Home » নির্বাচনী দায়িত্বে অবহেলা ও অপরাধে সাজা বাড়ছে

নির্বাচনী দায়িত্বে অবহেলা ও অপরাধে সাজা বাড়ছে

0 মন্তব্য গুলি 2 জন দেখেছে 4 মিনিট পড়েছেন

তৃণমূলের সংবাদ ডেস্ক:
জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের আদলে গঠন করা হচ্ছে ‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিস কমিশন’। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ–২০২৫ এর খসড়ায় এমন বিধান রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই অধ্যাদেশের খসড়ায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ দেবে এই সার্ভিস কমিশন।

একই সঙ্গে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়ায়ও নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, এই সার্ভিস প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের বিদ্যমান আইনানুযায়ী চলবে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সংরক্ষণ করবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডার প্রস্তুত ও সংরক্ষণ করবে ইসি।

ইসি সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আলাদা সার্ভিস গঠনের লক্ষ্যে সম্প্রতি ‘সম্ভাব্যতা যাচাই ও সুপারিশ প্রণয়নে’ সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটির সুপারিশের আলোকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। সম্ভাব্যতা যাচাই ও সুপারিশ প্রণয়নে এ সংক্রান্ত কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় গত ২৩ এপ্রিল। এই সার্ভিস গঠনে আইনি রূপ দিতে বৃহস্পতিবার অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন করে উপদেষ্টা পরিষদ।

banner

২০০৯ সালের পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পৃথক করা হয় ইসি সচিবালয়কে। এর আগ থেকেই পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সুপারিশে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিয়ে আসছিল ইসি।  তবে বিসিএস পরীক্ষায় নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে আলাদা ক্যাডার করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন ইসির কর্মকর্তারা। বর্তমান ইসি সচিবালয়ের অধীনে পাঁচ হাজারেও বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে পৃথক আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি পৃথক সার্ভিস গঠনের সুপারিশ করা হয়েছিল।

ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক নির্বাচন কমিশনের উপসচিব মনির হোসেন সমকালকে বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা সার্ভিস কমিশন গঠনের দাবি দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে অতীতেও নানা পক্ষ থেকে সুপারিশ এলেও তা আর এগোয়নি। নির্বাচনকে শক্তিশালী করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করা আরও সহজ হবে।

নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে অবহেলা-অপরাধে সাজা বাড়ছে
নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও অপরাধের সাজা বাড়ছে। নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫-এর খসড়ায় এমন বিধান রাখা হয়েছে।

নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) ১৯৯১-এর সংশোধন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি নির্বাচন কর্মকর্তা নিযুক্ত হলে তিনি গ্রহণযোগ্য কোনো কারণ ছাড়া দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানাতে পারবেন না।
বিদ্যমান আইনে অস্বীকৃতি জানালে তাঁর সাজা এক বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান আছে। এখন অর্থদণ্ডের পরিমাণ বাড়িয়ে এক লাখ টাকা করা হয়েছে। কোনো কর্মকর্তা নির্বাচনী দায়িত্বে অসদাচরণ করলে বিদ্যমান আইনে তাঁর সাজা আছে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা দুই হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। সেটা বাড়ানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন এক বছর থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান করা হয়েছে।

খসড়া অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কোনো নির্বাচন কর্মকর্তা নির্বাচন-সংক্রান্ত কোনো ব্যাপারে কমিশন বা রিটার্নিং অফিসারের কোনো আদেশ বা নির্দেশ পালনে ব্যর্থ বা অস্বীকৃতি জানালে বা আইনের বিধান লঙ্ঘন করলে অসদাচরণ বলে গণ্য হবে। এ ধরনের অসদাচরণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। এ জন্য নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরি থেকে অপসারণ বা বরখাস্ত করতে পারবে। চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাতে পারবে। এমনকি অপরাধীর পদাবনতি ও দুই বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করতে পারবে। অন্য কোনো আইনে উল্লিখিত অপরাধের শাস্তি দেওয়া হলেও এসব অপরাধের শাস্তি এই আইনে ফের দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা হবে না।

অপরাধ লিপিবদ্ধ থাকবে ব্যক্তিগত নথিতে
সংশোধিত অধ্যাদেশে আরও বলা হয়, অসদাচরণ করলে কমিশন বা কমিশনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি কমিশনের সম্মতিক্রমে রিটার্নিং কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক শাস্তি হিসেবে দুই মাসের জন্য বরখাস্ত করতে পারবে। এই শাস্তি দণ্ডপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের দেওয়া দণ্ড হিসেবে গণ্য ও কার্যকর হবে। অসদাচরণের জন্য কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে ওই প্রস্তাব পাওয়ার এক মাসের মধ্যে শান্তি নিশ্চিত করে তা কমিশনকে জানাতে হবে। এই শাস্তির তথ্য তার ব্যক্তিগত নথি, চাকরি বই (সার্ভিস বুক), বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনে লিপিবদ্ধ ও ডিসিআরে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এ বিষয়ে কমিশনকে জানাতে হবে। সরকার ও কমিশনের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে কমিশনের সিদ্ধান্ত প্রধান্য পাবে। কারও দায়িত্ব পালনে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে কমিশন ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে।

বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বৈঠকের আলোচ্য বিষয় তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচন-সংক্রান্ত দুটি আইন সংশোধনের ফলে নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে এবং নির্বাচন পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা যাবে। বিশেষ করে নির্বাচনী দায়িত্বে অবহেলা করলে শাস্তির বিধান আরও স্পষ্ট হবে। নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯১-এর সংশোধনে ধারা ২, ধারা ৫ ও ধারা ৬-এ গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচন কর্মকর্তার সংজ্ঞা নতুনভাবে নির্ধারণ, শৃঙ্খলামূলক শাস্তি-সংক্রান্ত ধারা হালনাগাদ এবং নতুন উপধারা সংযোজন ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এই সম্পর্কিত আরো পোস্ট দেখতে পারেন

কমেন্ট লিখুন