মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পদ্মা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পরেছেন ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ। হঠাৎ করে ভাঙন দেখা দেওয়ায় তারা তাদের ঘর বাড়ি সড়িয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছেন। গত এক সপ্তাহ আগে হঠাৎ করে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপার বাজার এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। পূর্বে ওই এলাকায় জিএ ব্যাগ ভর্তি বালু ফেলে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেই জিও ব্যাগ তীব্র স্রোতে সরে গিয়ে ভাঙন দেখা দেয়। এতে এখন পর্যন্তু ওই বাজারের ৯টি দোকান ঘর বিলীন হয়ে গেছে। পরে দিঘিরপার বাজার এলাকায় জিএ ব্যাগ ভর্তি বালুর বস্তা ফেলে ওই এলাকায় ভাঙন কিছুটা কমলেও ওই এলাকার পাশের সদর উপজেলার পূর্ব রাকিরকান্দি এলাকায় তিব্র নদীভাঙন চলছে। চারদিনের ভাঙনে প্রায় ৩০টি পরিবার গৃহ হারা হয়েছেন বলে ওই এলাকার লোকজনের অভিযোগ। এছাড়া ভাঙন দেখা দিয়েছে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কান্দাবাড়ি এলাকায়। ভাঙনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পথে পুরো কান্দাবাড়ি গ্রাম। কান্দাবাড়ি এলাকায় প্রায় ২৫ বছর আগে একবার ভাঙনের পর ওই এলাকায় চর পরলে আবার বসত গড়ে স্থাণীয়রা। কিন্তু ২০২২ সাল থেকে আবারও পদ্মা গিলে খেতে থাকে ওই চরাঞ্চলের কান্দারবাড়ি, সরিষাবন, ধানকোরা ও মাঝিকান্দি গ্রাম। এতে প্রায় ৭০০ পরিবার গৃহহারা হয়েছে। বিলীন হয়েছে বহু মসজিদ ও স্কুল, কবরস্থান। প্রথম বার বিলীনের পরে ২য় দফায় দিঘিরপাড় বাজারে টানা তিন বছর ধরে চলছে ভাঙন। ভক্তভোগীরা অভিযোগ, দিঘিরপাড় বাজারের পাশের যে পদ্মার শাখা নদীটি এখোন ভাঙনের তান্ডব চলাচ্ছে ৬/৭ বছর আগেও এটা ছিলো সরু খালের মতো। যা শুক্ন মৌসুমে শুকিয়ে যেতো। কিন্তু ওই সরু খালের মতো নদীটি হতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণেই এই নদী ভাঙনের সৃষ্টি হয়। যার গতি প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে।সরেজমিনে উপজেলার পূর্ব রাকিরকান্দি গ্রামে গিয়ে দেখা যায় ওই গ্রামে চলছে তীব্র নদী ভাঙন। ঘর সড়িয়ে নেওয়ার কাজ করছেন ভুক্তভোগীরা কেউবা আবার গাছ কর্তন করে সড়িয়ে নিচ্ছেন। কেউ গাছের কাচা ফল ছিড়ে ফেলছেন নদীতে বিলিন হয়ে যাচ্ছে ভিটে মাটির সাথে অনেক গাছ পালাও কেটে সড়িয়ে নেওয়ার সময় টুকুও পাচ্ছেন না তারা। স্থানীয় কয়েকজন জানান চার দিন যাবৎ ওই এলাকায় নদী ভাঙন চলছে। চার দিনের ভাঙনে আমাদের ৩০টি বসত বাড়ি নদীতে ভেঙে গেছে।ঘর বাড়ি সড়িয়ে নেওয়ার কাজে ব্যাস্ত হায়দার আলী বলেন, দুই বছর যাবতই আমাদের এই এলাকায় নদীতে ভাঙতাছে। কেউ কোন খোঁজ খবরও আমাদের নেই নাই। লিপি আক্তার বলেন, কোন সরকারি লোক আমাদের সাহায্য সহযোগিতা তো দূরের কথা এসে খোঁজ খবরও নিল না। কয়েকদিন যাবত নদী ভাঙতাছে। শাহানুর বেগম বলেন, সরকার আছে শুধু শুধু। আমাদের তো কোন খোঁজ খবরই নেয় না। এই সরকার দিয়া আমরা কি করমু কিছু দিব থাক দূরের কথা তারা খোঁজই নেয়না। মজনু সরদার বলেন, আমাদের সব শেষ হইয়া গোলো। কোন সহযোগিতা তো দূরের কথা কেউ দেখতেও আসলো না। স্থানীয় রিপন বলেন, চেয়ারম্যানরা ভোটের সময় আসে। ভোট চাওয়ার সময় হাত পা জড়াইয়া ধরে। তারপর আর তাদের খোঁজ থাকে না। ইমন বলেন, চারদিনে আমাদের প্রায় ৩০ টি ঘরবাড়ি ভেঙে গেল কেউ খোঁজ খবর নিল না। এদিকে মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সন্ধ্যা থেকে উজানের ঢল ও তীব্র স্রোতের কারণে হঠাৎ করে দিঘিরপার বাজার এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। পরে জিও ব্যাগ ফেলানোর কারনে ওই এলাকায় ভাঙন কিছুটা কমলেও এখনো ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত ওই বাজারের ৯ টি দোকানঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে বলে দাবী করেছেন ওই বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মফিজল হক মোল্লা। ভাঙন অব্যাহত থাকায় মুন্সীগঞ্জের অন্যতম এই হাটবাজারে প্রায় ২ হাজারের বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঝুকির মধ্যে রয়েছে। দিঘিরপার বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মফিজল মোল্লা বলেন. আমরা আগেই পানি উন্নায়ন বোর্ডকে সতর্ক করেছিলাম। তারা যদি আগের বালুর বস্তার সাথে আরো বস্তা ফেলতো তাহলে হয়তো আমাদের বাজারের কোটি কোটি টাকার সম্পদ এভাবে ক্ষতি হতো না।এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, সবার আগে ভাঙন রোধের জন্য আমাদের পানি উন্নায়ন বোর্ডের সাথে মিটিং হয়েছে। অচিরেই ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টঙ্গিবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে সমন্বয় করে ভাঙ্গন ঠেকাতে প্রাথমিক পর্যায়ে বালু ভর্তি জিও বেগ ভাঙ্গন কবলিত স্থানে ফেলা হচ্ছে। পানি উন্নায়ন বোর্ডের উপবিভাগীর প্রকৌশলী শেখ এনামুল হক বলেন, ভাঙ্গন কবলিত স্থানে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এরপর সিসি ব্লক ফেলা হবে।”
তিনি জানান, “২০২০-২১ সালে পদ্মা নদীর বাম তীর রক্ষা করার জন্য লৌহজং-টংগিবাড়ী উপজেলায় একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। দুই দফা সংশোধিত হয়ে চলমান প্রকল্প ব্যয় ৫২৭ কোটি টাকা হয়েছে। প্রকল্পের ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এরমধ্যে ২৬টি প্যাকেজের কাজ অন্তর্ভুক্ত আছে। আমরা আশা করছি এই প্রকল্প আমরা নির্ধারিত সময়ে শেষ করবো এবং ভাঙ্গন রোধ করবো।”
সুত্র: দৈনিক মানবকন্ঠ