তৃণমূলের সংবাদ ডেস্ক:
নির্বাহী আদেশে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করাকে বিএনপি সমর্থন করে না-এমন মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার বিষয়টি নির্ধারিত হোক। এটা আদালত নির্ধারণ করবেন। এর জন্য আইন সংশোধন করা হয়েছে। এই আইনটা আগে ছিল না। এখন গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য যে কোনো দলের বিরুদ্ধে আদালত ব্যবস্থা নিতে পারবেন। আদালত সিদ্ধান্ত নিলে নির্বাচন কমিশন মানতে বাধ্য। এই প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো প্রক্রিয়াকে বিএনপি সমর্থন করে না। মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসায় জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করলে নির্বাচন কাদের নিয়ে হবে-এমন প্রশ্ন করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের দোসর হিসাবে যদি নিষিদ্ধ চাইতেই হয় তাহলে ২৮টা দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বা দলকে নিষিদ্ধ চাইতে হবে। তাহলে নির্বাচনটা কাদের নিয়ে হবে? এদেশে যারা রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে চাচ্ছে তারা যদি পরে বলে-আমরাও নির্বাচন করব না। তাহলে এদেশে নির্বাচন কী হবে? তাদের এই দাবির পেছনে উদ্দেশ্য ভিন্ন হতে পারে। নিজেদের অতিরিক্ত সুবিধার জন্য হয়তো বা তারা আরও অনেক রাজনৈতিক দলের নিষিদ্ধ কামনা করতে পারে।
আওয়ামী লীগের বিষয়টা এখানে সম্পূর্ণ আলাদা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) গণহত্যার জন্য দায়ী, তারা মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী, রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করার জন্য দায়ী। সেই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে, সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী, এমপি এবং দোসররা ছিল তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিভিন্ন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।
দ্রুত গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন না হলে দেশে একটি সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হতে পারে বলেও মনে করেন বিএনপির এই নেতা। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হবে এবং পতিত ফ্যাসিবাদ সুযোগ নেবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
আলোচনা চলা অবস্থায় রাজপথে কর্মসূচি অযৌক্তিক : সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। যারা কর্মসূচি দিয়েছেন তারাও ওই আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। আলোচনা সমাপ্তি হওয়ার আগেই এই বিষয়ে রাজপথে আন্দোলনের আহ্বান জানানো অযৌক্তিক। তবে তাদের রাজনৈতিক কৌশল হিসাবে গণতান্ত্রিক অধিকার আছে, তারা করতে পারে। তিনি বলেন, মুখে বলব আমরা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চাই, কর্মকাণ্ডে ওই নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার মতো কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে থাকে, সেটিও জনগণ বিবেচনা করবে। আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের উসকানিমূলক কর্মসূচির জবাব দেব না। আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সহনশীলতা, সহমর্মিতার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সে বিষয়গুলোর মীমাংসা করতে চাই।
জাতীয় স্বার্থের বাইরে গিয়ে পিআর পদ্ধতি চাওয়া ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনবে : পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, কয়েকটি আসন পাওয়ার লোভে জাতীয় স্বার্থের বাইরে গিয়ে কারও পিআর পদ্ধতি চাওয়া ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনবে। পিআর পদ্ধতি আমাদের আলোচনাতেই ছিল না। ঐকমত্য কমিশনের সূচিতে ছিল না, আলোচ্য বিষয় ছিল না।
সার্বিক বিবেচনায় নির্বাচন পেছানোর সম্ভাবনা দেখছেন কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্য অথবা বাধাগ্রস্ত করার জন্য যে কোনো রাজনৈতিক কৌশলকে এদেশের জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে। এটা আমরা আগেও বলেছি। কারণ, ভোটাধিকার প্রয়োগের দাবি আদায়, গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের মানুষ ১৬-১৭ বছর সংগ্রাম করেছে, লড়াই করেছে, রক্ত দিয়েছে এবং শহীদ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কারের দাবি পরবর্তীতে গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। এই অধিকার তখনই প্রতিষ্ঠা হবে, যখন আমরা অবাধ-সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ পাব, সরকার পাব। সুতরাং যারাই এই পথে বাধা সৃষ্টি করতে চাইবে, তাদের জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে। এসব রাজনৈতিক কর্মসূচির জবাব দেওয়ার জন্য জনগণই বিচারক।
বিএনপি জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি মেনে নিলে অন্যরা নিম্নকক্ষে প্রচলিত পদ্ধতি মেনে নিতে পারে-এ বিষয়ে বিএনপির অবস্থান জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ সব জায়গায় পিআরের বিপক্ষে।