Home » পুলিশের স্বজনদেরও তথ্য তালাশ

পুলিশের স্বজনদেরও তথ্য তালাশ

0 মন্তব্য গুলি 2 জন দেখেছে 5 মিনিট পড়েছেন

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রস্তুতি জোরালো হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া সব পুলিশ সদস্যের তথ্য জোগাড় করছে পুলিশ সদর দপ্তর। তাদের সঙ্গে ‘রাজনৈতিক যোগ’ আছে কি না, সেদিকে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের স্বজনরাও নজরের বাইরে নয়। সপ্তাহখানেক আগে পুলিশের সব ইউনিটপ্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি, জেলা পুলিশ সুপার ও থানার ওসিদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।

বার্তায় বলা হয়েছে, তালাশে তথ্য গোপন করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করা হবে না। অবাধে ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশের প্রতিটি সদস্যকে সহযোগিতা করতে হবে। পুলিশের জন্য ৫০০ যানবাহন ও বিপুলসংখ্যক গোলাবারুদ কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এগুলো দেশের বাইরে থেকে আসবে।

পুলিশসংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দেড় লাখ পুলিশ কর্মকর্তা ও অন্য সদস্যদের বাছাই করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তাদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। প্রশিক্ষণ হবে জেলার পুলিশ লাইনে ও মহানগর এলাকায়। অতিরিক্ত আইজিপি, কনস্টেবল সবার প্রশিক্ষণ হবে। প্রথম দফায় পুলিশ সদর দপ্তরে অতিরিক্ত আইজিপিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রশিক্ষক তৈরি করা হবে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হবে। আর জেলাগুলোতে ১০ সেপ্টেম্বর প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে ডিসেম্বরে শেষ হবে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদেরও প্রশিক্ষণ হিসেবে রাখতে চাচ্ছে পুলিশ সদর দপ্তর। শিগগির নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেওয়া হবে।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। নির্বাচনে পুরোপুরি নিরপেক্ষ থাকবেন পুলিশ সদস্যরা। দ্রুত পুলিশের প্রশিক্ষণ শুরু হবে। নির্বাচনের আগে বড় ধরনের অভিযান শুরু হবে যাতে বিশৃঙ্খলা না হয়।’

banner

পুলিশে আতঙ্ক রয়েছে : সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশ অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়ে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। পুলিশের মহাপরিদর্শক, ডিএমপি কমিশনার ও র‌্যাব মহাপরিচালক দ্রুত সময়ে নিযুক্ত হন। পুলিশ সদস্যরা কর্মস্থলে যোগ দেন। ছাত্র-আন্দোলনের সময় ব্যাপক সহিংসতার ফলে পুলিশ সদস্যরা ট্রমায় পড়ে যান। এখনো আতঙ্ক কাজ করে বলে রাতের বেলায় পালাক্রমে ও জোট বেঁধে রাস্তায় টহল দেন। পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে পুলিশি কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে গত এক বছরে ব্যাপক সংস্কার ও উন্নয়নের ব্যবস্থা নিয়েছে বর্তমান সরকার। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস প্রতিষ্ঠা, পুলিশ আইন ও প্রবিধান সংশোধন, অবকাঠামো ও জনবল বৃদ্ধি, ফৌজদারি ও দেওয়ানি কার্যবিধি সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, পুলিশ মারণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে না। যদিও এ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে দেশ-বিদেশে। পুলিশও এ সিদ্ধান্ত মানতে পারছে না বলে নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন সদস্য জানিয়েছেন।

বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্তরা থাকবে বাইরে : পুলিশ সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুলিশে ব্যাপক নিয়োগ হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, দলীয় লোকজন পুলিশে চাকরি পেয়েছে। ছাত্র-জনতাকে হত্যার দায়ে দুই শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ইতিমধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় নড়েচেড়ে বসেছে অন্তর্বর্তী সরকার। পুলিশের ‘রাজনৈতিক কানেকশন’ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ সদস্যদের স্বজনরাও সন্দেহের বাইরে থাকছে না বলে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি নিরপেক্ষভাবে নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে। গত তিনটি নির্বাচনে যেসব কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের আগামী নির্বাচনে মোতায়েনের বাইরে থাকবে। তালাশের জন্য পুলিশের সব ইউনিটপ্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি, জেলা এসপি, থানার ওসি ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছে বার্তা দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ভোটের মাঠে যেসব সাব-ইন্সপেক্টর ও সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর এবং কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের পদায়নের জন্য তালিকা করা হচ্ছে। এ কারণে গ্রাম, থানা ও জেলা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা। পুলিশের জন্য সরঞ্জামাদি কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

তালাশের বার্তা : পুলিশ সদর দপ্তর পুলিশের সব ইউনিটে বার্তা পাঠিয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে, কর্মকর্তা ও অন্য সদস্যদের একাধিক প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। সেসবের মধ্যে রয়েছে বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, জন্মতারিখ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, বর্তমান পদ ও কর্মস্থল, মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের নাম ও ঠিকানা, আত্মীয়স্বজনের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, রাজনৈতিক ব্যক্তির পদপদবি, আগে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কি না, এলাকায় কোনো সামাজিক প্রতিষ্ঠানের পদে আছে কি না, আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকে শুরু করে বর্তমানে কী ধরনের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ইত্যাদি। এসব প্রশ্নের উত্তর সংগ্রহ করে ইমেইলে পুলিশ সদর দপ্তর ও ইউনিটপ্রধানদের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।

অনেকের মধ্যে ক্ষোভ : পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা পেয়ে গোয়েন্দারা তথ্য সংগ্রহ করছে। পাশাপাশি নির্দিষ্ট ফরমে তথ্য নিচ্ছে। এ নিয়ে পুলিশের অনেকের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশ না করে ডিএমপিতে কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশে চাকরি করছি পেশাদারিত্ব নিয়ে। যখন শপথ নিয়ে চাকরিতে এসেছি তখন দলমত কিছুই বুঝব না। কিন্তু রাজনৈতিক সরকার দায়িত্ব নিয়ে আমাদের ব্যবহার করে ফায়দা নিচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সবাই তো লেজুড়বৃত্তি করেনি। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে তারাও আক্রোশের শিকার হয়েছে। গত ১৬ বছর যারা ভালো স্থানে ছিল তারা এখন আওয়ামীবিরোধী সেজে ফায়দা নিচ্ছে।’ তারা বলেন, ‘আমাদের তথ্য সংগ্রহ করুক সমস্যা নেই। স্বজনদের কেন করতে হবে? তারা তো পুলিশে চাকরি করছে না।’ একই কথা বলেছেন ঢাকার বাইরে কর্মরত কয়েকজন পুলিশ সদস্য।

মনিটরিং করবেন ইউনিটপ্রধানরা : পুলিশ সূত্র জানায়, আন্দোলনের সময় পুলিশের স্থাপনা থেকে লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। নির্বাচনের আগেই লুট হওয়া সব আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে যৌথ বাহিনী বিশেষ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভোটের দিন বডিওর্ন ক্যামেরা, যানবাহনের ব্যবস্থা, হ্যান্ডমাইক, অস্ত্র, যানবাহন, যোগাযোগের সরঞ্জাম এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সরঞ্জাম কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ক্যামেরার সঙ্গে অত্যাধুনিক ডিভাইস সংযুক্ত করা হবে। ওই ডিভাইস পুলিশ সদর দপ্তর, নির্বাচন কমিশন, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় মনিটরিং করতে পারবে। ট্রমায় থাকা পুলিশ সদস্যদের মনোবল ফেরাতে কাউন্সেলিং করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গুজব ও ভুয়া তথ্য রোধ করতে ‘ন্যাশনাল ইনফরমেশন সেন্টার’ গঠন করবে পুলিশ সদর দপ্তর।

প্রশিক্ষণে যারা অংশ নেবে : জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সরকারের হাইকমান্ডের নির্দেশে অতিরিক্ত আইজিপি থেকে শুরু করে কনস্টেবলদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। আগামী সপ্তাহে পুলিশ সদর দপ্তরে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। অতিরিক্ত আইজিপিদের প্রশিক্ষক হিসেবে মনোনীত করা হবে। তারা প্রতিটি জেলায় পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ অন্য সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেবেন। মহানগর এলাকায় পুলিশ কমিশনারের মাধ্যমে অতিরিক্ত ও যুগ্ম কমিশনাররা পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেবেন।

নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ : পুলিশ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদেরও প্রশিক্ষক হিসেবে চাইছে পুলিশ সদর দপ্তর। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয় হওয়ায় প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচন কমিশনকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা অনুরোধ করব যাতে কমিশনের কর্মকর্তারা পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেন।’

সূত্রঃদেশ রুপান্তর

এই সম্পর্কিত আরো পোস্ট দেখতে পারেন

কমেন্ট লিখুন