল প্রকাশকদের পঙ্গুত্বের দিকে ধাবিত করছে।”

ফেব্রুয়ারির পরে বইমেলা না করার পক্ষে যুক্ত দিয়ে সমিতি বলেছে, “ঈদের পরে নয় এই কারণে যে, ঈদ উপলক্ষ্যে ঢাকা প্রায় জনশূন্য হয়ে যাবে। ঈদের পর অন্তত ১০-১৫ দিন সময় লাগবে তাদের ঢাকায় ফিরতে। এপ্রিল মাসে বইমেলার কোনো আমেজ থাকবে না। এ সময়টা বৃষ্টি-বাদলের সময়। তাই পরিস্থিতির বিবেচনায় আমাদের সমিতির বইমেলা স্ট্যান্ডিং কমিটি সর্বসম্মতভাবে সম্মত হয়েছে মেলাকে এগিয়ে নিয়ে আসার।”

ফেব্রুয়ারির আগে মেলা আয়োজন করা হলে লেখক, পাঠক, প্রকাশক, মুদ্রণ, কাগজ, বাঁধাই শিল্পসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই উপকৃত হবেন বলেও মনে করছে সমিতি।

বাংলা একাডেমি।

বাংলা একাডেমি।

 

মেলা কর্তৃপক্ষের ভাষ্য

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বইমেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “ফেব্রুয়ারির আগেই বইমেলা করার ব্যাপারে ‘প্রাথমিক সিদ্ধান্ত’ হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ত সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই হয়ে যাবে।”

অধ্যাপক আজম বলেন, “ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার প্রস্তুতি চলছে। ফলে নির্বাচনের আগে নিরাপত্তা এবং মানুষের আগ্রহ বইমেলা ঘিরে কতটা থাকবে, তা নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

“আর ঈদের ছুটিতে তো ঢাকা শহর ফাঁকা হয়ে যাবে। এখন ঈদের ছুটির পর মেলা করতে চাইলে সেটা এপ্রিলে চলে যাবে। এপ্রিল মাসে ঝড়-বৃষ্টির একটা ব্যাপার থাকে। সে সময় বইমেলা আয়োজন করা খুব একটা বাস্তবসম্মতও হবে না। এজন্য প্রকাশকেরা প্রস্তাব দিয়েছেন, আমরা যেন ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যেই বইমেলাটা আয়োজন করি।”

প্রকাশকদের চিঠির পর মন্ত্রণালয়ের মতামতও পাওয়া গেছে জানিয়ে অধ্যাপক আজম বলেন, “মন্ত্রণালয়ও ফেব্রুয়ারির আগেই বইমেলা করার ব্যাপারে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে মেলা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

যেভাবে শুরু একুশে বইমেলা

১৯৭২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির ফটকে চট বিছিয়ে বই বিক্রি শুরু করেন প্রকাশনা সংস্থা মুক্তধারার প্রতিষ্ঠাতা চিত্তরঞ্জন সাহা।

১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমির একুশের অনুষ্ঠানমালার সঙ্গে সংগতি রেখে একাডেমির ভেতরে ছোট একটি স্টল স্থাপন করে বই বেচে মুক্তধারা। ১৯৭৭ সালে মুক্তধারার সঙ্গে আরও অনেকে যোগ দেয়, সেই থেকে একুশে বইমেলার সূচনা।

১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী একাডেমিকে এ বইমেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেন। এর পরের বছরই বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি মেলার সঙ্গে যুক্ত হয়।

মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকার সময় ১৯৮৩ সালে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নামে এ মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হলেও তা করা যায়নি। পরের বছর থেকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সূচনা হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’।

১৯৮৪ সাল থেকে বাংলা একাডেমি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নাম দিয়ে ধারাবাহিকভাবে মেলা পরিচালনা করছে। ২০২১ সাল থেকে মেলার নামকরণ করা হয় ‘অমর একুশে বইমেলা’।

মেলা শুরু থেকেই একাডেমি প্রাঙ্গণে হয়ে এলেও ধীরে ধীরে পরিসর বাড়তে থাকায় জায়গার সংকুলান হচ্ছিল না। পরে একাডেমির সামনের সড়কেও বইমেলার স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়।

২০১৪ সালে সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বরাদ্দ দেওয়া হয় এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে বরাদ্দ দেওয়া হয় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। তবে মেলার মূল মঞ্চ এবং তথ্যকেন্দ্র রাখা হয় একাডেমি প্রাঙ্গণেই।

বিগত এক দশক ধরে বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হচ্ছে বইমেলা।

এই সম্পর্কিত আরো পোস্ট দেখতে পারেন

কমেন্ট লিখুন