সব ধরনের অন্যায়, অপরাধ ও জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলা ঈমানের অংশ। সামাজিক শৃঙ্খলা বিনষ্টকারী অপরাধীদের বিরুদ্ধে সাধ্যমতো কাজ করা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব। কোনো সাংবাদিক যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষায় স্বচ্ছভাবে কাজ করে তাহলে সে-ও সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা প্রদানের ফজিলত পাবে, ইনশাআল্লাহ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ গর্হিত কাজ হতে দেখলে সে যেন স্বহস্তে (শক্তি প্রয়োগে) পরিবর্তন করে দেয়, যদি তার সে ক্ষমতা না থাকে, তবে মুখ (বাক্য) দ্বারা এর পরিবর্তন করবে।
আর যদি সে সাধ্যও না থাকে, তখন অন্তর দ্বারা করবে, তবে এটা ঈমানের দুর্বলতম পরিচায়ক।’ (মুসলিম, হাদিস : ৮১)
ঈমানদার সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে ঠিক সেই কাজটাই করেন। তাঁরা সামাজিক উন্নয়ন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, সত্য-সুন্দর ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে কলমের মাধ্যমে লড়াই করেন। তাই আল্লাহর ওপর ভরসা করে বলা যায়, যদি কোনো সাংবাদিক সহিহ নিয়তে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় তাঁর দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন, তাহলে তাঁর এই পেশাও আমরু বিল মারুফ, নাহি আনিল মুনকার হিসেবে পরিগণিত হবে, ইনশাআল্লাহ।
কেননা মহানবী (সা.) বলেন, ‘কাজের প্রাপ্য নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে।’ (বুখারি, হাদিস : ১)
সমাজের শৃঙ্খলা রক্ষা ও ইসলামের নির্দেশনা পালনের আশায় যদি কেউ বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে তার যদি কোনো বিপদও আসে, তবে তা তার নাজাতের উসিলা হবে, ইনশাআল্লাহ। কেননা জালিম শাসক বা নেতার রক্তচক্ষুতে চোখ রেখে সত্য বলার কাজটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাংবাদিকদেরই করতে হয়।
তাঁরা সামাজিক অসংগতি ও জুলুম-নির্যাতনের ঘটনাগুলো সামনে এনে জালিমের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করেন। নীরবে গরিব-দুঃখীর রক্ত শুষে খাওয়া ভণ্ড নেতাদের মুখোশ উন্মোচন করেন।
দেশ-জাতির কল্যাণে জালিমের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নেওয়া, প্রতিবাদ করা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তো নবীজি (সা.) জালিমের সামনে হক বলাকে সর্বোত্তম জিহাদ বলে আখ্যা দিয়েছেন। আবু উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জামরাতুল উলাতে এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসুল! কোন জিহাদ বেশি উত্তম? তিনি তাকে কিছু না বলে নীরব থাকলেন।
অতঃপর তিনি দ্বিতীয় জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপকালে সে আবার একই প্রশ্ন করল। তিনি এবারও নিশ্চুপ থাকলেন। তিনি জামরাতুল আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ করার পর বাহনে আরোহণের জন্য পাদানিতে পা রেখে জিজ্ঞাসা করলেন, প্রশ্নকারী কোথায়? সে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! এই যে আমি। তিনি বলেন, জালেম শাসকের সামনে সত্য কথা বলা (উত্তম জিহাদ)। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০১২)। হাদিস ব্যাখ্যাকারদের মতে, আল্লাহর পথে জিহাদ কেবল যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্র হাতে লড়াই করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। এ হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন, ‘সর্বোত্তম জিহাদ’ অর্থাৎ আল্লাহর পথে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বাধিক উপকারী জিহাদ হলো, ‘ন্যায়ের কথা বলা’; অর্থাৎ সৎ কাজের আদেশ বা অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা—এর পদ্ধতি অনেক রকম হতে পারে; কথা দিয়ে হতে পারে, লেখা দিয়ে বা কাজে প্রকাশের মাধ্যমেও হতে পারে।
‘জালিম শাসকের সামনে’ মানে হলো, এমন শাসক বা নেতা, যার হাতে জনগণের দায়িত্ব আছে এবং তার থেকে এমন কিছু জনবিরোধী বা ইসলামবিরোধী অন্যায় প্রকাশ পেয়েছে, যা মানুষের মধ্যে প্রসিদ্ধ। এমনকি সে এতটাই খারাপ লোক যে তাকে সৎ কাজের আদেশ বা অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার আহবান করলে হয়তো সে আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারে। জীবন বা সম্পদের ক্ষতি করতে পারে। এ বিষয়ে জেনেও যদি কেউ ইসলামের স্বার্থে, দেশ-জাতিকে জুলুম থেকে রক্ষা করার স্বার্থে সেই জালিমের সামনে হক কথা বলতে পারে, তার অপরাধগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারে—তবে তাকে কোনোভাবেই জিহাদের চেয়ে কম কিছু বলার সুযোগ নেই। এতে তার মৃত্যু হলেও মাজলুম হয়ে মৃত্যুবরণ করার কারণে আল্লাহ তাকে শহীদি মর্যাদা দেবেন, ইনশাআল্লাহ।
আবার শাসক যদি আগ্রাসী না হয়ে ন্যায়ের কথাটি গ্রহণ করে, তবে এর সুফল গোটা সমাজ ভোগ করবে। অতএব, সাংবাদিকদের উচিত মহান আল্লাহর হুকুম পালন ও সমাজ রক্ষার উদ্দেশ্যে বস্তু নিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে সাহসী পদক্ষেপ রাখা। মহান আল্লাহর সবার নেক আমল কবুল করুন। আমিন।
সূত্র : কালের কণ্ঠ