বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে খাদ্যের অপচয় ও ক্ষতি রোধ জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, একদিকে অনেক মানুষ খাদ্যের অভাবে অনাহারে থাকে, অন্যদিকে উৎপাদিত বিপুল খাদ্যের একটি বড় অংশ অপচয় হচ্ছে— যা দুঃখজনক।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত জাতীয় সম্মেলন “Towards Zero Food Waste and Loss: Building a Sustainable Food Value Chain in Bangladesh”–এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ১৯৯৬ সাল থেকেই খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে এনেছে। শুরুতে খাদ্যের প্রাপ্যতাই মুখ্য ছিল, এখন এর সঙ্গে পুষ্টিও জড়িত হয়েছে।
দেশে মাছের উৎপাদন প্রসঙ্গে ফরিদা আখতার জানান, আগে প্রাকৃতিক উৎস থেকে ৬০ শতাংশ ও চাষ থেকে ৪০ শতাংশ মাছ পাওয়া যেত। বর্তমানে চাষ থেকে ৬০ শতাংশ এবং প্রাকৃতিক উৎস থেকে ৪০ শতাংশ পাওয়া যায়। তাই প্রাকৃতিক মাছ সংরক্ষণে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি বলেন, কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য খাতের পণ্য পচনশীল হওয়ায় সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে অবকাঠামোগত দুর্বলতা এবং ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত না হওয়ার কারণে কৃষকরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েন। ফলে দুধ, ডিম, মাছ ও মাংসসহ নানা খাদ্যপণ্য অপচয়ের শিকার হচ্ছে।
সামুদ্রিক মৎস্য খাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি জানান, অবৈধ ও অনিয়ন্ত্রিত জাল ব্যবহার, লক্ষ্যভিত্তিক মাছ ধরা এবং অপ্রচলিত প্রজাতির বাজারের অভাবে বিপুল পরিমাণ মাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে মাছের বৈচিত্র্যও হারিয়ে যাচ্ছে। আগে ২৬৭ প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া যেত, এখন তা দ্রুত কমে যাচ্ছে— যা দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, ২০৩০ সালের মধ্যে খাদ্য অপচয় ও ক্ষতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব হলে খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি সুরক্ষা এবং জনগণের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত হবে।
অনুষ্ঠানে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন সঞ্চালনা করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে ডেনমার্ক দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মি. অ্যান্ডায়ার্স কার্লসেন, এফএও–এর ডেপুটি প্রতিনিধি মি. দিয়া সানু এবং ডব্লিউএফপি–এর ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর মি. জেসে উড। বিশেষ অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইয়াসিন।