প্রতিবেদক: এ্যাডঃ মিঠুন রহমান
কৃতি ফুটবল খেলোয়াড় রেজাউল করিম মিয়া দিলীপ সিরাজগঞ্জের মাছুমপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ফজল করিম মিয়া। ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি প্রবল আকর্ষণ ছিল তাঁর। মাছুমপুর মাঠেই ফুটবল যাত্রা শুরু হয় তাঁর, সেখানে প্রতিভার কারণে অল্প বয়সেই বড়দের খেলায় সুযোগ পান।
শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি তিনি তৎকালীন পাবনা জেলার বিভিন্ন ইন্টার স্কুল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে দলকে একাধিকবার চ্যাম্পিয়ন করেন এবং অসাধারণ পারফরম্যান্সের মাধ্যমে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করেন। ক্লাব পর্যায়ে তাঁর খেলা শুরু হয় মাছুমপুর সবুজ সংঘ-এর হয়ে। পরবর্তীতে ১৯৭৬ সালে মাসুমপুর গ্রামের সর্বস্তরের জনসাধারণের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত মাছুমপুর ক্রীড়া চক্র-এর অন্যতম প্রধান খেলোয়াড় ছিলেন তিনি।
১৯৭৬ থেকে ৮০-এর দশকের শুরুতে মাসুমপুর ক্রীড়া চক্র উত্তরবঙ্গসহ দেশের প্রায় সব জেলায় বড় টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স-আপ হয়, যেখানে দিলীপের নৈপুণ্য ছিল মুখ্য। তিনি সহরোয়ারদী কাপ, শেরে বাংলা কাপ ও জে এফ এ কাপে জেলা দলের হয়ে খেলে একাধিকবার ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ ও ম্যান অফ দ্যা টুর্নামেন্ট নির্বাচিত হন।
১৯৮২ সালে বয়স ভিত্তিক (১৬) বাংলাদেশ জাতীয় পর্যায়ে ফুটবল খেলার প্রতিযোগিতায় তৎকালীন পাবনা দলের ক্যাম্পিংয়ে তিনি সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালে সিরাজগঞ্জ জেলা গঠনের পর প্রথম জেলা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে মাসুমপুর ক্রীড়া চক্র, যেখানে তাঁর অবদান ছিল অনন্য। মাঠে তিনি যেমন গোল করতে দক্ষ ছিলেন, তেমনি সহখেলোয়াড়দের দিয়ে গোল করাতেও ছিলেন কৌশলী। সে সময় সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে প্রায়ই তাঁর খেলার ছবি প্রকাশিত হতো।
ঢাকায় তিনি ফরাসগঞ্জ ক্লাব, ফায়ার সার্ভিস ক্লাব ও ওয়াপদা ক্লাবের হয়েও খেলেছেন। তবে ১৯৮৫ সালের শেষ দিকে ঢাকার মাঠে ইনজুরিতে পরার কারণে তাঁর ফুটবলার জীবন থেমে যায়। কিছুটা সুস্থ হয়ে তিনি ১৯৮৬ সালে কোচ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তাঁর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অনেক খেলোয়াড় জাতীয় দল ও দেশের খ্যাতনামা ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। শুধুমাত্র সিরাজগঞ্জ জেলা নয় বরং উত্তরবঙ্গের ক্রীড়াঙ্গনের লোকজন সহ সর্ব-সাধারণ রেজাউল করিম মিয়াকে ( দিলীপ ওস্তাদ) হিসেবে সম্বোধন করে থাকেন।
বর্তমানে রেজাউল করিম মিয়া (দিলীপ ওস্তাদ) দীর্ঘদিন ধরে সিরাজগঞ্জ জেলা ফুটবল দলের প্রধান কোচ, জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও ডি এফ এ – এর সহ-সভাপতি এবং মাসুমপুর ক্রীড়া চক্রের সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
রেজাউল করিম মিয়া দিলীপ আমাদের ক্রীড়াঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর সাফল্য তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে এবং তাঁর জীবন আমাদের শিখিয়ে দেয়— নিষ্ঠা, পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসের মূল্য।