Home » সর্বক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য নির্যাতন এবং সহিংসতা 

সর্বক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য নির্যাতন এবং সহিংসতা 

0 মন্তব্য গুলি 236 জন দেখেছে 100 পড়েছেন
প্রতিবেদকঃ অ্যাডভোকেট মরিয়ম রহমান ঊর্মি
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউ. এন. এফ. পি. এ.) জানিয়েছে ২০২৫ সালে বাংলাদেশে জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৫৭ লাখ দাঁড়িয়েছে ২০২৪ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যা ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার এর মধ্যে নারী আট কোটি ৭৩ লক্ষ ৯০ হাজার এবং পুরুষ ৮ কোটি ৪২ লাখ। অর্থাৎ পুরুষের তুলনায় নারী সংখ্যা ৩১ লক্ষ ৯০ হাজার বেশি। এই অর্ধেকেরও বেশি নারী জনগোষ্ঠীকে পিছনে রেখে পরিবার, সমাজ, দেশ পরিবার এগিয়ে যেতে পারে না।
এদেশের নারীরা নানাভাবে বৈষম্য স্বীকার হন। বৈষম্যের সাথে নির্যাতন অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। ইউএনএফপিএ বাংলাদেশ ২০২৪ এর জরিপের নারীর প্রতি সহিংশতার চিত্র উঠে এসেছে। এ জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রায় ৭০ ভাগ নারী তাদের জীবদ্দশায় জীবনসঙ্গী বা স্বামী কর্তৃক অন্তত একবার হলেও সহিংসতা স্বীকার হয়েছেন।
২০২৪ সালে যৌতুকের দাবিতে ৩৬ জন নারী হত্যার শিকার হয়েছেন যা সমাজ ও দেশের জন্য অত্যন্ত আশঙ্কার বিষয়। যৌতুকের জন্য নির্যাতন, হত্যা, আত্মহত্যা ঘটনা আমাদের সমাজে অহরহ ঘটছে।
বাংলাদেশের মহিলা পরিষদের তথ্য মতে যৌতুককে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালে ১৭৩ জন নারী খুন হয়েছেন। নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৩৬২ টি। ২০১৬ সালের পূর্বে বিগত পাঁচ বছরে এ সংখ্যা ২০০০ এর বেশি। হত্যার শিকার হয়েছেন ১১৫১ জন নারী। ১৪ টি দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে এই হিসাব রাখে সংগঠনটি।
সম্প্রতি নারীর প্রতি নির্যাতনের প্রধান ধরনের মধ্যে ধর্ষণ সবার শীর্ষে রয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে মোট দর্শনের ঘটনা ঘটেছে ২৭ হাজার ৪৬৭ টি যার মানে প্রতি বছর সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। একই সময়ে ৫৯ হাজার ৯৬০টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, যা শুধু নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা কে প্রকাশ করে না বরং সামাজিক ও আইনি ব্যবস্থা সীমাবদ্ধতা এবং অপরাধীদের শাস্তি না হওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরে।
যদিও দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি নারী সমাজ। প্রতিটি সেক্টরে নারী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। তথাপিও নারীরা কর্ম ক্ষেত্রে নানা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। নারীকে কর্ম ক্ষেত্রে আসতে উৎসাহিত করা হয় ঠিকই, তবে সেখানে টিকে থাকা এবং নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে যাওয়ার পথ এখনো বন্ধুর । কর্পোরেট নারী হোক বা শ্রমজীবী সকলের শিকার হচ্ছেন। যৌন হয়রানি, শারীরিক, মৌখিক ও মানসিক নির্যাতন, মজুরি ও পদ বৈষম্য তো রয়েছেই। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে নারীরা পুরুষের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি সময় পারিশ্রমিক সহ এবং বিনা পরিশ্রমিকে গ্রামে মোট শ্রমের ৫৫ শতাংশ ও শহরের মোট শ্রমের ৫০ শতাংশ শ্রমদান করেন ।
কিন্তু অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নারীরা চিরকাল অবহেলিত। আবার, স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রেও নারীরা যথেষ্ট বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন । বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির তথ্য অনুযায়ী, মায়েদের নিরাপদ প্রসব পূর্ব সেবার জন্য সরকারের বরাদ্দ ব্যয় প্রয়োজন তুলনায় শতকরা ৪৯ ভাগ এবং প্রসব পরবর্তী সেবার জন্য মাত্র শতকরা ১৮ ভাগ। তাছাড়া ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কারের কারনে অপুষ্টি, অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন ও অসুস্থ হলে সময় মত চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার অভাবে গ্রাম্য নারীরা অনেক সময় মৃত্যুবরণ করেন।

এই সম্পর্কিত আরো পোস্ট দেখতে পারেন

কমেন্ট লিখুন