Home » ছাত্রীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করা সেই ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে সভাপতির মামলা

ছাত্রীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করা সেই ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে সভাপতির মামলা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

0 মন্তব্য গুলি 2 জন দেখেছে 3 মিনিট পড়েছেন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) জুলাই-৩৬ হলের ৯১ জন নারী শিক্ষার্থীকে আপত্তিকর মন্তব্য করায় শাখা ছাত্রদলের শাহ মখ্দুম হলের সহ-সভাপতি আনিছুর রহমান মিলনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী (৩১) নিজে বাদী হয়ে রাজশাহী মতিহার থানায় মামলা করেন। এদিকে একই অপরাধে তাকে শোকজ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় সাইবার বুলিং প্রতিরোধ কমিটি।

গত সোমবার নারী শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ‘জুলাই—৩৬’ এর ৯১ জন মেয়েকে রাতে দেরিতে হলে প্রবেশ করায় তলব করে নোটিশ জারি করে হল প্রশাসন। পরে সমালোচনার মুখে সেই নোটিশ প্রত্যাহার করা হয়। এই শিক্ষার্থীদের ‘বিনা পারিশ্রমিক যৌনকর্মী’ বলে কটূক্তি করে শাখা ছাত্রদলের শাহ মখ্দুম হল শাখার সহসভাপতি এ আর মিলন খান। অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা মো. আনিছুর রহমান মিলন বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০১৮—১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। তার বাসা সিরাজগঞ্জে।

বৃহস্পতিবার শাখা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক নাফিউল ইসলাম জীবন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তাকে আজীবন বহিষ্কারের তথ্য জানানো হয়।  বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যবৃন্দের পক্ষ থেকে এ আর মিলন খানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি সন্তোষজনক কোনো জবাব না দিয়ে ফোন বন্ধ করে দেন। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে উক্ত কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য তিনিই ইচ্ছাকৃতভাবে করেছেন। ফলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল এ আর মিলন খানকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ হল সহ-সভাপতির পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার ঘোষণা করছে।

banner

রাবি ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, নারীদের বুলিংয়ের বিষয়ে ছাত্রদল জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে। তাকে আমরা তার পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছি এবং তার বিরুদ্ধে দলের পক্ষ থেকে আমি মামলা করেছি।

মতিহার থানার ওসি আব্দুল মালেক বলেন, ছাত্রদলের এক নেতা নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার রাবি ছাত্রদলের সভাপতি আমাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা অভিযোগটি পর্যালোচনা আইনি ব্যবস্থা নেব।

এদিকে, সেই ছাত্রদল নেতাকে শোকজ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় সাইবার বুলিং প্রতিরোধ কমিটি। নোটিশ প্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইবার বুলিং প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. একরামুল হামিদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়।

শোকজের নোটিশে বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীগণের প্রতি আপনার আপত্তিকর ও অবমাননাকর মন্তব্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নজরে এসেছে। আপনার এরূপ আপত্তিকর মন্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিবহির্ভূত এবং দণ্ডনীয় অপরাধ। পত্র প্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।’

তাছাড়া এই ছাত্রদল নেতার আপত্তির মন্তব্যের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে শাখা শিবির সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ও সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল এক যৌথ বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানান। তারা বলেন, এ ঘটনায় অভিযুক্ত নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে ছাত্রদল বরং তাকে দায়মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করছে। নেতৃত্বের পর্যায় থেকে এ ধরনের নারী বিদ্বেষী মন্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবিলম্বে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, যেকোনো নারী শিক্ষার্থীকে অবমাননাকর কোনো বক্তব্য বরদাশত করা হবে না। অভিযুক্তের ভিত্তিতে  ওই শিক্ষার্থীকে শোকজ করা হয়েছে। নোটিশের পর তার উত্তরের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে শাখা ছাত্রদল আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান বলেন, আমরা ওই নেতার বিরুদ্ধে সকল ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। এই কাজ যদি দলের সভাপতিও করে তার অবস্থাও এমনই হবে। এই অভিযোগ অন্য দলের বিরুদ্ধেও এসেছে। কিন্তু তারা বিচার না করে আলাদা ন্যারাটিভ তৈরির চেষ্টা করেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বামদের মধ্যেও শিবির ডুকে গেছে।

“সুত্র: দৈনিক ইত্তেফাক”

এই সম্পর্কিত আরো পোস্ট দেখতে পারেন

কমেন্ট লিখুন