Home » কোটি টাকায় ‘ডিবি হারুনের’ রিসোর্ট পাহারা দিচ্ছেন বিএনপি নেতা!

কোটি টাকায় ‘ডিবি হারুনের’ রিসোর্ট পাহারা দিচ্ছেন বিএনপি নেতা!

0 মন্তব্য গুলি 2 জন দেখেছে 3 মিনিট পড়েছেন

এক বছর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারা দেশের মতো কিশোরগঞ্জেও ছাত্র-জনতা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বাড়িঘর ও স্থাপনায় ভাঙচুর চালায়। হামলার তালিকায় ছিল সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাসভবন ও গ্রামের বাড়ি, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদ এবং সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের বাড়ি। মিঠামইন সদরে আবদুল হামিদের ভাতিজা শরীফ কামালের একটি রিসোর্টও ভাঙচুরের শিকার হয়। কিন্তু অক্ষত রয়ে গেছে মিঠামইন উপজেলার হোসেনপুর হাওরে অবস্থিত হারুন অর রশিদের ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’।

স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, এক কোটি ত্রিশ লাখ টাকার বিনিময়ে রিসোর্ট রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছেন মিঠামইন উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীর।

এই রিসোর্টের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের মধ্যে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ রয়েছে। অভিযোগ, কৃষকদের জমি জোরপূর্বক দখল করে এটি নির্মিত হয়েছে।

উপজেলা যুবদলের ১ নম্বর সদস্য মাহফুজ আহমেদ দাবি করেন, ৫ আগস্টের কিছুদিন পর হারুনের চাচা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঘাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোখলেছুর রহমান ভূঞা এক ব্যাগভর্তি টাকা জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীরের খামারবাড়িতে পৌঁছে দেন। তিনি বলেন, ‘সেখানে আমিও উপস্থিত ছিলাম।’ তার অভিযোগ, ওই টাকার বিনিময়ে রিসোর্ট রক্ষার চুক্তি হয়।

banner

শুধু তাই নয়, জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীর টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের লোকজনকেও রক্ষা করছেন। এলাকার বাসিন্দা ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘এই রিসোর্টের কোনো প্রয়োজন আমাদের এখানে নেই। বর্ষাকালে এখানে অসামাজিক কার্যকলাপ হয়। আমরা গ্রামের মানুষ, আমাদের প্রধান জীবিকা কৃষিকাজ ও মাছ ধরা। জমি দখল করে এই রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে। অনেক কৃষক তাদের ফসলি জমি হারিয়েছেন। জমি হারানো কৃষকরা কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে বিচার চেয়েছেন। আমাদের দাবি, রিসোর্ট ভেঙে গরিব কৃষকদের জমি ফেরত দেওয়া হোক।’

আফাজ মিয়া নামে আরেকজন জানান, টাকা লেনদেনের গুঞ্জন সবার কানে পৌঁছেছে, কিন্তু মামলা ও ভয়ভীতির মাধ্যমে মানুষকে রিসোর্টে হামলা থেকে বিরত রাখা হয়েছে। ফলে এই রিসোর্ট অক্ষত রয়েছে।

ঘাগড়া ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী রাকিব বলেন, ‘আজ ফ্যাসিস্ট হাসিনার লোকেরা বিএনপির সঙ্গে যোগসাজশে কাজ করছে। দলের নাম ব্যবহার করে সবকিছু হচ্ছে। ১৬ বছরের ত্যাগী নেতাকর্মীরা আজ অবহেলিত ও সবকিছু থেকে বঞ্চিত।’

হাওরের সন্তান গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-অর্থ সম্পাদক মো. মুখলেছুর রহমান আকন্দ বলেন, ‘টাকা লেনদেনের কথা লোকমুখে শোনা যাচ্ছে। হয়তো এই কারণেই রিসোর্টে কোনো হামলা হয়নি, অথবা স্থানীয় এলাকাবাসী পারিবারিক বিরোধে জড়াতে চায়নি।’

উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের দীলিপ চৌধুরী বলেন, ‘আমার এক একর দশ শতাংশ জমি জোরপূর্বক দখল করা হয়েছে। ডিবি হারুন কোনো টাকা দেননি।’

মানিক মিয়া নামে এক ব্যক্তি দাবি করেন, পাঁচ একর জমির বিনিময়ে পাঁচ কোটি টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি কোনো অর্থ পাননি।

অবশ্য জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে হারুনের চাচা, আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান ভূঞা বলেন, ‘আমি নিজেই একাধিক মামলার আসামি। জেল খেটে এসেছি। রিসোর্ট রক্ষায় টাকা দেওয়ার বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘যে টাকা নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, মাহফুজ তার প্রমাণ দিক। আমি হারুনের রিসোর্ট রক্ষার দায়িত্ব নিইনি। এগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট।’

প্রেসিডেন্ট রিসোর্টে মাওলা আলী ইন্টারন্যাশনালের কার্যক্রম : গত রবিবার দুপুরে প্রেসিডেন্ট রিসোর্টে গিয়ে দেখা যায়, মাওলা আলী ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান ৮ আগস্ট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেখানে কার্যক্রম শুরু করেছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির নিয়োগপ্রাপ্ত ১৬ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী রিসোর্টের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন।

প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্বপন চিশতী জানান, তারা মার্কেন্টাইল ব্যাংকের কাছ থেকে তিন বছরের জন্য রিসোর্টটি ইজারা নিয়েছেন এবং ইতিমধ্যে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। তবে কত টাকায় ইজারা নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি জানাতে অস্বীকৃতি জানান।

“সুত্র: দৈনিক দেশ রুপান্তর”

এই সম্পর্কিত আরো পোস্ট দেখতে পারেন

কমেন্ট লিখুন