বাংলাদেশের মানুষ গত তিন নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচনে ভোট দিতে মানুষ উদগ্রীব হয়ে আছে। অন্তর্বর্তী সরকার ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী নির্বাচন নিশ্চিত করবে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি সাইড ইভেন্টে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও উন্নয়ন সহযোগী সংগঠন এবং সংস্থার প্রধানদের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। এসব বৈঠকে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গ উঠে আসে।
নিউ ইয়র্কে মঙ্গলবার প্যারিসের মেয়র অ্যানে হিদালগোর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। বৈঠকে উভয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, ক্রীড়া, সামাজিক উদ্যোগ এবং বিশ্বমানবিক সংকট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। সাক্ষাৎকালে দুই নেতা বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন, অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে চলমান সংস্কার কার্যক্রম, ক্রীড়া ও অলিম্পিকে সামাজিক ব্যবসার সম্ভাবনা এবং বৈশ্বিক শরণার্থী সংকট, বিশেষ করে রোহিঙ্গা মানবিক সংকট সম্পর্কে মতবিনিময় করেন।
এ সময় ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী সাধারণ নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে। এটি শুধু একটি নির্বাচন নয়, এটি দেশের গণতন্ত্রে একটি নতুন যুগের সূচনা করবে।’
অধ্যাপক ইউনূস প্যারিস অলিম্পিককে সামাজিক ব্যবসায় উদ্যোগ রূপান্তর করতে নেতৃত্ব দেন। প্রধান উপদেষ্টা ভবিষ্যতে অনুষ্ঠিত সব অলিম্পিক, বিশেষত আসন্ন লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক ও কার্বন নিরপেক্ষ করার ওপর জোর দেন।
মেয়র হিদালগো এই সংকটময় সময়ে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি আপনার নেতৃত্বকে গভীরভাবে সম্মান করি। আপনি অসাধারণ কাজ করেছেন এবং আপনার অঙ্গীকার মানবতার জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।’
উভয় নেতা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জরুরি তহবিল বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত এক মিলিয়নের বেশি মানুষের জীবনমান উন্নয়নের আহ্বান জানান।
মেয়র হিদালগোকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের জন্য আন্তরিক আমন্ত্রণ জানান ড. ইউনূস, যা দুই দেশের মধ্যে মানবিক ও সামাজিক ব্যবসায়িক সহযোগিতাকে আরো শক্তিশালী করবে। বৈঠকে এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে বৈঠক
জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস মঙ্গলবার বিশ্বসংস্থাটির সদর দপ্তরে একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী, নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক, চিলির সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান ও উরুগুয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন এবং বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আলোচনা করেন।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলাপে ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন হবে স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য। তিনি আগামী নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি আশা করেন।
প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটির অবদানের প্রশংসা করেন এবং কয়েক বছর আগে ভাষাশহীদ দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার স্মৃতি তুলে ধরেন।
নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমার সঙ্গে বৈঠকে তারা স্বাস্থ্যবীমা সম্প্রসারণ, জীবন ও স্বাস্থ্যবীমা, দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় ও পেনশন ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন। ড. ইউনূস মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যসেবার জন্য ঋণ সহজলভ্য করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন এবং ডিজিটাল স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে গ্রামীণ নারীদের শীর্ষ চিকিৎসকদের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব দেন।
তিনি বৈশ্বিক ওষুধশিল্প পুনর্গঠনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সামাজিক ব্যবসায় ওষুধ প্রস্তুতকারকরা উৎপাদিত টিকা সর্বদা সুলভ রাখবে।’
রানি ম্যাক্সিমাকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান ড. ইউনূস। বৈঠকে প্রিন্সেস অব অরেঞ্জ রাজকুমারী কাথারিনা-আমালিয়াও উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. তেদরস আধানোম গেব্রিয়াসিসের সঙ্গে বৈঠকে ড. ইউনূস যৌথ অগ্রাধিকার ও সাম্প্রতিক বৈশ্বিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেন।
দিনের শেষ পর্যায়ে তিনি ‘ফ্যাশন ফর ডেভেলপমেন্ট’ এবং সামাজিক উদ্ভাবনে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতাবিষয়ক দুটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
সামাজিক উদ্ভাবনবিষয়ক বৈঠক
ড. ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত সামাজিক উদ্ভাবনবিষয়ক বৈঠকে অংশ নেন। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল ‘সামাজিক উদ্ভাবনের মাধ্যমে অর্থায়ন কার্যকর করা’। এতে সরকারি-বেসরকারি খাতের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম বৈঠকটির আয়োজন করে। এতে সামাজিক উদ্ভাবন ও অর্থায়নের নতুন পথ এবং সুযোগ নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা ধারণা বিনিময় ও সহযোগিতার ওপর জোর দেন।
সূত্র: আমার দেশ।