Home » এত বেশি সুদে ব্যবসা পরিচালনা কঠিন

এত বেশি সুদে ব্যবসা পরিচালনা কঠিন

0 মন্তব্য গুলি 5 জন দেখেছে 3 মিনিট পড়েছেন

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর উপলক্ষে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও মীর গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর নাসির হোসেনের সঙ্গে কথা বলেছে সমকাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জসিম উদ্দিন বাদল

সমকাল: অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে মোটাদাগে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

মীর নাসির হোসেন: বিগত সময়ে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে সমস্যা ছিল। ডলার নিয়ে খুব জটিলতায় ছিলেন ব্যবসায়ীরা। ডলারের অভাবে অনেকেই সময়মতো এলসি খুলতে পারেননি। এই সরকারের সময় ডলার সংকট অনেকাংশে দূর হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনেক কমে গিয়েছিল। সেখান থেকে এখন মোটামুটি সন্তোষজনক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রাখা খুব দরকার। রিজার্ভ যেন না কমে, সেদিকে নজরদারি রাখতে হবে। বিগত সময় হু-হু করে মূল্যস্ফীতি বেড়েছিল। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে সরকার। ইতোমধ্যে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমতে দেখা গেছে।

সমকাল: ব্যাংকিং খাত নিয়ে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই।

banner

মীর নাসির হোসেন: বাংলাদেশ ব্যাংকের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বর্তমানে ঋণের সুদহার অনেক বেশি। এত বেশি পরিমাণ সুদ দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করা কঠিন। ঋণ শ্রেণিকরণ নীতিমালায় পরিবর্তন আনার কারণে বিনিয়োগকারীরা দ্রুতই খেলাপি হয়ে পড়ছেন। খেলাপি হলে বিনিয়োগে সমস্যা হয়। এখানে বাস্তবতার নিরিখে পদক্ষেপ দরকার।

সমকাল: গেল বছর গণঅভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন কারখানায় ভাঙচুরসহ নানা ঘটনা ঘটেছে। সেই পরিস্থিতি কেটেছে?

মীর নাসির হোসেন: আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভয়ংকর ঘটনা ঘটে কিছু কারখানায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বল অবস্থানের কারণে তখন কারখানার মালিকরা আতঙ্কে দিন পার করেছেন। সেই পরিস্থিতির অনেকটা উত্তরণ ঘটেছে। তার পরও সরকারকে সতর্ক অবস্থানে থাকা দরকার। শিল্প পুলিশসহ বাহিনীকে আরও সক্রিয় করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের নির্বিঘ্নে উৎপাদন সচল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

সমকাল: বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ পরিস্থিতি কেমন?

মীর নাসির হোসেন: বিনিয়োগ একেবারেই হয়নি, এমন নয়। তবে যে কোনো দেশে রাজনৈতিক সরকার না থাকলে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে আগ্রহ থাকে কম। কারণ বিনিয়োগ দীর্ঘ মেয়াদে করা হয়। নীতিসহায়তাসহ নানা বিষয়ে চিন্তা করে উদ্যোক্তারা সিদ্ধান্ত নেন। বিনিয়োগকারীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি। পর্যাপ্ত গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে ধুঁকছে কারখানাগুলো। বিশেষ করে গ্যাস সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। সরকারকে বুঝতে হবে, শিল্পকারখানা না চললে অর্থনীতির চাকা ঘুরবে না।

সমকাল: সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। এতে বাংলাদেশের রপ্তানিতে কী প্রভাব পড়তে পারে?

মীর নাসির হোসেন: এ বিষয়ে সরকার দফায় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করেছে, যা ভালো দিক। যুক্তরাষ্ট্র শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের বহু দেশেই শুল্কের খড়্গ বসিয়েছে। আমার মনে হয়, নতুন শুল্ক বাংলাদেশের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। কারণ কয়েকটি প্রতিযোগী দেশে বাংলাদেশের চেয়েও বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের ভয়ের কারণ নেই। ভারত, চীনসহ কিছু দেশের রপ্তানি আদেশ বাংলাদেশে আসতে পারে। তাছাড়া বাংলাদেশের সস্তা শ্রম বাড়তি সুবিধা যোগ করবে। তবে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর রপ্তানিতে অনেক সুবিধা কমে যাবে। সেই প্রস্তুতি এখন থেকে নিতে হবে।

সমকাল: অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের সময়সূচি জানিয়ে দিয়েছে। তারা কী দীর্ঘ মেয়াদে কোনো নীতিসহায়তা দেবে?

মীর নাসির হোসেন: হ্যাঁ, এটি ঠিক বলেছেন। যেহেতু সরকার নির্বাচনের সময় জানিয়েছে, তারা দীর্ঘ মেয়াদে নীতি প্রণয়নের দিকে হয়তো যাবে না। নতুন কোনো উদ্যোগও নেবে না। বিনিয়োগবান্ধব যেসব স্বল্প মেয়াদে সুবিধা দেওয়া সম্ভব, সেগুলো দিতে হবে।

সমকাল: সব মিলিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্জন কেমন?

মীর নাসির হোসেন: সরকারের অর্জন আছে। পাশাপাশি দুর্নামও আছে। যেহেতু একটা বড় ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তারা দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন, তাই ভালো-মন্দ দুই দিকই থাকবে।

সূত্রঃ সমকাল

এই সম্পর্কিত আরো পোস্ট দেখতে পারেন

কমেন্ট লিখুন