Home » সিএনএকে ড. ইউনূস সংস্কার ও বিচার ছাড়া নির্বাচনে ফিরবে পুরোনো সমস্যা

সিএনএকে ড. ইউনূস সংস্কার ও বিচার ছাড়া নির্বাচনে ফিরবে পুরোনো সমস্যা

0 মন্তব্য গুলি 4 জন দেখেছে 4 মিনিট পড়েছেন

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করতে অন্তর্বর্তী সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। নির্বাচনের আগে সংস্কার এবং ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের অনিয়ম, দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, তবে সংস্কার ও বিচার না করে নির্বাচন দেওয়া হলে পুরোনো সমস্যা আবার ফিরে আসতে পারে। তিনি বলেন, আমি আশা করি-বাংলাদেশ সঠিক পথে থাকবে, এটি আর পথ হারাবে না। বুধবার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে সিঙ্গাপুরভিত্তিক সিএনএ টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. ইউনূস বলেন, ‘যদি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হয় তাহলে এর কোনো অর্থ নেই। আমার কাজ হলো একটি গ্রহণযোগ্য, পরিচ্ছন্ন ও উৎসবমুখর নির্বাচন নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি এসে গেছি। আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ছিল ত্রুটিপূর্ণ, এর অপব্যবহার করা হয়েছে এবং বিকৃত করা হয়েছে, তাই অনেক কিছু সংস্কারের প্রয়োজন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমাদের অঙ্গীকার ছিল গণ-অভ্যুত্থানের সময় জাতির যে আকাঙ্ক্ষা তা নিশ্চিত করা। এগুলো তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে-সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন। নির্বাচন প্রথম, তারপর সংস্কার; নাকি প্রথমে সংস্কার, এরপর নির্বাচন-এ প্রশ্নে তিনি বলেন, যদি আমরা নির্বাচন দিয়ে শুরু করি, তাহলে আমাদের সংস্কারের প্রয়োজন নেই, বিচারের প্রয়োজন নেই। কারণ, আমাদের পক্ষ থেকে নির্বাচন হলে সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। তাহলে সবকিছু নির্বাচিতদের হাতে চলে যাবে। কল্পনা করুন, অন্য দুটি কাজ না করে আপনার নির্বাচন হয়েছে। তখন আপনি আবার সেই পুরোনো সমস্যায় ফিরে যাবেন।

৮৫ বছর বয়সি অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস বলেন, নির্বাচনের পর সরকারে থাকার কোনো পরিকল্পনা তার নেই। রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের মাঝেও তিনি আশা প্রকাশ করেন, তার নেতৃত্ব একটি স্থায়ী উত্তরাধিকার রেখে যাবে। তিনি বলেন, আমি আশা করি এখন থেকে বাংলাদেশ সঠিক পথে থাকবে, এটি আর পথ হারাবে না। ১৫ বছর ধরে আমাদের ভোটাররা ভোট দিতে পারেননি। তরুণদের উচিত তাদের ভোট ও আকাঙ্ক্ষা ব্যালট বাক্সে ঢেলে দেওয়া। আমি আশা করি একটি ভালো সরকার আসবে, যা গণতান্ত্রিক নীতি মেনে চলবে। ড. ইউনূস ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই সফরে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, শিক্ষা এবং এলএনজি, পেট্রোলিয়াম পণ্য ও সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোর সরবরাহ ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে।

banner

আনোয়ার ইব্রাহিমের বাংলাদেশ সফর আমাদের প্রেরণা জুগিয়েছিল : মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের গত বছরের ঢাকা সফর সদ্য রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে উত্তরণের সময়ে বাংলাদেশকে এক বড় ধরনের মানসিক প্রেরণা জুগিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মালয়েশিয়া সফরকালে বুধবার সরকারি বার্তা সংস্থা বারনামাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। বারনামা বৃহস্পতিবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করে। বারনামার প্রধান সম্পাদক আরুল রাজু দুরার রাজের নেতৃত্বে সংস্থার একদল সাংবাদিক এই সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আনোয়ার ইব্রাহিমের এই সফর বাংলাদেশের কঠিন সময়ে জাতির মধ্যে আশার সঞ্চার করেছিল।’

২০২৪ সালের ৮ আগস্ট থেকে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান হিসাবে দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ইউনূস সাক্ষাৎকারে ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে কীভাবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয় এবং স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন তা স্মরণ করেন। ওই পরিস্থিতিকে ‘ম্যাগনিচিউড ৯ ভূমিকম্পে আঘাত হানা’ অবস্থার সঙ্গে তুলনা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সবকিছু ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, ভীষণ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি, কিছুই চলছিল না-শুধু ক্ষোভ ফুঁসে উঠছিল।’

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের এমন এক কঠিন সময়ে দেশ চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এটা ছিল অত্যন্ত কঠিন কাজ। শুধু বিশৃঙ্খলা দূর করাই নয়, সবকিছু নতুন করে গড়ে তুলতে হয়েছে। আমরা তখন পথ খুঁজছিলাম, কীভাবে এগোবো এমন সময়ে সুখবর এলো, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেশে সফরে আসছেন। তিনি আমাদের আশা দিয়েছিলেন। তার সফর জনগণের মধ্যে বিপুল উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করেছিল। মালয়েশিয়া বাংলাদেশের মানুষের কাছে খুব পরিচিত একটি দেশ, কারণ এখানে বহু বাংলাদেশি বসবাস করেন এবং তাদের পরিবারও এখানে রয়েছে। এটি কোনো অজানা-অচেনা দেশ নয়। তাই মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী এসে বললেন, হ্যাঁ, আমরা তোমাদের পাশে আছি, এটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য অনেক অর্থবহ ছিল। তার উপস্থিতি খুবই উৎসাহব্যঞ্জক ও অনুপ্রেরণাদায়ক ছিল, বলে উল্লেখ করেন ড. ইউনূস।

মালয়েশিয়া বাংলাদেশের বাইরে প্রথম দেশ হিসাবে আমানাহ ইখতিয়ার মালয়েশিয়া প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক মডেল গ্রহণ করে। ড. ইউনূস ১১ থেকে ১৩ আগস্ট মালয়েশিয়ায় ৩ দিনের সরকারি সফরে আসেন। এ সময় তিনি দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে দেশটির বিভিন্ন খাতের নেতা এবং বড় বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

ইউনূস বলেন, ‘আমি বলতে পারি, আমাদের সফরটি দারুণ ও অত্যন্ত সফল হয়েছে। আমরা এই সফর নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট। সবাই তাদের সময় নিয়ে খুব উদার ছিলেন। আমরা যেসব কর্মকর্তা, নেতা ও ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম, সবাই এগিয়ে এসেছেন।’

অধ্যাপক ইউনূস আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, এই সফর দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করবে এবং পারস্পরিক উপকারী ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতা সম্প্রসারিত করবে, যা ১৯৭২ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় মালয়েশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার ও রপ্তানি গন্তব্য বাংলাদেশ। এর প্রধান রপ্তানি পণ্য হলো পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য, পাম তেল ও রাসায়নিক দ্রব্য, আর আমদানি পণ্য হলো টেক্সটাইল, জুতা, পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য ও প্রস্তুত পণ্য।

২০২৪ সালে মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ বাণিজ্য ৫.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৩.৩৫ বিলিয়ন রিঙ্গিত (২.৯২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)।

 

সূত্র: যুগান্তর ডেস্ক

এই সম্পর্কিত আরো পোস্ট দেখতে পারেন

কমেন্ট লিখুন