শিক্ষক বর্ণালী রানী দোবে
প্রকৃতির পালা বদলের মধ্য দিয়ে বর্ষাকালের বর্ষাকালের ‘পর ‘পর আসে শরৎ কাল। আর শরৎ আসলেই নীল আকাশ,
কাশফুল ও শিউলির গন্ধে প্রতিটা হিন্দু বাঙ্গালির মনে এক অন্য আনন্দ অনুভূতির জন্ম নেয়-তাহলো সর্বজনীন দুর্গোৎসব যা দুর্গা পূজা নামে অধিক প্রচলিত। বাংলাদেশের সর্বত্র দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এ পুজা বাঙ্গালি হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব।
দেবী দুর্গা পৌরনিক দেবতা। তাকে আদ্যাশক্তি, মহামায়া, শিবানী, ভবানী, দশভুজা, নারায়ণী প্রভৃতি নামেও ডাকা হয়। পুরানে বলা আছে, আদ্যাশক্তি মহামায়া দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের লক্ষে এবং সমগ্র জীবের কল্যাণ কামনায় যুগে যুগে ও কালে কালে বিভিন্নরূপে ভিন্ন ভিন্ন নামে দেবী আবির্ভূত হয়েছেন। তাছাড়া দুর্গম নামক অসুরকে যিনি বধ করেন তিনিই দেবী দুর্গা। অন্য দিকে সকল জীবের দুর্গতি নাশ করেন বলেই তাঁকে দুর্গতিনাশিনী বলা হয়।
শ্রীশ্রী চন্ডী গ্রন্থে প্রাচীন কালে ব্রহ্মার আশির্বাদে দুরাচারী মহিষাসুর দেবতাগণকে যুদ্ধে পরাজিত করে স্বর্গ রাজ্য দখল করে দেবতাগণকে স্বর্গ থেকে তাড়িয়ে দেন। দেবতাগণ নিজেদের আবাস ভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে দেবতাগণ প্রজাপতি ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিবের নিকট উপস্থিত হন। মহিষাসুরের অত্যাচারের কাহিনী শুনে আদি দেবতাগণ ক্রোধান্বিত হন। সেই ক্রোদে তাঁদের মুখমণ্ডল থেকে এক মহাতেজ নির্গত হয়। তিন দেবতার তেজঃপুঞ্জ একত্রিত হয়ে এক মহাতেজস্বিনী পরম রূপবতী এক দেবীমূর্তি ধারণ করেন। দেবতাগণের সম্মিলিত শক্তির মিলিত রূপ থেকেই আবির্ভূত মহাশক্তির অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন দুর্গা। দেবগণ বিভিন্ন প্রকার অলংকার ও নিজ নিজ অস্ত্র দান করে দেবীকে সজ্জিত করে তোলেন। হিমালয় রাজদেবীকে বাহন হিসাবে সিংহ দান করেন। দেবতাদের শক্তিতে শক্তিময়ী দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেন। দেবী দুর্গা কর্তৃক দুরাত্মা মহিষাসুর বধ করার রূপটি বর্তমানে বহুল প্রচলিত মৃন্ময়ীরূপে দুর্গা পূজার দৃশ্যপট।
পুরাণে দেবীর মাহাত্মে দেবীকে বসন্তকালে পূজা করা হতো বলে দেবীর অন্য নাম বাসন্তী। তবে কৃত্তিবাস রামায়ণ অনুসারে রাক্ষসরাজ রাবণ সীতাকে হরণ করেন। সীতাকে উদ্ধারের জন্য ত্রেতা যুগে শ্রী রামচন্দ্র রাবণকে বধ করার জন্য ব্রহ্মার নির্দেশে শরৎকালে দেবী দুর্গার পূজা করেন। পূজায় দেবী দুর্গা সন্তুষ্ট হয়ে রামকে আশির্বাদ করেন। দুর্গার আশির্বাদে রাম রাবণকে বধ করতে সমর্থ হন। মূলত দুর্গা পূজা বসন্তকালের উৎসব হলেও নির্দিষ্ট সময়ের আগে অকালে অর্থাৎ বসন্তকালের পরিবর্তে শরৎকালে শ্রী রামচন্দ্র দুর্গাপূজার আয়োজন করেন বলে একে অকাল বোধন বা শারদীয় দুর্গোৎসব বলা হয়। তবে বলা হয়ে থাকে যে, বঙ্গদেশে প্রথম দুর্গাপূজার ঘটন প্রলেন প্রচরণ করেন সম্রাট আকবরের (১৫৫৬-১৬০৫) রাজত্বকালে রাজশাহী জেলার তাহেরপুরের রাজা কংস নারায়ণ করতেন।
এবার ২০২৫ সালে দেবী দুর্গার আগমন গজে (হাতিতে) যার অর্থ শাস্তি, সমৃদ্ধি ও শস্য শ্যামলা বসুন্ধরার প্রতীক, যা শুভ লক্ষণ হিসাবে ধরা হয়। দেবীর গমন দোলায় (পালকি), যা মহামারী বা মড়কের প্রতীক।
শক্তিরূপিনী অসূরবিনাশী হিন্দু ধর্মীয় শক্তির আঁধার মাতৃরূপে আবির্ভূতা শ্রীশ্রী দুর্গা মায়ের আরাধনায় মনোনিবেশ করে পূজার পবিত্রতা, পরিবেশ ও সার্বজনীনতা রক্ষায় অকৃত্রিম ও ভেদবিহীন প্রার্থনা করে শুভশক্তিকে রক্ষা করার প্রত্যয় নিয়ে মাতৃশক্তির আরাধনায় ব্যাপৃত হওয়া বাঞ্ছনীয়।
“যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেন সংস্থিতা, নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমোঃ নমোঃ।”