তৃণমূলের সংবাদ ডেস্ক:
অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় (৫৩ বছর) পর আবারও চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা করতে চলেছে মানবজাতি। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে আর্টেমিস-২ নামের এই মিশনে চারজন নভোচারী চাঁদকে ঘিরে ১০ দিনের মিশনে অংশ নেবেন। ১৯৭২ সালে অ্যাপোলো-১৭-এর পর এই প্রথম কোনো নভোচারী পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথের বাইরে পা রাখবেন।
নভোচারীদের এই দলে রয়েছেন নাসার তিন সদস্য রিড ওয়াইজম্যান, ভিক্টর গ্লোভার ও ক্রিস্টিনা কচ। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেবেন কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সির জেরেমি হ্যানসেন। এই অভিযানের মূল লক্ষ্য চাঁদে অবতরণ নয়, বরং ভবিষ্যতে চন্দ্রপৃষ্ঠে মানুষের পদার্পণের জন্য রকেট ও মহাকাশযানের বিভিন্ন ব্যবস্থা পরীক্ষা করা।
সংবাদমাধ্যমকে আর্টেমিস-২-এর প্রধান ফ্লাইট ডিরেক্টর জেফ রাডিগান জানান, নভোচারীরা অতীতের সব মিশনের চেয়ে অনেক দূরে যাবেন। তাঁরা চাঁদ ছাড়িয়ে অন্তত ৫ হাজার নটিক্যাল মাইল (৯ হাজার ২০০ কিলোমিটার) অতিক্রম করবেন। এই দূরত্ব আগের যেকোনো মিশনের চেয়ে অনেক বেশি।
নভোচারীরা এসএলএস (SLS) রকেটের ওপর অবস্থিত ওরিয়ন ক্যাপসুলে অবস্থান করবেন। এই ক্যাপসুল তাদের যাত্রার পুরো সময়ে বাসস্থান হিসেবে কাজ করবে। যাত্রা শুরুর প্রথম দুই মিনিটেই দুটি সলিড রকেট বুস্টার বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসবে। এরপর আট মিনিট পর দ্বিতীয় স্টেজ শুরু, অর্থাৎ ইন্টারিম ক্রায়োজেনিক প্রপালশন সিস্টেম (আইসিপিএস) ওরিয়ন ক্যাপসুল থেকে আলাদা হবে। এরপর ওরিয়ন ক্যাপসুলটি সৌর প্যানেল মেলে ধরে ব্যাটারি চার্জ করবে, যাতে সরাসরি সূর্যালোক না পেলেও শক্তি সরবরাহ সম্ভব হয়।
৯০ মিনিট পর আইসিপিএস তার ইঞ্জিন চালু করে যানটিকে পৃথিবীর একটি উঁচু কক্ষপথে তুলবে। এর পরবর্তী ২৫ ঘণ্টা ধরে চলবে একটি পূর্ণাঙ্গ সিস্টেম পরীক্ষা। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, তাহলে ওরিয়ন আইসিপিএস থেকে আলাদা হবে এবং শুরু হবে ‘প্রক্সিমিটি অপারেশনস ডেমোনস্ট্রেশন’ নামের একধরনের মহড়া। এই মহড়ায় নভোচারীরা হাত দিয়ে ওরিয়নের থ্রাস্টার নিয়ন্ত্রণ করে আইসিপিএসের দিকে এগিয়ে যাবেন এবং আবার দূরে সরে আসবেন। এটি মূলত ভবিষ্যতের চন্দ্র অবতরণের জন্য একটি ল্যান্ডিং যানের সঙ্গে ডকিং পদ্ধতির মহড়া।
প্রায় ২৩ ঘণ্টা পর ওরিয়ন সার্ভিস মডিউল চালু করে (ট্রান্সলুনার ইনজেকশন) চাঁদের অভিমুখে যাবে। এই চার দিনের যাত্রায় নভোচারীরা পৃথিবী থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার মাইলেরও বেশি দূরে চলে যাবেন এবং নিয়মিত সিস্টেম পরীক্ষা চালিয়ে যাবেন।
এই মিশনে নভোচারীরা অনেকটা গিনিপিগ হিসেবে থাকবেন। তাঁদের রক্ত থেকে সংগ্রহ করা কোষ দিয়ে যাত্রার আগে ও পরে অর্গানয়েড নামে ক্ষুদ্র অঙ্গের মতো টিস্যু বানানো হবে। এরপর এ দুই সেটের তুলনা করে দেখা হবে মহাশূন্যের মাইক্রোগ্র্যাভিটি ও তেজস্ক্রিয়তা শরীরের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলে।
নাসার বিজ্ঞানপ্রধান ড. নিকি ফক্স বলেন, ‘আপনি ভাবতেই পারেন, যখন আমাদের সামনে পুরো নভোচারীই আছে, তখন অর্গানয়েড কেন? এর কারণ হলো, আমি তো একজন নভোচারীকে কাটাছেঁড়া করতে পারি না, তবে এই ছোট্ট টিস্যুগুলো বিশ্লেষণ করে অনেক কিছু জানতে পারি।’
মহাকাশযানটি চাঁদের পাশ দিয়ে ঘুরে এসে পৃথিবীর অভিকর্ষের টানে চার দিনের ফিরতি যাত্রা শুরু করবে। পৃথিবীতে পৌঁছানোর পর সার্ভিস মডিউলটি ক্রু মডিউল থেকে আলাদা হয়ে যাবে। এরপর নভোচারীরা তাঁদের যাত্রার একটি বিপজ্জনক ধাপ শুরু করবেন। ফেরার আগে ওরিয়ন থেকে সার্ভিস মডিউল আলাদা হয়ে যাবে। ক্যাপসুলটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনরায় প্রবেশ করবে এবং ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলের কাছে প্যারাশুটের সাহায্যে অবতরণ করবে।
এই মিশনের সফলতার ওপর নির্ভর করবে নাসার পরবর্তী চন্দ্র অবতরণ মিশন আর্টেমিস-৩ কত দ্রুত শুরু হবে। তবে নাসা বলছে, সেটি ‘২০২৭ সালের মাঝামাঝি হতে পারে, তার আগে নয়।’ কারণ, এই চন্দ্রাভিযানে ব্যবহার করা হবে স্পেসএক্সের স্টারশিপ, যা এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে।