Home » ঐকমত্য না হলে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার

ঐকমত্য না হলে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন

0 মন্তব্য গুলি 3 জন দেখেছে 3 মিনিট পড়েছেন

রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে না এলে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি জানাতে দলগুলোকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিত মতামত দিতে বলা হয়েছে। সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনস্থ কমিশন কার্যালয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফা বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে দলগুলোকে এ কথা জানানো হয়েছে। বৈঠকে কিছু বিষয়ে দলগুলোকে লিখিত মতামত দিতে বলা হয়েছে।

১৮টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈঠকে দলগুলো সনদ বাস্তবায়নে গণপরিষদ, সংবিধান সংস্কার সভা, গণভোট ও অধ্যাদেশ জারির ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি জানাতে দলগুলোকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিত মতামত দিতে বলা হয়েছে। এ সময় জানানো হয়েছে, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হলে সিদ্ধান্ত দেবে সরকার। প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া মতামত সমন্বয় করে সরকারের কাছে সুপারিশ তুলে ধরবে। সনদ কীভাবে কার্যকর করা হবে, সে সিদ্ধান্ত সরকারই নেবে।

রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মুশতাক হোসেন, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মিজানুর রহমান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ১২ দলীয় জোটের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, বাসদের (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আছমদ আবদুল কাদের, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) মহাসচিব মোমিনুল আমিন, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, জাকের পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার, নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল মাজেদ আতহারী, লেবার পার্টির চেয়্যারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, ভাসানী জনশক্তি পার্টির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বাবলু, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুর রকিব প্রমুখ।

banner

বৈঠক শেষে সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স জানান, আমাদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। সেখানে খসড়া সনদ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে যতদূর সম্ভব লিখিত মতামতগুলোর প্রতিফলন ঘটনার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়। একই সঙ্গে সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে মতামত জানানোর জন্য বলা হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, আপনাদের মতামত পেলে সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকারকে বিস্তারিত জানানো হবে। সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা বলেছি, যেভাবে আলোচনা হয়েছে, সেভাবে বিষয়গুলো না রাখলে অনেকেই হয়তো সনদে স্বাক্ষর করবে না। সংবিধানের চার মূলনীতি বহাল রাখার বিষয়টি আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছি।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ২০ মার্চ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত দুই দফায় ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে। সেসব আলোচনা থেকে প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে ১৬ আগস্ট জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর খসড়া উপস্থাপন করে কমিশন।

খসড়াটিতে ভূমিকা, বেশিরভাগ দল-সমর্থিত ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের তালিকা এবং একটি অঙ্গীকারনামা রয়েছে। জুলাই সনদের খসড়ায় ২৩ আগস্ট পর্যন্ত ২৯টি দল মতামত জানিয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই খসড়া সনদের ভূমিকার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং অঙ্গীকারনামার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপত্তি ও সুপারিশ জানিয়েছে। বিএনপি সনদের অঙ্গীকারে একমত নয়। জামায়াত সংবিধানের উপরে সনদের প্রাধান্য ও সনদ নিয়ে আদালতের প্রশ্ন তোলার সুযোগ রহিতের পক্ষে। জামায়াতের দাবি, নির্বাচনের আগেই সংবিধান সংস্কারসহ সনদের বাস্তবায়ন করতে হবে। জামায়াত সংসদের উভয় কক্ষেই পিআর চায়। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সংবিধানের ঊর্ধ্বে সনদের প্রাধান্যের বিরোধী হলেও ভোটের আগে সংস্কার এবং গণপরিষদে তা অনুমোদন চায়। ইসলামী আন্দোলনও গণভোটের মাধ্যমে সনদের বাস্তবায়ন চায়। বিএনপি সনদের অধীনে নির্বাচন বা গণভোটের বিরোধী। সিপিবিসহ বামপন্থি কয়েকটি দল বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতি বহাল ও সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের পক্ষে। এসব মতবিরোধে জুলাই সনদ স্বাক্ষর ও তা বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গত ১২ ফেব্রুয়ারি গঠিত সাত সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যক্রম শুরু করে। ছয় মাস মেয়াদ শেষে কমিশনের মেয়াদ আরও এক মাস বাড়ানো হয়। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর কমিশনের বর্ধিত মেয়াদ শেষ হবে।

“সুত্র: দৈনিক সময়ের আলো”

এই সম্পর্কিত আরো পোস্ট দেখতে পারেন

কমেন্ট লিখুন