Home » নড়াইলের বন্ধ ‘আল্পনা’ সিনেমা হল এখন তাবলীগের ‘মার্কাজ মসজিদ’

নড়াইলের বন্ধ ‘আল্পনা’ সিনেমা হল এখন তাবলীগের ‘মার্কাজ মসজিদ’

0 মন্তব্য গুলি 3 জন দেখেছে 2 মিনিট পড়েছেন

এমন একদিন ছিল যখন জেলার সিনেমা হলগুলো দর্শকে ঠাসা থাকতো। প্রতিদিন চারটি করে শো চলত। তবুও দর্শকের কোনো কমতি ছিল না। কোনো কোনো ছবির ব্যাপক দর্শক চাহিদার কারণে এক মাস ধরেও চলেছে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে হলগুলোতে দর্শক আশঙ্কাজনক হারে কমতে কমতে নড়াইলের সব হল বন্ধ হয়ে গেছে। গত কয়েক বছর আগেও প্রতি ঈদে এবং পূজাকে সামনে রেখে হল মালিকরা নতুন ছবি এনে চালাতেন। কিন্তু এখন জেলার ছয়টি সিনেমা হলই বন্ধ হয়ে গেছে দর্শক শূন্যতায়। এমনকি হলোগুলোর অবকাঠামোও ভেঙে ফেলা হয়েছে। সর্বশেষ নড়াইলের কালিয়াতে বন্ধ হয়ে যাওয়া ‘আল্পনা’ সিনেমা হলের জরাজীর্ণ ভবনের সামনে ‘কালিয়া উপজেলা তাবলীগী মার্কাজ মসজিদ’ নামের একটি ব্যানার টাঙানো হয়েছে।

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ব্যানারটি টানিয়েছেন ‘আলমী শুরায়ী নেজাম’ নামের একটি সংগঠন। বর্তমানে ভবনটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করছেন তারা।

আজ শুক্রবার দুপুরে ‘আলমী শুরায়ী নেজাম’ সংগঠনের ‘সাথী’ এবং কালিয়া উপজেলা ওলামা ও ইমাম পরিষদের সভাপতি হাফিজুর রহমান বলেন, সংগঠনের পক্ষ থেকে এটি আমরা প্রশাসনের কাছ থেকে বাৎসরিক ৪ হাজার টাকা মূল্যে ইজারা নিয়েছি। ভবনটা জরাজীর্ণ হলেও যতটুকু সম্ভব আমরা ব্যবহারযোগ্য করব, সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে।’

তিনি আরও বলেন, এখানে আমরা ‘তাবলীগী মার্কাজ মসজিদ’ চালু করেছি। বিভিন্ন দেশ ও ঢাকার কাকরাইল থেকে কালিয়াতে যে তাবলীগ জামাতগুলো আসবে, তারা প্রথমে এখানে আসবে। পরে স্থানীয় তাবলীগ জামায়াতের সাথীদের সঙ্গে পরামর্শ করে বিভিন্ন মসজিদে যাবেন।

banner

জানা যায়, ১৯৭০ সালে নড়াইল শহরে চিত্রাবাণী, ১৯৮২ সালের দিকে লোহাগড়া শহরে সেভেনস্টার ও সন্ধ্যা সিনেমা হল, ২০০১ সালের দিকে নড়াইল ফেরীঘাটের ওপার সীমাখালী এলাকায় গোলক সিনেমা হল এবং সদরের গোবরা বাজারে আশা সিনেমা হল গড়ে ওঠে। ২০২১ সালের মার্চ মাসে নড়াইল জেলার সবচেয়ে পুরোনো এবং জনপ্রিয় চিত্রাবাণী সিনেমা হলের অবকাঠামো ভেঙে ফেলা হয়।

এ ছাড়া ১৯৮৪ সালে কালিয়ার ‘আল্পনা’ সিনেমা হলটি প্রথমে ‘টাউন হল’ নামে ভবনটির উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক শাফায়াত আলী। এর কয়েক বছর পর সেটি ইজারা নিয়ে ‘আল্পনা’ নামে একটি সিনেমা হল চালু করেন এক ব্যক্তি। তবে প্রায় ২০ বছর আগে ওই সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল।

খালিদ হোসেন নামে কালিয়া বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, দীর্ঘদিন ভবনটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে ছিল। এখন একটি ভালো কাজের জন্য এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে আমরা আনন্দিত এবং সফলতা কামনা করছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিপিবি নড়াইল জেলার সভাপতি জি এম বরকত উল্লাহ বলেন, মসজিদ হওয়া প্রয়োজন। তবে যেহেতু কাছাকাছি তৈরি হচ্ছে সরকারের আধুনিক মডেল মসজিদ। সেহেতু ওই জায়গায় না হয়ে অন্য কোনো স্থানে হলে ভালো হতো। সিনেমা হলের এ জায়গাটি সংরক্ষণ করা যেত।

নড়াইলের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আব্দুস সাত্তার বলেন, আমার জানা মতে, নড়াইলে আর কোনো সিনেমা হল আর অবশিষ্ট নেই। নড়াইল শহরে চিত্রাবাণী ও সীমাখালী এলাকায় গোলক সিনেমা হল, গোবরায় আশা সিনেমা হল, লোহাগড়াতে সেভেনস্টার ও সন্ধ্যা এবং কালিয়াতে আল্পনা। সবই এখন ইতিহাস।

এ  ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, এটি একটি অর্পিত সম্পত্তি। প্রতিবছরই ইজারা দেওয়া হয়। এক সময় এটি সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ ইজারা নিয়েছিল। সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেলে গত ২০ বছর এটি আর ইজারা হয়নি। ফলে ওই জায়গাটা মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এজন্য সরকারি সম্পত্তি দখলে রাখা ও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে আমরা এটিকে ইজারা দিয়েছি।

সূত্র: সমকাল।

এই সম্পর্কিত আরো পোস্ট দেখতে পারেন

কমেন্ট লিখুন