তৃণমূলের সংবাদ ডেস্ক
উত্তরের ১৬ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অযথা ও অনুমানভিত্তিক রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরা শক্তির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে ফসল উৎপাদন কমছে, মাটির জৈব পদার্থের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে এবং অম্লত্বের হার বেড়ে যাচ্ছে। কৃষকরা রাসায়নিক সার প্রয়োগ করলেও কাঙ্ক্ষিত ফলন পাচ্ছেন না এবং বিপুল অর্থ খরচ হয়ে যাচ্ছে।
রংপুর বিভাগীয় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের গবেষণা রিপোর্টে দেখা গেছে, রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় মাটির উর্বরা শক্তি ক্রমাগত নষ্ট হচ্ছে। মাটির স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ায় ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় জৈব ও খনিজ উপাদানগুলো পর্যাপ্ত মাত্রায় নেই। এতে ফসল উৎপাদনের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে এবং উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
গবেষকরা বলছেন, মাটির উর্বরা শক্তি বজায় রাখতে রাসায়নিক সার ব্যবহার হলেও তা সুষম ও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রয়োগ করা উচিত। অনুমানভিত্তিক প্রয়োগ মাটির ক্ষতি করছে এবং ফসলের ফলন কমাচ্ছে। মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে, মাটির চাহিদা অনুযায়ী সারের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
রংপুর বিভাগের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, দেশে অন্তত ২০ প্রকার রাসায়নিক সার ব্যবহার হচ্ছে, যার মধ্যে ৭টি প্রধান। কৃষকরা এই সারগুলো অনুমানভিত্তিক ব্যবহার করেন। এতে মাটির ভিজি উপাদানগুলো অপর্যাপ্ত হয়ে যাচ্ছে এবং ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান কমে যাচ্ছে।
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. সাইফুর রহমান বলেন, মাটিতে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম, গন্ধক, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, বোরন, মলিবডেনাম, লৌহ, তামা ও জৈব পদার্থ যথেষ্ট মাত্রায় থাকা দরকার। সঠিক মাত্রায় এই উপাদান না থাকলে ফসল গ্রহণ করতে পারবে না।
গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে মাটির জীববৈচিত্র্যও হ্রাস পাচ্ছে। যেমন, কেঁচো, ব্যাঙ ও অন্যান্য মাটির অণুজীব কমে যাচ্ছে, যা মাটির স্বাস্থ্য ও উর্বরা শক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তারা পরামর্শ দিচ্ছেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের সমন্বিত উদ্যোগে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের হাতে খড়ি শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। মাটির সঠিক পরীক্ষা এবং সুষম সার প্রয়োগের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।
গবেষকরা সতর্ক করে বলছেন, এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে দেশের কৃষি ব্যবস্থায় মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনবে। সেজন্য মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা ও সুষম সার ব্যবহারের ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।