অর্থায়ন বন্ধের ফলে কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের ছয় লেন প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। দুই বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় মহাসড়কজুড়ে তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। ফলে তা হয়ে উঠেছে জনদুর্ভোগের মহাসড়ক। তীব্র যানজটে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা মহাসড়কে আটকে থাকতে হচ্ছে যাত্রী ও চালকদের।
সওজ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মূল মহাসড়ক চার লেন ও পাশে হালকা যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা রেখে মহাসড়ক উন্নয়ন করা হবে বলে ২০২২ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে এই মহাসড়কের সংস্কারকাজ। দীর্ঘদিনের সংস্কারের অভাবেই এই মহাসড়কে তৈরি হয়েছে গর্ত ও খানাখন্দ। স্থানীয় ও মহাসড়ক পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দুই বছরে কুমিল্লা সড়ক বিভাগের ৩৮ কিলোমিটারে কমপক্ষে ১০৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। মহাসড়ক পুলিশের তথ্য মতে, এসব দুর্ঘটনায় ৯২ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
এই অবস্থায় মহাসড়কে যান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে গত ২৭ আগস্ট নিয়মিত চলাচলকারী যাত্রী ও চালকরা মহাসড়কের ময়নামতি থেকে কোম্পানীগঞ্জ পর্যন্ত একযোগে ৯টি স্থানে অবরোধ করেন। স্থানীয় সড়ক বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন সংস্কারের আশ্বাস দিলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা কর্মসুচি প্রত্যাহার করেন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। মূল মহাসড়কটি হবে চার লেনের।
ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য দুই পাশে থাকবে সার্ভিস লেন। কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকার ময়নামতি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধরখার পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রায় ৪০ কিলোমিটার অংশ পড়েছে কুমিল্লা জেলায়। সড়কটি এখন ১৮ ফুট চওড়া। চার লেন হলে এটি প্রস্থে ৬০ ফুট হবে। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল সাত হাজার ১৮৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
২০২২ সালেই প্রকল্পের কাজ শুরু করে আগামী বছরের জুনে তা শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। সওজ জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ অর্থায়নের কথা ছিল। গত বছরের ৫ আগস্টের পর ভারত অর্থায়নের বিষয়ে নীরবতা পালন করে। জানা গেছে, ভারত সরকার এ প্রকল্পে আপাতত অর্থায়ন করছে না। এই প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আশীষ মুখার্জি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের অধিগ্রহণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে নতুন কোনো নির্দেশনা নেই। তবে ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, তাঁরা এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে না বলে আমাদের জানিয়েছেন।’
কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা কালের কণ্ঠকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কে নির্বিঘ্নে চলাচল ও যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে মধ্যমেয়াদি সময়ের জন্য দ্রুত সংস্কারকাজ শুরু করা হবে। তহবিল সংকটে প্রকল্পটি স্থবির হয়ে পড়েছে। তবে সরকার বিকল্প বিনিয়োগকারী খুঁজছে।