যশোর সংবাদদাতা:
ভবদহে স্থানীয়দের দাবি অনুযায়ী স্লুইসগেটের কপাট খোলায় জলাবদ্ধতার ভোগান্তি অনেকাংশে কমেছে। এবার বৃষ্টিপাত বেশি হলেও, ভাটির সময় স্বাভাবিকভাবে পানি নিষ্কাশনের কারণে পরিস্থিতি উন্নত।
দীর্ঘদিন ধরে ভবদহ এলাকার মানুষ স্লুইসগেটের কপাট নিয়ম মেনে খোলা ও বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু ২০২১ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচ প্রকল্প এ দাবি উপেক্ষা করে বাস্তবায়িত হয়, যার জন্য স্থানীয়রা যশোর-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যকে দায়ী করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ভবদহের একুশ ভেন্টের ১০টি কপাট খোলা এবং নদীর ৮.৫ কিলোমিটার খনন করে পলি সরানো হয়েছে। ফলে ভাটির সময় পানি স্বাভাবিকভাবে নিষ্কাশিত হচ্ছে। জোয়ারের সময় সেচ যন্ত্র চালু করা হচ্ছে, যা পানির চাপ কমাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনীর মাধ্যমে দ্রুত খনন কাজ শুরু হলে জলাবদ্ধতা আরও কমবে।
নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ ব্যানার্জী আরও জানান, ষাটের দশকে নির্মিত স্লুইসগেটগুলো পুরনো হওয়ায় একসঙ্গে সব কপাট খোলা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ধাপে ধাপে ৮টি, তারপর আরও ২টি কপাট খোলা হয়েছে। সব কপাট খুলতে পারলে জলাবদ্ধতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মী জাকির হোসেন বলেন,৮টি গেট খোলায় ভাটির সময় পানি স্বাভাবিকভাবে নিষ্কাশিত হচ্ছে, ফলে মোটর চালানোর প্রয়োজন কমেছে এবং বিদ্যুৎ খরচ কমছে।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব চৈতন্য পাল জানান, ২০১২ সাল থেকে সব স্লুইসগেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ড, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও কায়েমি স্বার্থবাদীদের ষড়যন্ত্রে ৬০ কিলোমিটার নদী ধ্বংস করা হয়েছে, যার ফলে হাজার কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, এবার ১০টি গেট খোলায় পানি নিষ্কাশন বেড়েছে। আরও ৬টি গেট খুললে জলাবদ্ধতা দ্রুত কমবে। তবে, টেকা ঘাটে এলজিইডির সংকীর্ণ ডাইভার্সন রোড পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি করছে, যা অপসারণ জরুরি।
স্থানীয় বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের পরিবর্তে নিয়মিত নদী খনন ও স্লুইসগেট খোলাই জলাবদ্ধতার সমাধান।
জলাবদ্ধ এলাকা মনিরামপুর, কেশবপুর ও অভয়নগর উপজেলার মঙ্গলকোট, বিদ্যানন্দকাটি, পাজিয়া, সুফলাকাটি, গৌরিঘোনা, হরিদাসকাটি, সুন্দলী, চলশিয়া, পায়রা, কুলটিয়া, মনোহরপুর, দুর্বাডাঙ্গা ও শ্যামকুড় ইউনিয়নে এখনো ভোগান্তি রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এ তিন উপজেলার ২৭টি বিলের পানি ভবদহের ২১,৯ ও ৩ ভেন্টের স্লুইসগেট দিয়ে হরি নদীতে নিষ্কাশিত হয়। পলি জমে গেটগুলো অকার্যকর হওয়ায় পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছিল।
অভয়নগরের সুন্দলীর বাসিন্দা রাজু আহমেদ বলেন, ২০২২ সালে সেচ প্রকল্পের কারণে ভোগান্তি বেড়েছিল। ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি তখন প্রকল্প বাতিলের দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছিল, কিন্তু কর্র্তৃপক্ষ তা আমলে নেয়নি। এবার স্লুইসগেট খোলায় সুফল পাওয়া যাচ্ছে।
ভবদহের অশীতিপর বাসিন্দা নিরদ বরণ সরকার বলেন, নদীতে পলি জমে ভরাট হওয়াই জলাবদ্ধতার মূল কারণ। পলি অপসারণ করে বিলে ওঠানো গেলে নদী গভীর থাকবে এবং জলাবদ্ধতা কমবে।