সরকারি জায়গা ও টাকায় নির্মিত ২৭০টি ফ্ল্যাট পছন্দের আমলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নামে বেআইনিভাবে বরাদ্দ দিয়ে গেছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাতের ভোটের কারিগর হিসেবে চিহ্নিত এসব আমলা ও শিক্ষককে ফ্ল্যাটগুলো বরাদ্দ দেন। তাদের মধ্যে সিনিয়র সচিব, সচিব, অতিরিক্ত ও যুগ্ম সচিব, উপসচিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকও আছেন। তালিকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পলাতক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আনিছুর রহমানের নামও আছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত নথিসহ সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ১২টি সভার কার্যবিবরণী যাচাই করে এসব তথ্য পাওয়া যায়। ফ্ল্যাটগুলো বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে ওবায়দুল কাদের তার ক্ষমতার অপব্যবহারের পাশাপাশি এ সংক্রান্ত আইন ও বিধিবিধান ভঙ্গ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মরতরা। রাতের ভোটের কারিগর হিসেবে চিহ্নিত কর্মকর্তাদের এসব ফ্ল্যাট উপঢৌকন হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে তারা জানান।
নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ফ্ল্যাট বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৫০ জন কর্মকর্তা আছেন, যারা এর আগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে এক বা একাধিক প্লট ও ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়েছেন। এ তথ্য গোপন করে তারা মিথ্যা হলফনামা পেশ করে নতুন করে ফ্ল্যাট বাগিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ফ্ল্যাট বরাদ্দ পাওয়া শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে সেতু বিভাগের ২৯ জন, সেতু কর্তৃপক্ষের নিজস্ব কর্মচারী ১৫৮, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ১২, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পের ২, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পের ১৩, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের ১, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ৫, বিভিন্ন কমিটির সদস্য ১০, বোর্ড মেম্বার ২৭ এবং তিন মন্ত্রীর দপ্তরের ১৩ কর্মচারী আছেন।
ক্ষতিগ্রস্তদের সম্পদ ‘বড়লোকদের’ পেটে
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নথি থেকে জানা যায়, সেতু বিভাগের অধীনে রাজধানীর উত্তরা থেকে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পটি বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকার মোট ৩০ দশমিক ০৬১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। আর এতে ৯ হাজার ১৯০ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের মধ্যে ভূমিস্বত্ব আছে এমন ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা ১ হাজার ৭২৫ জন এবং ভূমিস্বত্ব নেই এমন অস্থায়ী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা ৭ হাজার ৪৬৫ জন। এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ২০১১ সালের গত ১৮ অক্টোবর একনেক সভায় সেতু কর্তৃপক্ষ ‘সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প নেয়। এ প্রকল্পের আওতায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পুনর্বাসন ভিলেজ নির্মাণকল্পে ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক অধিগ্রহণ করা ঢাকার সাভার উপজেলার বড় কাকর মৌজার ১৭ দশমিক ৭৬০ একর, মিরপুর থানার বাউনিয়া মৌজার ১২ দশমিক ১৮৭৫ একর এবং মিরপুর থানার দ্বিগুণ মৌজার ১০ দশমিক ০৫২৫ একর (মোট ৪০ একর) জমি অধিগ্রহণ করা হয়। অধিগ্রহণের উদ্দেশ্য হিসেবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি
সূত্র জানায়, এ পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ২৯৪ বর্গফুট এবং ১ হাজার ৯০ বর্গফুট আয়তন বিশিষ্ট ১২টি আবাসিক ভবনে ১ হাজার ৩৪৪টি ফ্ল্যাট ছাড়াও নাগরিক সুবিধা সংবলিত মার্কেট, ক্লিনিক, স্কুল, মসজিদ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট, সাবস্টেশন, খেলার মাঠ, জিম ও কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্য থেকে মোট ১ হাজার ২২০টি বরাদ্দের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০২ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হলেও তাদের হস্তান্তর করা হয়নি।
সেতু বিভাগের নথি থেকে জানা গেছে, ‘সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্প’-এর আওতায় পুনর্বাসন ভিলেজ নির্মাণকাজ শেষে প্রকল্প এলাকায় আরো কিছু জমি অবশিষ্ট থাকবে বলে সেতুমন্ত্রীকে জানানো হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সেতু কর্তৃপক্ষের ১০৬তম বোর্ড সভায় তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক এবং সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ওই জমিতে ‘সেতু কর্তৃপক্ষ আবাসন নির্মাণ প্রকল্প’ নামে আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব পেশ করেন।
ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভার কার্যবিবরণীতে সেতু বিভাগের ওই সময়ের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল জলিল, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. জাফর আহমেদ খান, অর্থ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) জুয়েনা আজিজ ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোফাজ্জল হোসেন।
সেতু বিভাগ জানায়, ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে ১০ সচিবের বৈঠকে ক্ষতিগ্রস্তদের জমিতে ‘সেতু কর্তৃপক্ষ আবাসন নির্মাণ প্রকল্প’-এর জন্য জমি বরাদ্দ ও নির্মাণকাজের অনুমোদন দেওয়া হয়। ১০৬তম বোর্ড সভার ওই সিদ্ধান্ত অবৈধ ও বেআইনি বলে উল্লেখ করেছেন গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন-২০১৭ এর ১৯ (১) ধারা অনুযায়ী ওই সিদ্ধান্ত অসম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনি।
আইনের এ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যে উদ্দেশ্যে কোনো স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ করা হবে, ভূমি মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমোদন ছাড়া, ওই উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোনোভাবে সেই সম্পত্তি ব্যবহার অথবা বিক্রয়, লিজ, এওয়াজ বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর করা যাবে না।’ অথচ সেতু কর্তৃপক্ষ এই জমি ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত কোনো পূর্বানুমোদন নেয়নি।
প্রথম সভায় বরাদ্দ পান ১৪৬ জন
সেতু বিভাগ জানায়, ২০১৯ সালের ১৭ জুন ফ্ল্যাট ব্যবস্থাপনা ও বরাদ্দ প্রদান কমিটির প্রথম সভায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষকসহ ১৪৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব (পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব) খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বরাদ্দ নেন পদ্মা ভবনের ৭/এ নম্বর ফ্ল্যাট। এর আগে তিনি রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে সাড়ে সাত কাঠার একটি প্লট ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ থেকে রাজধানীর লালমাটিয়া আবাসিক এলাকায় একটি ফ্ল্যাট বরাদ্দ নেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষক হলেন- অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম, অধ্যাপক আ ফ ম সাইফুল আমিন, অধ্যাপক খান মাহমুদ আমানত ও অধ্যাপক ড. সামছুল হক। তাদের মধ্যে ড. খান মাহমুদের নামে রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে তিন কাঠার আরো একটি প্লট আছে।
একই সভায় আরো বরাদ্দ পান সেতু কর্তৃপক্ষের ওই সময়ের পরিচালক আলীম উদ্দিন আহমেদ, পরিচালক (প্রশাসন) এম কায়সারুল ইসলাম, পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) মো. সামসুজ্জামান, প্রধান প্রকৌশলী মো. ফেরদাউস, অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং) রেজাউল হায়দার, সেতু বিভাগের যুগ্ম সচিব এসএম আলম, অতিরিক্ত পরিচালক এসএম লাবলুর রহমান, অতিরিক্ত পরিচালক রূপম আনোয়ার, অতিরিক্ত পরিচালক মনিরুল আলম, অতিরিক্ত পরিচালক মাহমুদ ইবনে কাসেম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী লিয়াকত আলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (নদীশাসন) শফিকুল ইসলাম, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক আবু মো. শাখাওয়াত আকতার, সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শারফুল ইসলাম সরকার, আবুল হোসেন, গোলাম মর্তুজা ও তোফাজ্জেল হোসেন।
ওই সভায় আরো যেসব কর্মকর্তা ফ্ল্যাট বরাদ্দ পান তাদের মধ্যে সেতু কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক আরিফুজ্জামান, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান, সৈয়দ রজব আলী ও আবুল কালাম আজাদ। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের উপপরিচালক সৈয়দ মারুফ হোসেন, সেতু কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক মনিরুজ্জামান খান ও আশরাফ আলী খান, প্রোগ্রামার তনুশ্রী সাহা, নির্বাহী প্রকৌশলী আকরাম আলী খাঁন, আমিনুল ইসলাম, মাহমুদুর রহমান, এমএ মান্নান, উপপরিচালক মিজানুর রহমান, শেখ ইশতিয়াক আহমেদ, মিজ আঞ্জুমান আরা, শরীফ মোহাম্মদ রেজাউল করিম, এএফএম তাজুল ইসলাম ও আহসান কবীর পাভেল, একই সংস্থার সহকারী প্রকৌশলী মোস্তফা হায়দার, নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান মাসুদ বাপ্পি, সহকারী প্রকৌশলী ওয়াশিম আলী, দিলীপ কুমার পাল, ভরত চন্দ্র মন্ডল, সহকারী প্রোগ্রামার মো. মহিউদ্দিন, সহকারী প্রকৌশলী ইউসুফ হারুন, আবু বকর সিদ্দিক, নূর ইয়াসিন, নজরুল ইসলাম ও মোশাররফ হোসেন।
প্রথম বোর্ড সভায় আরো যাদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয় তাদের মধ্যে আছেন সেতু বিভাগের ওই সময়ে অতিরিক্ত সচিব ওবায়দুল হক, যুগ্ম সচিব হাবিবুর রহমান, সিনিয়র সহকারী সচিব শাহরিয়ার আল কবির সিদ্দিকীকে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়।
সচিবদের পেটেও উচ্ছেদকৃতদের ফ্ল্যাট
ফ্ল্যাট বরাদ্দসংক্রান্ত কমিটির প্রথম বোর্ড সভায় ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে পিআরএলে যাওয়া সচিব আবদুল জলিল বরাদ্দ পান পদ্মা-৫/ডি নম্বরের ফ্ল্যাটটি। এর আগে তিনি রাজউকের উত্তরা প্রকল্পে ৩ কাঠার প্লট ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ থেকে সিলেট শাহজালাল হাউজিং এস্টেটে ১ হাজার ৫০০ বর্গফুটের আরেকটি ফ্ল্যাট বরাদ্দ নেন।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মোফাজ্জেল হোসেন বরাদ্দ পান পদ্মা-৬/ডি ফ্ল্যাটটি। এর আগে তিনি রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্প থেকে পাঁচ কাঠার আরেকটি প্লট বরাদ্দ নেন। বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বরাদ্দ নেন পদ্মা-৭সি নম্বরের ফ্ল্যাট। এর আগে তিনিও রাজউক থেকে সাড়ে সাত কাঠা আয়তনের একটি প্লট বরাদ্দ নেন। লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক বরাদ্দ নেন পদ্মা-৪/এ ফ্ল্যাট। তার নামেও রাজউকের পূর্বাচলে ১০ কাঠার একটি প্লট আছে। পরিকল্পনা কমিশনের সচিব জুয়েনা আজিজ বরাদ্দ নিয়েছেন পদ্মা-৬/এ নম্বরের প্লটটি।
সচিবদের মধ্যে আরো যারা এ প্রকল্পের ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব কাজী শফিকুল আযম, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান, সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, সেতু বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব সেলিম রেজা, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মামুন আল রশীদ, বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব হাবিবুর রহমান, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মোস্তাফিজুর রহমান, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মাহবুব হোসেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক সচিব শরিফা খান, সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মনজুর হোসেন, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সাবেক সচিব মইনুল কবির, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড. হুমায়ুন কবীর, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সাবেক সচিব এবিএম
গভর্নর ও নির্বাচন কমিশনারও নিয়েছেন গরিবের ফ্ল্যাট
সেতু বিভাগ জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত না হয়েও ওই প্রকল্প থেকে ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও সাবেক অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার। তার ফ্ল্যাট নম্বর পদ্মা-৭ডি। তিনি এর আগে রাজউকের উত্তরা তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্প থেকে পাঁচ কাঠার একটি প্লট নিজের নামে বরাদ্দ নেন।
২০২৪ সালের ডামি ভোটের কারিগর সাবেক নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বরাদ্দ নেন মেঘনা-১১/এ নম্বরের ফ্ল্যাট। এর আগে তিনি রাজউকের উত্তরা তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্প থেকে তিন কাঠার একটি প্লট ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ধানমন্ডি প্রকল্প থেকে ২ হাজার ৫০ বর্গফুটের একটি অভিজাত ফ্ল্যাট বরাদ্দ নেন। সেতু কর্তৃপক্ষের ফ্ল্যাটটি বরাদ্দ নেওয়ার সময় তিনি ওই তথ্য গোপন রাখেন বলে জানিয়েছেন সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা বলেন, আবদুর রউফ তালুকদার কিংবা আনিছুর রহমানের আত্মীয়স্বজন এমনকি দূর সম্পর্কেরও কারো নাম নেই ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায়।
ফ্ল্যাট নিয়ে আমলাদের কাড়াকাড়ি
সেতু কর্তৃপক্ষের ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিতে একধাপ এগিয়ে ছিলেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও। বরাদ্দ কমিটির প্রথম বৈঠকে বরাদ্দ নেন ওবায়দুল কাদেরের সাবেক পিএস মোহাম্মদ শফিকুল করিম, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম সচিব কামরুল হাসান খান, মির্জা তারিক হিকমত ও জাকির হোসেন, উপসচিব ড. আমিনুল ইসলাম, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের মহাপরিচালক ড. মশিউর রহমান, উপপ্রধান মাহবুবের রহমান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শেখ শোয়েবুল আলম ও শাহানারা খাতুন, পূর্ত ও উন্নয়নের যুগ্ম সচিব আবদুর রউফ, অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব রফিকুল ইসলাম খান, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আরফিন আরা বেগম, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মজুমদার। তারা ওবায়দুল কাদেরের বিশেষ কোটায় ফ্ল্যাট বরাদ্দ পান।
প্রকৌশলীদের নামে ফ্ল্যাট বরাদ্দের হিড়িক
সেতু কর্তৃপক্ষের প্রস্তাব অনুযায়ী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে ২০১৯ সালের ১৭ জুনের ফ্ল্যাট ব্যবস্থাপনা ও বরাদ্দ প্রদান কমিটির বৈঠকে যেসব কর্মকর্তা ভাগ পান তাদের মধ্যে আছেন সংস্থার উপসহকারী প্রকৌশলী বুলবুল আহম্মেদ, উপসহকারী প্রকৌশলী রাজন চন্দ্র বিশ্বাস, উপসহকারী প্রকৌশলী তাসলিমা খাতুন, উপসহকারী প্রকৌশলী শেখ ফরিদ, উপসহকারী প্রকৌশলী মো. শাহীন, উপসহকারী প্রকৌশলী আলিফ হোসেন, উপসহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম, উপসহকারী প্রকৌশলী আফরোজা পারভীন, উপসহকারী প্রকৌশলী রাকিবুর রহমান।
এছাড়া ওই বছরের ১২ সেপ্টেম্বরের বৈঠকে কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের উপপরিচালক আবদুর রহমান তরফদার ও নির্বাহী প্রকৌশলী এআর খায়রুজ্জামান, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের, সহকারী পরিচালক আবদুল হামিদ ও সফিকুল ইসলাম চৌধুরীসহ ১৩ কর্মকর্তার নামে ওই প্রকল্পের অধীনে নির্মিত কর্ণফুলী নামের বহুতল ভবনে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়। আর ২৪ অক্টোবরের বৈঠকে সেতু কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক সাব্বির আহমেদ, প্রটোকল অফিসার মাসুদ রানা শিকদার, সহকারী প্রকৌশলী ইয়াসির আরাফাত রুবেল ও সৈয়দ রিয়াজ উদ্দিন, সহকারী মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম ও কম্পিউটার অপারেটর অসীম কুমার পদ্মা ভবনে ফ্ল্যাট বরাদ্দ পান।
কমিটির ১৪তম সভায় ফ্ল্যাট বরাদ্দ পান সেতু কর্তৃপক্ষে সহকারী প্রকৌশলী তানভীর রিফা ও মোহাম্মদ জুনায়েদ, উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন, উপসহকারী প্রকৌশলী খালেদ ছাইফুল্লাহ, উপসহকারী প্রকৌশলী হোসাইন কবির, উপসহকারী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান মনির, উপসহকারী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন, উপসহকারী প্রকৌশলী সেলিনা মোস্তারী, উপসহকারী প্রকৌশলী সোহাগ রানা, উপসহকারী প্রকৌশলী হুমায়ূন কবীর, উপসহকারী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির, উপসহকারী প্রকৌশলী আল আমিন খান, উপসহকারী প্রকৌশলী দিবাকর সাহা ও পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের উপ সহকারী প্রকৌশলী আবু জাহিদ মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজসহ বিভিন্ন সংস্থার ২৭ জন।
“সুত্র: দৈনিক আমার দেশ