এস. এম তফিজ উদ্দিনঃ
সিরাজগঞ্জে এবার বিভিন্ন স্থানে কচু চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে দাম ভালো থাকায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে এবং এ কচু চাষে কৃষকেরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জেলার ৯টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এবার প্রায় ৬২ হেক্টর জমিতে কচু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে কৃষকদের আগ্রহে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে কচু চাষ হয়েছে। এ জেলার বিভিন্ন স্থানে লতিরাজ বারি-১ ও কালা কচুসহ বিভিন্ন দেশীয় জাতের কচু চাষ করেছে কৃষকেরা। তবে শয্যভান্ডার খ্যাত সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এ কচু চাষাবাদ বেশি হয়ে থাকে। তবে নিচু জমি, বাড়ির আঙিনা, পতিত জমি, পুকুরপাড়, কাঁদা জমি ও ভিটেমাটিতে এ কচুর চাষাবাদ হয়ে থাকে। কৃষকেরা যশোর, রংপুর, খুলনা ও সাভারসহ অন্যান্য স্থান থেকে এ কচুর চারা (পুঁয়া) সংগ্রহ করে বছরের প্রথম থেকে অর্থাৎ জানুয়ারী ফেব্রুয়ারী মধ্যে এ কচু রোপণ করা হয়। বিশেষ করে লতিরাজ বারি-১ ও কালা কচু চাষে পানি সেচসহ সার ও কীটনাশক ব্যবহার হয়ে থাকে এবং অনান্য জাতের কচু চাষাবাদে খরচ কম হয়ে থাকে। ইতিমধ্যেই এ কচুর লতা ও কচু স্থানীয় হাট-বাজারে উঠছে এবং দাম ভালো থাকায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। এ কচু ও লতা ক্রয় করে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছে ব্যবসায়ীরা। এ লাভজনক কচু চাষে গত বছরের চেয়ে এ বছর এ কচু চাষে বেশি ঝুকে পড়েছে কৃষকেরা। এরমধ্যে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পিপুলবাড়িয়া গ্রামের আদর্শ কৃষক সাবেক ইউপি সদস্য জহুরুল ইসলাম জানান, যমুনা নদী থেকে কয়েক কিলোমিটার পশ্চিমে পিপুলবাড়িয়া গ্রাম। এ গ্রামে কৃষকেরা কচু, ধান, ভ’ট্রা, আখ, পাটসহ অনান্য ফসলও চাষাবাদ করে থাকে। এবার আমার ৫ বিঘা জমিতে লতিরাজ বারি-১ ও কালা কচু চাষাবাদ করেছি। খুলনা, যশোর ও সাভার থেকে লতিরাজ বারি-১ ও কালা কচুর চারা সংগ্রহ করে রোপর করা হয়। এ চাষাবাদে ৭/৮ জন কামলা প্রতিদিনই কাজ করছে এবং সার, পানি ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। গত ৩/৪ মাস ধরে লতিরাজ বারি-১ এর লতা হাট-বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে এবং প্রথম পর্যায়ে ৭০/৮০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে এ লতা ৫০/৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এ কচুর লতা ক্রয় করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছে। তবে লতিরাজ বারি-১ এর কচু (কাইট) তেমন না হলেও কালাকচুর ওজন বেশি হয়ে থাকে। প্রতিটি কচু প্রায় ১২ থেকে ১৫ কেজি হয়ে থাকে। এ কচুও ইতিমধ্যেই বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। খরচ বাদে সবমিলে এ চাষে প্রতি বিঘায় ৪০/৪৫ হাজার টাকা লাভ হয়। এ অঞ্চলের অনেকেই এ কচু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে এবং তারা লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে। কচু চাষে কৃষি বিভাগ পরামর্শ দিলে আরো লাভবান হবে কৃষকেরা। এ চাষে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। এ চাষে ওই গ্রামের দিনমজুর মোতালেব (৪৫), নজরুল (৫২) ও হাসিনা (৪০) এ প্রতিবেদককে জানান, কচু চাষাবাদে ব্যয় খরচ বাদেও প্রতিবছরই ভালো লাভ হয়ে থাকে মালিকের। আমরা ৭/৮ জন নারী পুরুষ দিনমজুর আদর্শ কৃষক জহুরুল মেম্বারের কচু চাষাবাদ শুরু থেকে কাজ করছি। এ কচু চাষে সব ধরণের কাজসহ এখন কচুর লতা তুলে হাট বাজারে বিক্রি করছি। বাজারে এখনও লতা ও কচুর চাহিদা রয়েছে যথেষ্ট। এ কারণে কৃষকেরা এ চাষে আগ্রহ হয়ে উঠছে। এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আঃ জাঃ মুঃ আহসান শহীদ সরকার বলেন, কম খরচে কচু চাষাবাদ এখন লাভজনক। এ চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে এবং কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। এবার কচু চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
9
পূর্ববর্তী পোস্ট