Home » উদ্ভাবনী সেবা ও সিএসআরে এগিয়ে প্রাইম ব্যাংক

উদ্ভাবনী সেবা ও সিএসআরে এগিয়ে প্রাইম ব্যাংক

0 মন্তব্য গুলি 4 জন দেখেছে 3 মিনিট পড়েছেন

১৯৯৫ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা অনুসরণ করে যাচ্ছে বেসরকারি খাতের প্রাইম ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্যামেলস রেটিংয়েও একবার শীর্ষ ব্যাংকের মর্যাদা পায় ব্যাংকটি। ব্যাংকটির আর্থিক ভিত্তিও বেশ শক্তিশালী।

শুরু থেকে ব্যাংকিংয়ে নতুন পণ্য-সেবা চালু ও সেবার মানে পারদর্শিতা দেখিয়ে আসছে প্রাইম ব্যাংক। গত ৩০ বছরে ব্যাংকটির গ্রাহকসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১১ লাখে। গত আট বছরে আমানত ও ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। পাঁচ বছরে নিট মুনাফা বেড়ে হয়েছে চার গুণের বেশি। শুধু তা–ই নয়, করপোরেট ব্যাংক নামে পরিচিতি থাকলেও প্রাইম ব্যাংক গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছে টেকসই অর্থায়নে। সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের (সিএসআরে) মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ব্যাংকটি। ফলে পরপর তিন বছর টেকসই ব্যাংকিংয়ের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে প্রাইম ব্যাংক।

দেশের কয়েকজন ব্যবসায়ীর উদ্যোগে ১৯৯৫ সালে বেসরকারি খাতের প্রাইম ব্যাংক যাত্রা শুরু করে। এখন প্রথম প্রজন্মের পাশাপাশি এসব গ্রুপের দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধিরা ব্যাংকটির পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, যা ব্যাংকটিকে আরও প্রগতিশীল করে তুলেছে।

খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ব্যাংকটির পরিচালকদের বেশির ভাগই প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হওয়ায় ব্যাংকের দৈনন্দিন কার্যক্রমে তেমন হস্তক্ষেপ নেই। ফলে ব্যাংকটি সুশাসনে উত্তম চর্চা অনুসরণ করতে পারে।

ব্যাংক–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্যাংকটির ১১ লাখ ৬২ হাজার গ্রাহকের মধ্যে প্রায় ৪ লাখ নারী। আর ২ হাজার ৯৬৮ জন কর্মকর্তার মধ্যে ৭১০ জন নারী। ব্যাংকটির অনেক বিভাগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারী কর্মকর্তারা, যা ব্যাংক খাতে বেশ কম। নারী কর্মীর হারের দিক থেকে দেশের ব্যাংক খাতে মধ্যে সর্বোচ্চ নারী কর্মী প্রাইম ব্যাংকে।

ব্যাংকটির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে ব্যাংকটির আমানত ছিল ৮ হাজার ৮০২ কোটি টাকা, ২০২৪ সালের শেষে যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকায়। প্রতিষ্ঠার প্রথম ২১ বছরে ব্যাংকটির আমানত যত হয়েছিল, তার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে পরের ৯ বছরে। ঋণ বিতরণও বেড়েছে সমানতালে। ২০০৮ সালে ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা, ২০২৪ সালে যা বেড়ে ৩৪ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের হার ৪ দশমিক ২২ শতাংশ। ২০০৮ সালে ব্যাংকটি মুনাফা করেছিল ১২৩ কোটি টাকা, যা ২০১১ সালে ৩৬৩ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। তবে বড় কিছু ঋণ খারাপ হওয়ায় ব্যাংকটির মুনাফায় বড় ধাক্কা খায়। ফলে ২০১৩ সালে মুনাফা কমে ১৮২ কোটি টাকায় নামে। তা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ ব্যাংক নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেয়। তাতে ২০১৬ সালে মুনাফা আবার বেড়ে দাঁড়ায় ২৩৪ কোটি টাকায়। সর্বশেষ ২০২৪ সালে ব্যাংকটির মুনাফা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৪৫ কোটি টাকায়। গত বছর ব্যাংকটির সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ৮১১ কোটি টাকায়। প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে সম্পদমূল্য ৩৪ টাকা। আর শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস ৬ টাকা ৫৮ পয়সা।

বর্তমানে দেশজুড়ে প্রাইম ব্যাংকের ১৪৭টি শাখা, ১৫৮টি এটিএম বুথ ও ১৫২টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট রয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যাংকটি বেশ এগিয়ে আছে। বর্তমানে বিশ্বের ৬৪ দেশের ৩০৫টি ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংকটির বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য চুক্তি রয়েছে। অনলাইনে লেনদেনে ব্যাংকটির আছে নিজস্ব অ্যাপ মাই প্রাইম। এতে নিবন্ধিত গ্রাহক এখন আড়াই লাখ, বছরে লেনদেন হয় ৬০ লাখ বার। ব্যাংকটির রয়েছে ইসলামিক ব্যাংকিং সেবা হাসানাহ।

করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) অর্থ ব্যবহারেও প্রাইম ব্যাংক বৈচিত্র্য দেখিয়েছে। ব্যাংকটির রয়েছে নিজস্ব চক্ষু হাসপাতাল, ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ও নার্সিং কলেজ। ২০০৭ সাল থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিয়ে আসছে ব্যাংকটি। প্রাইম ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে ঘরোয়া ক্রিকেটে দল গঠন ও প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে, যা তরুণ খেলোয়াড়দের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। প্রাইম ব্যাংকের সামাজিক দায়বদ্ধতা উদ্যোগগুলো শুধু খেলাধুলা নয়, সমাজের নানা স্তরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

প্রাইম ব্যাংকের দেওয়া ঋণের বড় অংশই গেছে করপোরেটদের কাছে। ব্যাংকটির ঋণের প্রায় ৬০ শতাংশ পেয়েছে বড় শিল্প গ্রুপগুলো। যাদের বড় অংশ উৎপাদন খাতের সঙ্গে যুক্ত। ১৫ শতাংশ ঋণ ভোক্তা ও এসএমই খাতে এবং ৯ শতাংশ ঋণ গেছে সেবা খাতে। ব্যাংকটি এখন ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে ঋণ বিতরণে জোর দিচ্ছে। পাশাপাশি ভোক্তা ঋণেও নজর বাড়াচ্ছে।

সূত্রঃ প্রথম আলো

এই সম্পর্কিত আরো পোস্ট দেখতে পারেন

কমেন্ট লিখুন