Home » বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিসিএসের আদলে শিক্ষক নিয়োগ

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিসিএসের আদলে শিক্ষক নিয়োগ

0 মন্তব্য গুলি 5 জন দেখেছে 4 মিনিট পড়েছেন

বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের পদ্ধতি বদলে যাচ্ছে। শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ভিত্তিতে নিয়োগের বদলে এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ হবে বিসিএসের আদলে। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সরাসরি পরীক্ষার মাধ্যমে হবে এই নিয়োগ। এই পরীক্ষা হবে দুই ধাপে—নির্বাচনী বা বাছাই পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষা।

নিয়োগ পদ্ধতি বদলাতে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ ও প্রত্যয়ন বিধিমালা ২০২৫-এর খসড়াও করা হয়েছে। ওই খসড়ায় এসব উল্লেখ করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সব প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষে বিধিমালার খসড়াটি বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। খসড়া অনুমোদন হয়ে বিধিমালাটি শিগগির গেজেট আকারে জারি করা হবে বলে আশা করছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

দেশে বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৩৮ হাজার। এর মধ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৯ হাজার ১৬৪টি। বাকিগুলো নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় সাড়ে ৫ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী।

বর্তমানে সারা দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শূন্য পদের বিপরীতে এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে প্রার্থীদের প্রিলিমিনারি, লিখিত, মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ নিতে হয়। এই পরীক্ষা নেয় ও সনদ দেয় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এরপর নিয়োগের জন্য এনটিআরসিএ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন নিয়ে শূন্য পদের বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করে।

২০০৫ সাল থেকে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিচ্ছে এনটিআরসিএ। তবে শুরুর ১০ বছর শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা ছিল সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির হাতে। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর সরকার এনটিআরসিএকে সনদ দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশের ক্ষমতাও দেয়। এরপর থেকে পাঁচটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গত বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৮ জন শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করে এনটিআরসিএ। ষষ্ঠ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সুপারিশ চলতি সপ্তাহে প্রকাশ করা হতে পারে। এখন পর্যন্ত ১৮টি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়েছে।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের জন্য নতুন বিধিমালা তৈরির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম। গত রোববার তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিধিমালাটি জারি করা হলে শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। তখন শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এতে নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতা কমবে। কবে নাগাদ এটি কার্যকর হবে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিধিমালা জারি হলে পরবর্তী নিয়োগ পরীক্ষাই নতুন পদ্ধতিতে নেওয়া হবে।

এনটিআরসিএর একাধিক কর্মকর্তা জানান, নতুন পদ্ধতি হবে অনেকটা বিসিএসের নিয়োগ পদ্ধতির আদলে। অর্থাৎ বিসিএসের মতো শূন্য পদ উল্লেখ করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। এরপর আবেদনকারীদের আবেদনপ্রক্রিয়া শেষে নেওয়া হবে নির্বাচনী বা বাছাই পরীক্ষা। নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হবে। এরপর প্রকাশ করা হবে চূড়ান্ত ফল। পুরো প্রক্রিয়াটি তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতা ও মামলা-সংক্রান্ত জটিলতা কমে আসবে। তাঁরা জানান, নির্বাচনী বা বাছাই পরীক্ষা কোন পদ্ধতিতে (লিখিত নাকি এমসিকিউ) হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে পরিকল্পনা রয়েছে, বিশেষ বিসিএসের পরীক্ষা পদ্ধতির আদলে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার। অবশ্য এ বিষয়ে বিধিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘নির্বাচনী বা বাছাই পরীক্ষার বিষয়, ব্যাপ্তি ও নম্বর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত হবে।’

বর্তমানে শূন্য পদ উল্লেখ করে বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এরপর আবেদনপ্রক্রিয়া শেষে তিন ধাপে (প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক) পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করে পিএসসি। তবে বিশেষ বিসিএসের ক্ষেত্রে ২০০ নম্বরের এমসিকিউ টাইপ লিখিত পরীক্ষার পর দ্বিতীয় ধাপে ১০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। এরপর নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন পরীক্ষা পদ্ধতির বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার পদ্ধতি ঠিক করতে অংশীজনদের নিয়ে এক বা একাধিক কর্মশালার আয়োজন করা হবে। এরপর সবার মতামতের ভিত্তিতে নিয়োগ পরীক্ষার পদ্ধতি, নম্বরসহ অন্যান্য বিষয় চূড়ান্ত করা হবে।

বিধিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, শিক্ষক নিয়োগে পরীক্ষা হবে দুই ধাপে। এর একটি নির্বাচনী বা বাছাই পরীক্ষা, অন্যটি মৌখিক পরীক্ষা। নির্বাচনী পরীক্ষায় শূন্য পদের বিপরীতে দ্বিগুণ প্রার্থীকে বিষয় ও পদের ভিত্তিতে উত্তীর্ণ করা হবে। অর্থাৎ শূন্য পদের সংখ্যা ৫০ হাজার হলে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন ১ লাখ প্রার্থী। নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ২০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। উভয় অংশে (নির্বাচনী ও মৌখিক) পাস নম্বর হবে ন্যূনতম ৪০ শতাংশ। মৌখিক পরীক্ষা শেষে প্রকাশ করা হবে চূড়ান্ত ফলাফল। চূড়ান্ত ফলাফলে বিষয় ও পদভিত্তিক শূন্য পদের অতিরিক্ত ২০ শতাংশ প্রার্থীকে পাস করানো হবে। চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের পর তিন বছরমেয়াদি সনদপত্র পাবেন প্রার্থীরা। তবে চূড়ান্ত মেধাক্রম তৈরি হবে শুধু নির্বাচনী বা বাছাই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখে আবেদনকারীর বয়স সরকারনির্ধারিত বয়সসীমার মধ্যে হতে হবে। বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক পদে আবেদনের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর। খসড়ায় ফেব্রুয়ারির মধ্যে অথবা কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত সময়ে শূন্য পদের তথ্য এনটিআরসিএ-তে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের বিধিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আসছে। বর্তমানে বিধিটি আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আশা করছি, দ্রুততম সময়ে বিধিটি জারি করা হবে।’

“সুত্র: দৈনিক আজকের পত্রিকা”

এই সম্পর্কিত আরো পোস্ট দেখতে পারেন

কমেন্ট লিখুন