Home » এনসিপি-গণঅধিকার পরিষদ একীভূত হওয়ার গুঞ্জন, যা জানা গেল

এনসিপি-গণঅধিকার পরিষদ একীভূত হওয়ার গুঞ্জন, যা জানা গেল

0 মন্তব্য গুলি 4 জন দেখেছে 3 মিনিট পড়েছেন

তৃণমূলের সংবাদ ডেস্ক:
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নানা সমীকরণে ব্যস্ত রাজনৈতিক দলগুলো। জোট গঠন করে ভোটে অংশ নেওয়া এবং আসন সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনে সুবিধা নেওয়ার উদ্যোগ লক্ষণীয়। প্রতিবারই ভোট সামনে রেখে জোট ভাঙা গড়ার খেলা হয়। এরই মাঝে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে— একীভূত হতে যাচ্ছে তরুণদের নেতৃত্বাধীন দুই রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও গণঅধিকার পরিষদ। রাজনৈতিক অঙ্গনে চাউর হয়েছে যে, দুপক্ষই ঐক্যের পথে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। আসলেই কি একীভূত হতে যাচ্ছে কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ভিত্তি ধরে গড়ে উঠা এই দুই রাজনৈতিক দল। নাকি এটি শুধুই গুঞ্জন?

রাজনৈতিক মহলে ধারণা, একীভূত হতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিকল্প জোট হিসেবে এ উদ্যোগ বড় প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের টানতে উভয় দলই একে অপরের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছে। যদিও মৌলিক কিছু বিষয়ে তাদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে।

এনসিপি-নাগরিক অধিকারের একীভূত হওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো ঘোষণা আসেনি। এনসিপি নেতারা বিষয়টি ‘আলোচনার পর্যায়ে’ আছে বলে উল্লেখ করেছেন। গণঅধিকার পরিষদের একাধিক নেতা ইঙ্গিত দিয়েছেন, রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় তারা নতুন সমীকরণে যেতে আগ্রহী।

জানা গেছে, একীভূত হওয়ার আলোচনার শুরু হয় যখন মিছিলের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অ্যাকশনে আহত গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরকে হাসপাতালে দেখতে যান নাহিদ ইসলামসহ এনসিপির শীর্ষ কয়েক নেতা। তখন থেকে দুদলের নেতাদের মধ্যে সংগঠন এক করা নিয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে কথাবার্তা শুরু হয়। তবে দুদলের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে এখনই সরাসরি কোনো অবস্থান জানাতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে জানতে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীবের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।

banner

তবে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এখনো এরকম (একীভূত হওয়া) কোনো সম্ভাবনা নেই। এটা নিয়ে কোনো আলোচনাও হয়নি। এমনকি গণ অধিকার পরিষদ থেকে কোনো প্রস্তাবনাও আসেনি। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যৌক্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাদের সঙ্গে আমাদের একসঙ্গে কাজ করার চিন্তা রয়েছে।’

এনসিপির সঙ্গে একীভূত হওয়ার বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানও একই সুরে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা সব সময় হয়। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তাদের অনেকে আমাদের সঙ্গে রাজনীতি করেছে। যে কারণে তাদের ও আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভিন্ন আলোচনা আছে যে, কিভাবে দেশ ও জাতির কল্যাণে একসঙ্গে কাজ করা যায়। তবে একীভূত হওয়ার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক বা পার্টি টু পার্টি আলোচনা হয়নি। সংস্কার, বিচার, নির্বাচন ইস্যুতে বিভিন্নজনের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। তাদের সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়া আছে। তবে এখনই সবকিছু নিয়ে মন্তব্য করার সময় আসেনি।

এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট অনেকটা একই রকম। দুটি দলেরই যাত্রা শুরু কোটা সংস্কার আন্দোলনের ভিত্তি ধরে। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গঠিত বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ২০২১ সালে গণঅধিকার পরিষদে রূপ নেয়। আর ২০২৪ সালের কোটা আন্দোলনকে ঘিরে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তরাই আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কিছুদিন পর গড়ে তোলেন এনসিপি। আবার এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতারই আন্দোলন-কর্মসূচিতে হাতেখড়ি হয়েছিল নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ থেকে। সেই হিসেবে নুরুল হক নুর এনসিপির অনেক নেতার ‘রাজনৈতিক গুরু’ বলেও বলে থাকেন কেউ কেউ।  গণঅধিকার পরিষদ গত বছর নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেলেও এনসিপি এখনো তা পায়নি।

এনসিপির সঙ্গে একীভূত হওয়ার বিষয়টি নাকচ করেননি গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আলোচনা তো অনেক কিছুই হচ্ছে। এমন কোনো কিছু ঘটলে জানতে পারবেন। আমরা তারুণ্যের শক্তিগুলো এক হওয়ার চেষ্টা করছি।’একীভূত হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে তো অনেক কিছুই সম্ভব।’

গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে একীভূত হওয়ার আলোচনা চলছে বলে স্বীকার করেছেন এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা। তবে এ মুহূর্তেই এ নিয়ে নাম প্রকাশ করে কিছু বলতে চাইছেন না তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির একজন নেতা গণমাধ্যমে বলেন, ‘গণঅধিকার পরিষদ এনসিপিতে যোগ দিতে চায়, এমন একটা আলাপ আমাদের মধ্যে আছে। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছি। নিজেদের ফোরামে কথা বলছি। তাদের (গণঅধিকার পরিষদ) সঙ্গেও কথা বলছি। কিন্তু এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।’

এদিকে এনসিপির সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের যুক্ত হওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখেন বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা একটা মধ্যপন্থি রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাই। বাংলাদেশে যারা মধ্যপন্থি রাজনীতির সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করে, তাদের যে কারও এনসিপির সঙ্গে যুক্ত হওয়াকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখি।’

এই সম্পর্কিত আরো পোস্ট দেখতে পারেন

কমেন্ট লিখুন