Home » আমি আছি থাকব, ভালোবেসে মরব…

আমি আছি থাকব, ভালোবেসে মরব…

কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন

0 মন্তব্য গুলি 3 জন দেখেছে 5 মিনিট পড়েছেন

বাংলাদেশের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের প্রায় ১৬ হাজার গানের মধ্যে একটি গানের কলি হচ্ছে, ‘আমি আছি থাকব/ভালোবেসে মরব’। তিনি দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছেন। এখন তিনি সুস্থ আছেন।

কেমন আছেন? 
আলহামদুল্লিাহ, ভালো আছি।

আপনার তো ৪ সেপ্টেম্বর জন্মদিন। আপনাকে জন্মদিনের আগাম শুভেচ্ছা। 
হ্যাঁ, জন্মদিন উপলক্ষে বেসরকারি একটা চ্যানেল আমার ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছে। আবার শিল্পকলা একাডেমি আমাকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে।

কেমন লাগছে আপনার জন্মদিনকে ঘিরে। 
খুব ভালো লাগছে। বিশেষ করে আমার ভক্ত-শ্রোতারা যে আমাকে সম্মান দেখাচ্ছে, তা আমার কাছে পরম পাওয়া।

banner

এবার আপনার গানের প্রসঙ্গে আসি। আপনি তো সুরের জাদুতে শ্রোতাদের মন ভরিয়ে দেন। আবার ছবিতে যখন গান করেন মনে হয়, সেই নায়িকার কণ্ঠ প্রতিধ্বনি হয়। এই যেমন ময়নামতি ছবিতে ‘ফুলের মালা পরিয়ে দিলে’ গানটি শুনে মনে হয় যেন কবরীর কণ্ঠ। এটা হলো কীভাবে? 
দেখেন, আমি যখন কোনো ছবিতে কণ্ঠ দেই তখন সেই নায়িকার কণ্ঠ মিলিয়ে দেখি। তবে সুর ও গানের বাণী আমাকে সেখানে পৌঁছে দেয়।

আবার ‘আলোর মিছিল’ ছবিতে ‘এই পৃথিবীর পরে/কত ফুল ফোটে আর ঝরে’ গানটি যখন শুনি মনে হয় ববিতা গাইছেন। শাবানা অভিনীত ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই’ গানে কণ্ঠের বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। 
আসলে আমি যে বললাম, আমি চেষ্টা করি তাদের কণ্ঠের কাছাকাছি আসতে। সব তো সুর আর বাণীর খেলা। শুধু কণ্ঠকে মানিয়ে নেওয়া।

আপনার রেডিওতে গাওয়া প্রথম আধুনিক গানের কথা মনে আছে? 
কিছু কিছু তো মনে আছে। এই যেমন ‘রাত্রি ঘনায় আঁধারের ডানা মেলে/আমি এই তো আমি সেই তো দিতে নেই তো কিছু বাকি’।

আপনি প্রথম গান গেয়ে কত টাকা পেয়েছিলেন সম্মানী হিসেবে?
আমি প্রথম গান গেয়ে পাই ১০ টাকা। সেই টাকা আবার মাকে দিয়েছি। কারণ আমার তো সে সময় কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিল না।

আপনার প্রথম প্লেব্যাক কি ‘নতুন সুর’ ছবিতে? 
সে সময় শিশুশিল্পী হিসেবে গান গেয়েছিলাম। আমি কিন্তু তখন শিশুশিল্পী হিসেবে অনেক গান গেয়েছি। ‘নতুন সুর’ ছবিতে প্রথম গান হলেও, আমি ‘আগুন নিয়ে খেলা’ ছবিতে প্রথম বড়দের জন্য গান করি।

কণ্ঠের ভ্যারিয়েশন আনার ব্যাপারে আপনার গোপন তথ্য কী? 
না, এখানে গোপন তথ্য বলে কিছু নেই। সব আল্লাহর দান। তিনি আমার যে কণ্ঠ দিয়েছেন, সেই কণ্ঠেই আমি গান গাই। এখানে কোনো রহস্য নেই। তবে হ্যাঁ, ছবিতে গান গাওয়ার সময় অনেক সময় কে লিপসিং করবেন তা অনুধাবন করার চেষ্টা করি। সবসময় চেষ্টা করি গানের কলি আর সুরের সঙ্গে একেবারে মিশে যেতে। তা না হলে আমি সেই গানের চিত্র ফুটিয়ে তুলতে পারব না।

আপনি তো অনেক পুরুষ কণ্ঠশিল্পীর সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে গান গেয়েছেন।
হ্যাঁ, সবার সঙ্গে গান গেয়েছি। সবাই আমার চোখে সমান।

সাধারণ মেয়ে ছবিতে আপনি খন্দকার ফারুক আহমেদের সঙ্গে ‘তুমি কেন বোঝো না/কাছে আসিতে চরণ লাজে-এই গানটি গাওয়ার সময় মনে হচ্ছিল আপনি যেন নিজেই এক নায়িকা, এর রহস্য আছে কি? 
(মুখে হাসি দিয়ে) ওই যে বললাম, আমি মিশে যাই গানে আর চিত্রে।

আপনি তো ছবির সংগীত পরিচালনায় হাত দিয়েছিলেন।
হ্যাঁ, কবরীর অনুরোধে একটি ছবির কাজে হাত দিয়েছিলাম। নতুন কয়েকজন শিল্পীকে দিয়ে গান গাইয়ে ছিলাম। কিন্তু এখন সেই ছবির ভাগ্যে কী আছে জানি না।

এর আগে ফেরদৌসী রহমান ‘মেঘের অনেক রং’ নামে একটি ছবিতে সংগীত পরিচালনা করেছিলেন। সেই ছবিতে কিন্তু কোনো গান ছিল না। শুধু আবহ সংগীত ছিল।
আমি তো ছবির কাজ শেষ করতে পারলাম না। গান শেষ হলে তো অবশ্যই আবহ সংগীতের কাজে হাত দিতাম।

আপনি মনে হয় জানেন একই দিনে বিখ্যাত গীতিকার, ছবির পরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মৃত্যুবার্ষিকী। 
হ্যাঁ, জানি। গাজী ভাইয়ের লেখা কত গান গেয়েছি তার কোনো হিসাব নেই। উনার মতো এত বড় মাপের গীতিকার হারানো আমাদের জন্য সত্যিই বড় দুঃখের। উনার লেখা কত গান গেয়েছি তার কোনো হিসাব নেই। গাজী ভাইয়ের শব্দচয়ন থেকে শুরু করে গানের চিত্রকল্প অসাধারণ। আমি তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

আপনার বর্ণাঢ্য শিল্পী জীবনে তো অনেক গীতিকারের লেখা আর সুরকারের সুর দেওয়া গান গেয়েছেন। আপনার দৃষ্টিতে কার কী, কোন ধরনের বৈশিষ্ট্য-তা বলবেন কি?
দেখেন সবাই যে যার ক্ষেত্রে নিজস্ব ধারা তৈরি করেছেন। আর প্রত্যেকে তার নিজস্ব বলয়ে প্রতিষ্ঠিত। সবার লেখা গান ও সুরে আমি গেয়েছি। এমন কোনো গীতিকার, সুরকার নেই, যার লেখা ও সুরে গান গাইনি।

মাসুদ করিমের লেখা ‘সন্ধ্যার ছায়া নামে’ গানটি তো অপূর্ব। আবার ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই’ গানটির ছবিতে লিপসিং করেছেন শাবানা। তখন মনে হয়নি সাবিনা ইয়াসমিন গাইছেন। এর কারণ কী? 
ওই যে আগে বললাম, কথা আর সুরে মিশে যাওয়া। যেন চোখের সামনে একটা চিত্র ফুটে উঠে।

এই গান তো মাসুদ করিমের লেখা। 
আমি কাউকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করতে চাই না। আপনি যে গানের কথা বললেন তিনি তো সত্যি ভালো উচ্চমার্গীয় গীতিকার। দেখেন, মো. রফিকুজ্জামান থেকে শুরু করে মনিরুজ্জামান মনির, আবু হেনা মোস্তফা কামাল সবাই যে যার অবস্থানে রয়েছেন। আমি কারও স্থান নির্ধারণ করার যোগ্যতা রাখি না। ওই যে বললাম, আমি সব গীতিকারের গান গেয়েছি। আর সুরকারের বেলায়ও তাই।

আপনি এখন কী ধরনের গান গাইছেন। 
আমার গানের বাণী ও সুর পছন্দ হলে কোনো গান গাইতে আপত্তি নেই। তবে এখন অনেকে ভাবে আমাকে দিয়ে ওই ধরনের গান গাওয়ানো সম্ভব কি না। যার গানের বাণী একেবারে স্থূল।

এখনকার গান সর্ম্পকে কিছু বলবেন কী? 
কিছু গান তো ভালো হচ্ছে। তবে আগের মতো সেই বাণীসমৃদ্ধ গানের সংখ্যা মনে হয় কমে গেছে।

আপনি কি মনে করেন এ দেশে আর সাবিনা কিংবা রুনা লায়লা আসবে। 
আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারি না। আসতেও পারে। আবার নাও পারে। এটা আগামী দিনের জন্য ছেড়ে দেওয়া ভালো।

আপনার জন্মদিন উপলক্ষে একটি নাকি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি হয়েছে? 
হ্যাঁ, তৈরি করেছে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল। নাম দেওয়া হয়েছে জুঁই।

আপনার ১৬ হাজার গানের মধ্যে কোন গানকে কী মার্ক দেবেন? 
না, আমার পক্ষে সম্ভব না। কারণ প্রতিটি গানই আমার জন্য ভালো। কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ সেটা শ্রোতাদের ওপর ছেড়ে দেওয়া ভালো। আর শ্রোতারাই আমার গানের বিচারক।

সময়ের আলো-এর পক্ষ থেকে আপনাকে আগাম জন্মদিনের শুভেচ্ছা
আপনাদেরও শুভেচ্ছা।

“সুত্র: দৈনিক সময়ের আলো”

এই সম্পর্কিত আরো পোস্ট দেখতে পারেন

কমেন্ট লিখুন