এ্যাডভোকেট শহীদুল ইসলাম সরকার
পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার কর্মী।
বহু ইতিহাস, ঐতিহ্য ধারন করে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এক সাগর রক্ত পেরিয়ে লাল সবুজের পতাকা খচিত স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। যার নাম “গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ”।
রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য এবং জনগণের অধিকার ও দায়িত্ব নিশ্চিত করনের জন্য ১৯৭২ সালে রচিত হয় আমাদের পবিত্র সংবিধান। বাস্তবতার নিরিখে, প্রয়োজনের তাগিদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পর্যন্ত কার্যকর হয়েছে। ষোড়শ সংশোধনী মহান জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। এতবার সংশোধন, সংযোজন এবং পরিমার্জনের পরও আমাদের সংবিধানের কিছু মৌলিক ভিত্তি অপরিবর্তিত রয়েছে। একমাত্র জরুরী অবস্থাকালীন সময় ব্যতীত সকল সংশোধনীতেই রাষ্ট্রের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত নীতিমালা বহাল রয়েছে। এই সংবিধানের ভূমিকায় প্রথম ভাগেই প্রাধান্য দিয়ে ৭ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে “প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ” এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে। ৭ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসামাঞ্জস্য হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামাঞ্জস্য; ততখানি বাতিল হইবে। যাহা বাংলাদেশের সংবিধানের ২৬ (১) ও (২) ধারায় স্পষ্ট করা হয়েছে। “২৬ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, এই বিধানবলীর সহিত অসামাঞ্জস্যপূর্ণ সকল প্রচলিত আইন যতখানি অসামাঞ্জস্যপূর্ণ, এই সংবিধান প্রবর্তন হইতে সেই সকল আইনের ততোখানি বাতিল হইয়া যাইবে। ২৬ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র এই ভাগের কোন বিধানের সহিত অসামাঞ্জস্যপূর্ণ কোন আইন প্রণয়ন করিবেন না এবং অনুরূপ কোন আইন প্রণীত হইলে তাহা এই ভাগের কোন বিধানের সহিত অসামাঞ্জস্যপূর্ণ ততোখানি বাতিল হইয়া যাইবে।” আমাদের পবিত্র সংবিধান প্রদত্ত এই নিশ্চয়তা প্রদান মূলক যে একটি গাইড লাইন সংবিধানের ভূমিকা পর্বেই তুলে ধরা হয়েছে, সে কারনে রাষ্ট্রের নাগরিকদের সংবিধান সম্মত: অধিকার আদায়ে রাষ্ট্রের দারস্থ হবার সুযোগ রয়েছে। রাষ্ট্র কখনো নাগরিকের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার বাস্তবায়নে অস্বীকার করিলে, ব্যর্থ হলে বা অনীহা প্রকাশ করিলে সেক্ষেত্রে নাগরিকের সুযোগ রয়েছে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হবার। রাষ্ট্র বা সরকার কর্তৃক সম্পন্ন করা কার্যাদি সংবিধানকে কষ্টি পাথর ভেবে তার সাথে মিলিয়ে দেখার বা কোন কিছু অসামাঞ্জস্যপূর্ণ হলে তা চ্যালেঞ্জ করার জন্য উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হবার এখতিয়ার নাগরিকদের রয়েছে।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১-এ বলা হয়েছে, “প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে। মানবসত্তার মর্যাদা ও মুল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।
সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে মেহনতী মানুষকে কৃষক ও শ্রমিককে এবং জনগণের অনগ্রসর অংশ সমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তি দান করা।
সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদন শক্তির ক্রম বৃদ্ধি সাধন এবং জনগণের জীবন যাত্রার বস্তগত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ় উন্নতি সাধন, যাহাতে নাগরিকদের জন্য
ক) অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসা সহ জীবন ধারনের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা।
খ) কর্মের অধিকার অর্থাৎ কর্মের গুণ ও পরিমান বিবেচনা করিয়া যুক্তিসংগত মজুরীর বিনিময়ে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার অধিকার।
গ) যুক্তিসংগত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার।
ঘ) সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতা-পিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা আয়ত্বাধীন কারনে অভাব গ্রস্থতার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য লাভের অধিকার।
সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের নির্বাহী অঙ্গসমূহ হইতে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবেন।
আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হবার পরেও ১৮৬০ সালের প্রণীত পেনাল কোড ১৮৭২ সালের স্বাক্ষ্য আইন এবং ১৮৯৮ সালের ফৌজদারী কার্যবিধি দ্বারা ফৌজদারী বিচার কার্য্য পরিচালিত হয়ে আসছে। অথচ আমাদের সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে, রাষ্ট্র বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ নিশ্চিত করিবেন। দীর্ঘদিন রাষ্ট্র বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় রাষ্ট্র কৃর্তক নিযুক্ত প্রশাসনিক ম্যাজিস্ট্রেট গণ এবং প্রশাসন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বিচারকগণ বিচারকার্য্য পরিচালনা করে আসছিলেন। জেলা জজসহ সকল দেওয়ানী আদালতের বিচারকগণের নিয়ন্ত্রণ করা হতো এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ইচ্ছা মাফিক। মাসদার হোসেন বনাম রাষ্ট্র মামলায় বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিলেট ডিভিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী বিচার বিভাগ পৃথকীকরণে কাজ শুরু হয়। সরকার উচ্চ আদালতের উক্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নে বেশ কয়েক দফা সময় নিয়ে কালক্ষেপন করতে থাকে। অবশেষে ২০০৭ সনের ১ নভেম্বর বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ সম্পর্কিত উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আলোর মুখ দেখে। সমস্ত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয় সুপ্রিম কোর্টের অধিনে। জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন গঠন করে বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট / সহকারী জজ নিয়োগ প্রদান করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের অধিনে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ সংক্রান্ত নির্দেশনার গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা অদ্যাবধি বাস্তবায়ন করা হয় নাই। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের নীতিমালা অদ্যাবধি পরিপূর্ণতা লাভ করেনি। আমাদের সরকারগুলো বিচার বিভাগকে পূর্ণাঙ্গরূপে পৃথকীকরণে পূর্বাপর আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় কালক্ষেপন করে আসছে।
অধস্তন আদালতে কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ বিষয়ে একটি বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়, যাতে বলা হয় Lower Judiciary তে জনবল নিয়োগ সংক্রান্ত বাছাই কমিটিতে আইন মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধি রাখা বাধ্যতামূলক। সরকার প্রণীত এই আইন ও বিধিটি প্রণয়নের ফলে বিচার বিভাগের উপর মন্ত্রণালয়ের আধিপত্য বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়। সরকার প্রণীত এই আইন ও বিধিমালা আমাদের সংবিধানের ১১৬ (ক) অনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ায় এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে HRPB নামক একটি মানবাধিকার সংগঠন রীট মোকদ্দমা দায়ের করিলে সম্প্রতি উক্ত মোকদ্দমার চূড়ান্ত শুনানী অন্তে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের একটি দৈত বেঞ্চ উক্ত বিধানকে বেআইনি, সংবিধান পরিপন্থী সংক্রান্ত বিষয়ে মহামান্য উচ্চ আদালতে শুনানী চলমান আছে।
সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রের সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান। অথচ এই বিষয়টিকে পাশ কাটিয়ে সরকার দূর্নীতি দমন সংশোধনী আইন পাশ করে। সেই সংশোধনী আইনের ৩২ (ক) ধারায় বিধান রাখা হয় ‘সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী জজ ও ম্যাজিস্ট্রেটদের বিরুদ্ধে সরকারে অনুমোদন ছাড়া দুর্নীতির মামলা করা যাবে না। সরকার প্রণীত এই আইনটি আমাদের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক দাবী করে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রীট মোকদ্দমা দায়ের করে হিউম্যান রাইটস এন্ড পীস ফর বাংলাদেশ। ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে প্রাথমিক শুনানী শেষে হাইকোর্ট রুল জারী করে। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারী পূর্ণাঙ্গ শুনানী শেষে বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হক ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেনের ডিভিশন বেঞ্চ সংশোধিত দুদক আইনের ৩২ (ক) ধারা বেআইনী ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করে, সংশোধিত দদুক আইনের ৩২ (ক) ধারা বাতিল করেন।
রিমান্ড : বাংলাদেশের সংবিধানে রিমান্ড সম্পর্কিত যেসব অনুচ্ছেদ আছে তা কখনো রিমান্ডকে বৈধতা দেয় না। সংবিধানের ৩৩ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গ্রেফতারকৃত কোন ব্যাক্তিকে যথাশীঘ্র সম্ভব গ্রেফতারের কারণ আপন করিয়া প্রহরায় আটক রাখা যাইবে না। উক্ত ব্যক্তিকে তাহার মনোনীত আইনজীবীর সহিত পরামর্শের ও তাহার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হইতে বঞ্চিত করা যাইবে না। ৩৩ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গ্রেফতারকৃত ও প্রহরায় আটক প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেট এর সম্মুখে গ্রেফতারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে (গ্রেফতার এর স্থান হইতে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আনায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সময় ব্যতিরেকে) হাজির করা হইবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ব্যতিরেকে তাহাকে তদাতিরিক্ত কাল প্রহরায় আটক রাখা যাইবে না
সংবিধানের ৩৫ (৪) অনুচ্ছেদে বলা আছে, “কোন অপরাধের দায়ে অতি না। ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী “কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাই কিংবা কাহারও সহিত অনুরুপ ব্যবহার করা যাইবে না।” ১৮৬০ সনে জদারী কার্যবিধির ১৬৭ ধারার প্রচলিত রিমান্ড আমাদের সংবিধানের ৩৫ (৪) ধারার সাথে সাংঘর্ষিক। ব্লাস্ট বনাম বাংলাদেশ সরকার মোকদ্দমায় মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ১৫ দফা নির্দেশনা প্রদান করেছেন। যা আমাদের দেশে বিচারিক কাজে নিয়োজিত বিজ্ঞ বিচারকগণ এবং বিজ্ঞ আইনজীবীগণ সকলেই অবগত রয়েছেন। অন্যদিকে রিমান্ডের আবেদন বিষয়ে ১৯৪৩ সনের পিআরবি’র প্রবিধান ৩২৪ এর অধিন পুলিশ রিমান্ডের যে আবেদন করে সেই আবেদনটি করার কথা পিআরবি’র প্রবিধান ৪৫৮ (ক) অনুযায়ী বিপি ফরম ৯০ এর মাধ্যমে। পিআরবি অনুযায়ী পুলিশ অফিসার কর্তৃক করা রিমান্ডের আবেদনে জেলার প্রধান পুলিশ অফিসার বা পুলিশ কমিশনারের মাধ্যমে ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর দাখিল করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যা অনুসরণ করা হয় না। নিজের বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাইবে অমানুষিক বা লাঞ্চনাকর দন্ড দেওয়া যাইবে না
রিমান্ড বিষয়ে উচ্চ আদালতের প্রদত্ত ১৫ দফার নির্দেশনার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নির্দেশনা নিম্নরুপঃ
নির্দেশনা-১: যদি তদন্তকারী কর্মকর্তা কোন আসামীকে রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আবেদন করেন তাহলে তিনি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কোন আসামীকে রিমান্ডে নেওয়ার সব গ্রাউন্ড বিস্তারিতভাবে তুলে ধরবেন এবং আদালতের সামনে আদালতের সন্তুষ্টির জন্য কেস ডাইরী উপস্থাপন করবেন। ম্যাজিস্ট্রেট যদি মনে করেন আসামিকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার প্রয়োজন আছে, তাহলে তিনি বিমান্ড দেওয়ার কারণ লিপিবদ্ধ করে মঞ্জুর করবেন। ম্যাজিস্ট্রেট সন্তুষ্ট না হলে রিমান্ড না- মঞ্জুরও করতে পারেন।
নির্দেশনা-২: যদি ম্যাজিস্ট্রেট রিমান্ড মঞ্জুর করেন, তাহলে তদন্তকারী কর্মকর্তার হেফাজতে পাঠানো পূর্বে আসামীকে একজন ডেজিগনেটেড ডাক্তার বা এই উদ্দেশ্যে গঠিত মেডিকেল বোর্ড দ্বারা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে এবং সেই ডাক্তারী পরীক্ষা ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে উপস্থাপন করতে হবে।
নির্দেশনা-৩: রিমান্ডে নেওয়ার পর শুধু তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অধিকারী হবেন এবং রিমান্ডের সময় পেরিয়ে যাবার পর আসামীকে তিনি ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করবেন। আসামী যদি কোন নির্যাতনের অভিযোগ জানায়, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট তৎক্ষণাৎ আসামীকে সেই ডাক্তার বা মেডিকেল বোর্ডের কাছে পাঠাবেন।
নির্দেশনা-৪: ম্যাজিস্ট্রেট যদি ডাক্তার বা মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্টে পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন আসামীকে আঘাতের চিহ্ন পান। তাহলে তিনি সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৯০ (১) (গ) এর অধিনে দন্ডবিধির ৩৩০ ধারা মোতাবেক আসামী কর্তৃক কোন প্রকার পিটিশন দায়ের ছাড়াই অপরাধ আমলে নিবেন।
উপরোক্ত পুনরায় রিমান্ডের ক্ষেত্রে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ কাঁচের ঘরে আসামীর নিযুক্ত আইনজীবীর উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সুপারিশ বা নির্দেশনা দেন।
অত্যান্ত দুঃখজনক হলেও আমাদেরকে স্বীকার করতেই হয় যে, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সমূহ সকলেই জানা সত্বেও রিমান্ডের ক্ষেত্রে তা অনুসরণে আমাদের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট এবং তদন্তকারী কর্মকর্তারা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থতার পরিচয় নিচ্ছেন। আমরা আইনজীবীরাও সঠিকভাবে আদালতের কাছে আইনী ব্যাখ্যা সমূহ যথাযথ ভাবে উপস্থাপন করছি কি না সেটাও ভেবে দেখা দরকার। যে কারনে পুলিশ হেফাজতে আসামী অমানবিক নির্যাতন এমনকি মৃত্যু ঘটানোর খবর পত্রিকার পাত্রায় দেখা যায়। আলকাঠির কলেজ ছাত্র লিমনের পঙ্গুত্ব বরণের লোমহর্ষক নির্যাতনের কাহিনী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ব্যাখ্যা কোনটাই আমরা ভুলি নাই। অনেক ক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনৈতিক চাপ প্রয়োগের অভিযোগ পাওয়া যায়। পুলিশ হেফাজতে আসামী নির্যাতনের বিষয়ে মহামান্য উচ্চ আদালত একাধিক রীট মোকদ্দমায় যুগান্তকারী নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
ইভটিজিং ও নারীর প্রতি সহিংসতা : আকাশ সংস্কৃতির কুপ্রভাবে বিরুপ সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে নারীর প্রতি সহিংসতা, ইভটিজিং ইত্যাদি বিগত কয়েক বৎসরে আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। আত্মহননের পথ বেছে নেয় কয়েকজন হতভাগা কিশোরী ও তরুনী। ইভটিজিং এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন অভিভাবক এবং শিক্ষক বখাটেদের হাতে লাঞ্চিত হয় এবং প্রাণ হারায় আরোও কয়েকজন। সারাদেশে সচেতন নাগরিক সমাজ প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পরেন। এই পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে গত ২০১০ সনে একটি রীট মোকদ্দমা দায়ের করে। উক্ত রীট মোকদ্দমা শুনানী অন্তে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের মাননীয় বিচারপতি মোঃ ঈমান আলী ও বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের দ্বৈত বেঞ্চ ১০ দফা নির্দেশনা প্রদান করেন নির্দেশনা সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ৫ নং দফায় বলা হয়েছে The District Law and order committee will tune to time (at least once in a month) organize and bold a “Meet the People” session to be attended bz the press and women and children activists and update about the occurrence incidences of sexual harassment in the concerned district and the state taken to punish the perpetrators and to prevent occurrence” একই সাথে মাননীয় আদালত ১০ ৭২ দফায় উক্ত আদালত কর্তৃক ২ নভেম্বর ২০১০ তারিখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য স্থানে আসা-যাওয়ার পথে মহিলা ও শিশুদের ইভটিজিং এর হাত থেকে রক্ষা করার নিমিত্তে প্রদত অন্তবর্তীকালীন ৪ টি নির্দেশনাও বহাল রাখা হয়েছে।
- a) The respondents No. I is directed to issue immediate instructions to all the deputy commissioners throughout the county and all Upazila Nirbahi Officers to be on high alert and to deal with this particulars menace stalking/eve teasing and sexual harassment separately and independently of any other crime and to take appropriate and immediate action against the alleged offenders
৩ নং নির্দেশনায় বলা আছে Every police station in Bangladesh will have separate cell or team, designated only for the purpose of dealing with compliance instances of sexual harassment in the streets, public places, shops, markets, stations or terminals Bus, Train. Steamer (Private & Public) and any other transport and different high bound hood areas, Particular attention should be given to the places and areas near school, colleges & University parks, cinema halls, markets and shopping mall attend by the girls & women.
ঐ মোকদ্দমায় নির্দেশনার পর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী পরিষদের সচিবের দপ্তর থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সারাদেশের জেলা প্রশাসকদের আদান-১৩পি সংযুক্ত করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন। উপরোক্ত নির্দেশনার। আলোকে দৃশ্যত। ইভটিজিং ও নারীর প্রতি বিধির ৫০৯ ধারা মোবাইল কোর্টের আওতায় এনে, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এয়েছে উচ্চ আদালতের অন্যান্য নির্দেশনাবলী কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে সে বিষয়ে জেলা। প্রশাসকগণ এবং নির্দেশপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাই ভাল বলতে পারবেন।
উপরোক্ত বিষয় সমূহ পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই যে, আইনের শাসন, মানবাধিকার ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সাংবিধানে প্রদত্ত বিধিমালা অনুসরণ, বাস্তবায়ন মেনেচলা এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ সামাজিক ও নাগরিক জীবনের শান্তি প্রতিষ্ঠায় ও সমৃদ্ধি আনয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রতিবেদকঃ এ্যাডভোকেট শহীদুল ইসলাম সরকার, পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার কর্মী। ই-মেইলঃ shohidsarker@gmail.com