Home » “মাঠেই পাঠদান, আকাশে মেঘ দেখলেই ছুটি”

“মাঠেই পাঠদান, আকাশে মেঘ দেখলেই ছুটি”

0 মন্তব্য গুলি 4 জন দেখেছে 2 মিনিট পড়েছেন

আকাশে মেঘ দেখলেই স্কুল ছুটি দিতে হয়। বৃষ্টি শুরু হলে শিশুদের ভেজা ছাড়া গতি নেই। তাই বৃষ্টি হওয়ার আগেই স্কুল ছুটি দিয়ে দিতে হয়। ভাতুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রসঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন ভাতুরী গ্রামের রুকোনুজ্জামান।

এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গফরগাঁও উপজেলার ভাতুরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একতলা ভবনটি ১৯৯৪ সালে নির্মাণ করা হয়। নির্মাণকাজে অনিয়মের কারণে নির্দিষ্ট মেয়াদের আগেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ভবনটি। বিদ্যালয় ভবনের দেয়াল ও বিমে ফাটল দেখা দিয়েছে। খসে পড়ছে ছাদের পলেস্তারা। বিমের রডগুলো বেরিয়ে পড়েছে। দরজা-জানালাও ভেঙে গেছে। জরাজীর্ণ ভবনটি যে কোনো সময় ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাইমা জানায়, স্কুলের ছাদ থেকে ইটের সুরকি খসে পড়ে। মাথায় সুরকি পড়ে অনেকেই ব্যথা পেয়েছে। এখন মাঠে ক্লাস করে তারা।
একই অবস্থা বারবাড়িয়া ইউনিয়নের পাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। একতলা ভবনটি নির্মাণ করা হয় ১৯৯৩ সালে। নির্মাণকাজের শুরু থেকেই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এর পরও নির্মাণকাজ অব্যাহত থাকায় কাজ শেষ হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বর্তমানে স্কুল ভবনের দেয়াল ও বিমে ফাটল দেখা দিয়েছে। খসে পড়ছে ছাদের পলেস্তারা। এই ভবনটিও ধসে পড়ার উপক্রম।

শুধু এ দুই বিদ্যালয় নয়, গফরগাঁও উপজেলায় এ রকম জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত সরকারি স্কুল ভবন রয়েছে ২৫টি। এগুলোতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। শিক্ষকরা বলছেন, এক রকম জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ক্লাসে যেতে হয়। সব সময় উদ্বেগের মধ্যে থাকেন অভিভাবকরা। যত দিন যাচ্ছে, স্কুল থেকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

banner

প্রতিবছর এসব পরিত্যক্ত ভবন সংস্কারের নামে লাখ লাখ টাকা লুটপাট হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

মশাখালী ইউনিয়নের ভাতুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুল হকের ভাষ্য, ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে খোলা মাঠে। আকাশে মেঘ দেখলেই বাজাতে হয় ছুটির ঘণ্টা। অফিস কক্ষে বসে আতঙ্কে থাকেন তারা, কখন যেন ছাদ ধসে পড়ে!

একই কথা জানিয়েছেন বারবাড়িয়া ইউনিয়নের পাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাজেরা আক্তার। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ে আসার পর থেকেই আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। তবু পড়াশোনা চলছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও চিন্তিত।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, গফরগাঁও উপজেলায় ২৩৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন ইউনিয়নের ২৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। তবে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এসব বিদ্যালয়ে প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার কোমলমতি শিক্ষার্থী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পড়াশোনা করছে। ভয় আর আতঙ্কের কারণে বিদ্যালয়গুলোয় দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নূরে আলম ভূঁইয়া বলেন, বিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু ভবন নতুন করে নির্মাণের জন্য চাহিদাপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। পরিত্যক্ত ভবন সংস্কারের নামে বরাদ্দ লুটপাটের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। তাছাড়া এর সঙ্গে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকরা জড়িত। আর বরাদ্দের ব্যাপারে বলতে পারবেন তৎকালীন কর্মকর্তারা।’

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) গফরগাঁও উপজেলা প্রকৌশলী আবু বক্কর ছিদ্দিক জানান, সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

“সুত্র: দৈনিক সমকাল”

এই সম্পর্কিত আরো পোস্ট দেখতে পারেন

কমেন্ট লিখুন