Home » খুলনায় প্লট বানিয়ে রেলের জমি বিক্রি

খুলনায় প্লট বানিয়ে রেলের জমি বিক্রি

দখলদারদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে

0 মন্তব্য গুলি 8 জন দেখেছে 3 মিনিট পড়েছেন

খুলনায় রেলওয়ের জমি অবৈধভাবে দখল করে প্লট আকারে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জোড়াগেট মন্টুর কলোনি এলাকায় শুধু প্লট বিক্রিই নয়, এসব জমিতে ঘর তুলে বসবাস করা এবং অন্যের ঘর দখল করে ভাড়া আদায়ের ঘটনাও ঘটছে। গেল বছর গণ-অভ্যুত্থানের পর এ অপকর্ম নতুন মাত্রা পেয়েছে বলে জানা গেছে। তবে দখল বাণিজ্যের এ কাজে স্থানীয় বিএনপি পরিচয়ধারী কতিপয় নেতার নাম জড়িত থাকায় ভয়ে মুখ খুলছে না কেউ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জোড়াগেট মন্টুর কলোনি এলাকার মৌজা বানিয়া খামার, জেএল নং-৩, দাগ ১৫০১-এর আওতাধীন রেলওয়ের জমি অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে। ৩০ থেকে ৪০ হাত পরিমাণের প্রতিটি প্লট বিক্রি হচ্ছে ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকায়। ইতোমধ্যে মো. জাহিদুল ইসলাম, মো. সাইফুল ইসলাম এবং মুজগুন্নি এলাকার আলমগীর নামে তিনজন ক্রেতা তিনটি প্লট দখল করেছেন। তারা রাজনৈতিক পরিচয়ধারী কথিত বিক্রেতাদের কাছে যথাক্রমে ৫০ হাজার এবং ৭৫ হাজার টাকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

জমি ক্রেতা জাহিদুল ইসলাম রেলের জমি দখলের কথা স্বীকার করলেও টাকা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, বসবাসের জন্য তিনি রেলের পুকুরের কিছু জমি ভরাট করে নিয়েছেন এবং তার মতো অনেকেই এমনটা করেছেন। তবে রেলের প্রয়োজন হলে তিনি জমি ছেড়ে দিতে প্রস্তুত বলে জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জোড়াগেট এলাকায় বিএনপির ইউনিট কমিটির একটি অফিস রয়েছে, যার সভাপতি আব্বাস এবং সেক্রেটারি হায়দার। এ অফিসকে কেন্দ্র করে একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। নানা বিষয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার ও দলবাজি, চাঁদাবাজি ও বিচার-সালিশের নামে এ ইউনিট অফিসে দেনদরবার চলে বলে অভিযোগ রয়েছে।

banner

সদর থানা বিএনপির সদস্য মনির খান ওরফে মইন্না, ২১নং ওয়ার্ড যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রবি ওরফে ফর্মা রবি এবং ২১নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য মো. হেলালসহ একটি চক্র রেলওয়ের জমি বিক্রি ও দখলের সঙ্গে জড়িত বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। মূলত তাদেরই অর্থ দিয়ে জমি দখল, ভরাট বা সেখানে ঘর তুলেছেন ক্রেতারা।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মনির খান, রবি ও হেলাল তাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারা বলেন, রেলের জমি অনেকেই দখল করে বসবাস করছেন, তবে তারা এর সঙ্গে জড়িত নন। রেলের জমি দখল-বেদখলের বিষয় নিয়ে তৎপর রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এরপর থেকে গা ঢাকা দিয়ে আছে দখলবাজ চক্রটি। গত কয়েকদিন ওই এলাকায় গিয়ে মনির, রবি ও হেলাল কাউকেই পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার দুপুরে রবির বাড়িতে গেলে তার ভাই বাপী এসে বলেন, দখলবাজির সঙ্গে আমার ভাই জড়িত নন। আমরা আওয়ামী লীগ আমলে চরম নির্যাতনের শিকার। এখন তারাই নেপথ্যে থেকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে মানুষকে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জোড়াগেট এলাকায় ইতঃপূর্বে কাবিল শেখের ছেলে মো. আজিম উদ্দিন রেলের জমি দখল করেন। পরে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তাকে ছয় হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করেন। এর বাইরেও স্থানীয় ইউনুসের গ্যারেজ, রশিদের দোকান, আলামিনের হোটেল এবং জব্বার কমান্ডারের দোকান ও পুকুরের জমি ইতোমধ্যে দখল হয়ে গেছে। এমনকি জোড়াগেটস্থ কেসিসির কাঁচাবাজারের আড়ত এবং ট্রাক স্ট্যান্ডকেন্দ্রিক ১০-১৫টি দোকান থেকেও প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের চাঁদা তোলা হয়।

এ বিষয়ে রেলওয়ের খুলনার ফিল্ড কর্মকর্তা (কানুনগো) মো. সহিদুজ্জামান জানান, রেলের জমি দখল করে প্লট আকারে বিক্রির বিষয়টি জানতে পেরেছি। পরে আমরা খোঁজখবর নিই। এ ঘটনায় উচ্ছেদের জন্য রেলওয়ে পাকশীর ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছি। একই সঙ্গে খুলনা সদর থানায় আলমগীর হোসেন, জাহিদুল ইসলাম ও রমজান মিস্ত্রির বিরুদ্ধে দখলের অভিযোগ এনে মামলা করেছি। দখলদারের বিষয়ে আমরা কোনো ছাড় দিচ্ছি না।

“সুত্র: দৈনিক যুগান্তর”

এই সম্পর্কিত আরো পোস্ট দেখতে পারেন

কমেন্ট লিখুন