যমুনা নদী বিধৌত সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলার অন্তর্গত ৪ নং উমারপুর ইউনিয়ন এক সময় ছিল ইতিহাস ও ঐতিহ্যে পরিপূর্ণ একটি গৌরবোজ্জ্বল জনপদ। এই ইউনিয়নের গ্রামগুলো যেমন- পয়লা, পাকুটিয়া, বাকুলিয়া, পাঁচশিমুলিয়া, বৃদাশুরিয়া, মধ্যশিমুলিয়া , হাপানিয়া, পাথরাইল, দত্তকান্দি, আগশিমুলিয়া, ধুবুলিয়া, আরকান্দি, পাচুরিয়া, মিনাদিয়া, চান্দইর, বাউসা, উমারপুর, আটিয়াসলঙ্গী, বিলজলহর, ইউসুফশাহী সলঙ্গী, শৈলজানাসহ প্রতিটি গ্রাম ছিল সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, শিক্ষা ও প্রজ্ঞার এক উজ্জ্বল আলো।
এই ইউনিয়নে জন্ম নিয়েছেন বহু বরেণ্য ব্যক্তি—ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন, গরিবের ডাক্তার মরহুম আব্দুল কাদের,উমার আলি সরকার, মরহুম নিয়ামত হাজী, হযরত মাওলানা মোহাঃ বোরহান উদ্দিন, মরহুম ইমারত আলী মোল্লা, মরহুম মনছুর আলী মোল্লা, মুস্তি প্রামানিক, মরহুম রুস্তম আলী মোল্লা, মরহুম আব্দুল খালেক সরকার,মরহুম আলহাজ্ব আসাদুজ্জামান সরকার(জামান সরকার) মরহুম ফারুক রেজা, মরহুম ওয়াজেদ আলী মুন্সি, মরহুম আব্দুল বাতেন সরকার, মরহুম মাজেম শিকদার, মরহুম আবুল বাশার মৌলভী, মরহুম রমজান হাজী, মরহুম ইসলাম হাজী, মরহুম শাফিঈ হাজী, মরহুম প্রফেসর আব্দুল আউয়াল, মরহুম শাহজাহান মন্টু, মরহুম আব্দুল কদ্দুস মুন্সি, মরহুম সামাদ সেক্রেটারি, আবুল হোসেন মাস্টার, মোঃ আঃ বাতেন মাস্টার, সিরাজ মাস্টারসহ অগণিত মানুষ, যাঁরা নিজ নিজ কর্মে অবদান রেখেছেন সমাজ, রাষ্ট্র ও জাতির জন্য।
অত্র ইউনিয়নের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মরহুম আবু ইউসুফ সরকার এবং মরহুম আব্দুল জলিল সাহেব ও সম্মানিত চেয়ারম্যানগণ যেমন- মরহুম আব্দুল লতিফ মাস্টার, মরহুম মির্জা আব্দুর রশিদ, মরহুম আব্দুল বাছেদ সরকার, মোঃ আঃ কাদের বিএসসি, মরহুম আনোয়ার হোসেন শিকদার প্রমুখ—তাঁদের নেতৃত্বে এই অঞ্চল ছিল জনকল্যাণের অনন্য এক দৃষ্টান্ত।
কিন্তু কালের আবর্তন আর ভয়াল যমুনার ধারাবাহিক ভাঙন আজ সব কিছু নিঃশেষ করে দিয়েছে। জমি, বসতভিটা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে। রাষ্ট্রের অবহেলা, নদী শাসনে কার্যকর উদ্যোগের অভাব এবং জনপ্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে এই জনপদের জনগণ আজ নিঃস্ব, নিরুপায়, উদ্বাস্তু।
এইভাবে চলতে থাকলে অচিরেই উমারপুর ইউনিয়নের গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্য কেবল স্মৃতির পাতায় সীমাবদ্ধ থাকবে। এখনই প্রয়োজন বাস্তবসম্মত নদী শাসন প্রকল্প, পুনর্বাসন পরিকল্পনা এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণের কার্যকর পদক্ষেপ। তা না হলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম হারাবে তাদের শেকড়, ইতিহাস আর আত্মপরিচয়।
হান্নান মোরশেদ (রতন) গণমাধ্যম কর্মী