বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো: নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি কিংবা গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে সেই আলোকে সংস্কার বাস্তবায়ন এবং পিআর পদ্ধতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।
যেখানে দেশের ৭১ শতাংশ মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়, সেখানে নির্বাচন ব্যবস্থায় পিআর পদ্ধতি চালু করতে গড়িমসি কেন— প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, সরকার সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিধান অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিলেও কার স্বার্থে সংসদের নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করতে আপত্তি করছে।
সোমবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পল্টন থানা সদস্য সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইদানিং জুলাই যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জাতি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছে সেই জুলাইকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র চলছে।’
জুলাই নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র করা হলে জুলাই বারবার ফিরে আসবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও পাথর দিয়ে মানুষ হত্যাকারীদের ৩৫ শতাংশ তরুণ ভোটের মাধ্যমে বয়কট করবে মন্তব্য করে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘বিগত ২০ বছর ধরে দেশের ৩৫ শতাংশ তরুণ যুবক ভোট দিতে পারেনি। তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে বরাবরই অবস্থান নিয়ে থাকে। এবার তারা ভোটের মাধ্যমে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও পাথর দিয়ে মানুষ হত্যাকারীদের বয়কট করবে। পাথর দিয়ে মানুষ হত্যা যত বাড়বে, ভোটের পারসেন্ট ততই কমবে বুঝতে পেরে এজন্য তারা পিআর পদ্ধতির বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে সংস্কার ও গণহত্যার বিচার না চেয়ে যেনতেন একটি নির্বাচন চায়। যেনতেন কোনো নির্বাচন জনগণ মেনে নিবে না। সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকবে।’
‘হাসিনার সুরে সুর মিলিয়ে যারা আলেমসমাজের ঐক্যকে মৌলবাদীদের উত্থান বলে আখ্যায়িত করছে তারা মূলত জাতীয় ঐক্য বিনষ্টের ষড়যন্ত্র করছে। ইসলামী দলগুলো জোট হলে পরাজিত হওয়ার ভয়ে উলামা মাশায়েখদের বিরুদ্ধে নানারকম অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তবে তারা যতই ষড়যন্ত্র করছে উল্টো তাদের দলীয় অপকর্মের কারণে জনগণ তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে,’ বলেন তিনি।
যেকোনো অপপ্রচার ষড়যন্ত্র জনগণকে সাথে নিয়ে রুখে দিতে তিনি উপস্থিত সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান।
এসময় তিনি আরো বলেন, ‘যারা ঈদের পরে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে আর আন্দোলনের মাঠে আসেনি, তাদের রাজনৈতিক শক্তি জনগণের জানা আছে। একটা বালুর ট্রাক সরাতে না পারা দল গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী লম্বা লম্বা কথা বলে। জুলাই আন্দোলন চলাকালীন যেই দলের মহাসচিব মিডিয়ার সামনে বলেছেন, ছাত্রদের আন্দোলনের সাথে তার দলের কেউ জড়িত নয়, আন্দোলন পরবর্তী তারা নিজের গণ-অভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড দাবি করা শুরু করলো।’
পল্টন থানা আমির শাহীন আহমেদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির, ঢাকা-৮ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী জামায়াতে ইসলামী বারবার দাবি জানিয়ে আসছে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ও গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে। কিন্তু সরকার নির্বাচনের দিকে এগিয়ে গেলেও সংস্কার এবং গণহত্যার বিচারের বিষয়টি অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখে যাচ্ছে। সংস্কারে নামে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বারবার আলোচনা করে অবশেষে বলছে, সংস্কার বাস্তবায়ন করবে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার। সরকারের এমন কথায় দেশের জনগণ আস্থা রাখতে পারছে না। রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের এমন কর্মকাণ্ডকে জাতির সাথে তামাশা হিসেবেই মনে করে। অনতিবিলম্বে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে সংস্কার বাস্তবায়ন ও গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিয়ে জনগণের প্রতিটি ভোটের মূল্যায়ন করতে হবে।’
পল্টন থানা সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলামের পরিচালনায় মহানগরীর হলরুমে অনুষ্ঠিত সদস্য সমাবেশে পল্টন থানা জামায়াতে ইসলামীর শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি
“সুত্র: দৈনিক নয়াদিগন্ত”