মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ সুরতের রয়েছে সুদীর্ঘ গৌরবময় ইতিহাস। উসমানি খেলাফতের পতন-পরবর্তী বিরতির পর সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্ক আবারও প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে। সেলজুকদের সময় থেকেই তুরস্কের সঙ্গে ইসলামের ওতপ্রোত সম্পর্ক রয়েছে। আবার সবচেয়ে কট্টর সেক্যুলার শাসনও তুরস্কের মানুষ দেখেছে। বর্তমান বিশ্বে তুরস্ক এক উদীয়মান পরাশক্তির নাম। যা মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক বিবেচনায় অন্যতম। তুরস্কের সরকারি নাম- প্রজাতন্ত্রী তুরস্ক। এটি এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যবর্তী একটি দেশ। দেশটির রাজধানী আন্তায়া। সবচেয়ে বড় শহর ইস্তাম্বুল। তুরস্কের ভূমি বিচিত্র ধরনের। দেশটির দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিমে আছে উর্বর সমভূমি। পশ্চিমে অনুর্বর মালভূমি আর পূর্বে সুউচ্চ পর্বতমালা।
তুরস্কের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিবর্তনের বিভিন্ন ধরনের প্রভাব রয়েছে। গোটা মানবসভ্যতার ইতিহাসজুড়ে তুরস্ক এশিয়া ও ইউরোপের মানুষের চলডলের সেতু হিসেবে পরিচিত। তুরস্কের মোট আয়তন ৩ লাখ ২ হাজার ৫৩৫ বর্গমাইল। রাষ্ট্রীয় ভাষা তুর্কি। সরকারব্যবস্থা হচ্ছে দেশটির ঐক্যমূলক সংসদীয় সাংবিধানিক গণতন্ত্র। আইনসভা হচ্ছে গ্র্যান্ড জাতীয় সমাবেশ। তুরস্ক মোট ৮১টি প্রদেশে বিভক্ত। সবগুলো বিভাগকে ৭টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। মোট জেলা ৯২৩টি। শিক্ষার হার পুরুষদের ৯৫.৩ শতাংশ এবং নারীদের ৭৯.৬ শতাংশ। তবে গড় শিক্ষার হার ৮৭.৪ শতাংশ। ইসলামের ইতিহাসে তুরস্ক ও ইস্তাম্বুল আলোচিত নাম। ইস্তাম্বুলের প্রাচীন নাম কনস্টান্টিনোপল। একে আরবিতে বলে ‘কুস্তানতিনিয়া’।
বেশ কয়েকজন নবী ও মুসলিম মনীষীর পদচারণে মুখরিত শহর এটি। আয়া সোফিয়ার মখমল গালিচা। ইস্তাম্বুলের দৃষ্টিনন্দন মসজিদ আয়া সোফিয়া। কারো মতে, হায়া সুফিয়া। মসজিদটি ইসলামের ইতিহাসে আলোকোজ্জ্বন অধ্যায়। মুসলিম চেতনার অনন্য মিনার আয়া সোফিয়া। এর সামনে বিশাল খোলা চতুর। চারদিকে নানা ফুলের দৃষ্টিনন্দন বাগান। মাঝখানে চমৎকার ফোর-ায়া। চতুর পেরিয়ে সামনেই প্রবেশপথ। কিবলার বিপরীত দিক থেকে মসজিদে প্রবেশ করতে হয়। এটি তৈরি হয়েছিল ৩৬০ খ্রিষ্টাব্দে। নির্মাতা রোমান সম্রাট কনস্টান্টিনোপল। ষষ্ঠ শতকে কোনো এক দুর্ঘটনায় এটি আগুনে পুড়ে যায়। ৫৩২ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট জাস্টিনিয়ান বর্তমান অবকাঠামোটি নির্মাণ করেন।
বিখ্যাত আয়া সোফিয়া মসজিদে রূপান্তরিত হয় কনস্টান্টিনোপল বিজয়ী মাত্র ২২ বছরের যুবক মুহাম্মদ আল-ফাতিহের হাতে। তখন থেকে টানা ৫০০ বছর আয়া সোফিয়া বিমোহিত হয়েছে আজানের ধ্বনিতে। কিন্তু মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক সরকার ১৯৩৫ সালে আয়া সোফিয়াকে জাদুঘরে রূপান্তর করে। সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৪ জুলাই তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোয়ানের নির্দেশে ফের মসজিদে রূপান্তর হয়। বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় জুমার নামাজ। উসমানি ঐতিহাসিক সোলাইমানিয়া মসজিদ। ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান সোলাইমানিয়া মসজিদ। কেউ কেউ এটিকে সুলতান ‘সোলাইমান মসজিদ’ও বলেন। বসফরাস প্রণালির তীরে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে পাহাড়ি রাস্তায় বেশ উঁচুতে মসজিদটি। ইতিহাসখ্যাত সুলতান সোলাইমান ছিলেন উসমানি সালতানাতের দশম সুলতান। তিনি ‘কানুনি সোলাইমান’ বলেও পরিচিত।
১৫২০ সাল থেকে ১৫৬৬ সাল পর্যন্ত ছিলেন উসমানি সালতানাতের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের সুলতান। সুলতানের ছিল অনন্য প্রভাব ও প্রতিপত্তি। বসফরাসের উসমানিয়া সালতানাতের সম্মান সময়ের ইউরোপীয় অংশে অবস্থিত মসজিদটি উসমানিয়াস ও মর্যাদার প্রতীক। এ মসজিদের সুউচ্চ চারটি মিনার ও বিশালাকার গম্বুজগুলো আজও উসমানি সালতানাতের ঐতিহ্যের স্মারক হয়ে আছে। মসজিদের পাশে রয়েছে সুলতান সোলাইমানের কবর। কবরের চারপাশ সবুজে ঘেরা। এর মাঝে বিশালাকার গম্বুজের নিচে সুলতান সোলাইমানের সমাধি। সুলতান সোলাইমান ইতিহাসে আলোচিত সেই সুলতান, যার হাতে রোমান সাম্রাজ্যের পতন হয়েছিল। জুলকিফল ও ইয়াসাআ (আ.)-এর মাকবারা: তুরস্কের দিয়ারবাকার থেকে ৫২ কিলোমিটার দূরের নদী তীরের পাহাড়ি অঞ্চলের নাম এগেইল। স্থানীয় উচ্চারণে আলঈন। পাশেই রয়েছে ইতিহাসখ্যাত দজলা নদীর প্রবাহ।
এ দজলার তীরবর্তী বাঁধ ভেঙে গেলে নবী ইয়াসাআ (আ.) ও জুলকিফল (আ.)-এর কবর ভেঙে পড়ে। পরবর্তীতে চার কিলোমিটার দূরে নতুন করে তাদের দাফন করা হয়। জুলতিফল (আ.) ছিলেন বনি ইসরাইলের বিখ্যাত নবী। কোরআনে যেসব নবীর আলোচনা এসেছে, জুলকিফল (আ.) তাদের অন্যতম। সোলাইমান -পরবর্তী নবী হিসেবে তিনি সিরিয়া অঞ্চলে প্রেরিত হন। বনি ইসরাইলের (আ.)-পরবর্তী অপর নবী ইয়াসাত্মা (আ.) সম্পর্কে জানা যায়, তিনি ছিলেন বিখ্যাত নবী ইউসুফ (আ.)-এর প্রোপৌত্র।
তার পিতা ছিলেন ইফরাইম। যিনি ছিলেন ইউসুফ (আ.) এর ছেলে। আরেকটি অভিমত হচ্ছে, ইয়াসাআ (আ.) ছিলেন নবী ইলিয়াস (আ.)-এর চাচাতো ভাই এবং তার প্রতিনিধি। বনি ইসরাইলের বিখ্যাত এ দুই নবীর সমাধি হাজার বছর ধরে ইতিহাসের আলো ছড়াচ্ছে তুরস্কের প্রাচীন অঞ্চল এগেইলে। সমাজে বিগত মাওলানা রুমির প্রেমবাগান মাওলানা রুমির মূল নাম জালালুদ্দিন মুহাম্মদ বালখি রুমি (১২০৭-১২৭৩ খ্রিষ্টাব্দ)। তিনি ছিলেন আধ্যাত্মিক জগতের অনন্য মনীষা, দার্শনিক, কবি, আইনজ্ঞ, ধর্মতাত্ত্বিক, অতীন্দ্রিয়বাদী ও সুফি।
প্রেম ও আধ্যাত্মিক কাব্যে তিনি অমর হয়ে আছেন বিশ্বদরবারে। ফার্সি, তাজাকিস্তানি, তুর্কি, গ্রিক, পশতুন, মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম-অমুসলিম সমাজে বিগত সাত শতক ধরে সমাদৃত হয়ে আসছেন। তিনি কাব্য রচনা করেছেন আরবি, তুর্কি ও ফারসি ভাষায়। ফারসি ভাষায় রচিত ‘মসনবি’ তার অমর কাব্যের নিদর্শন। হাজারো হৃদয়ে রাজত্বকারী এ মহান সাধক কয়ে আছেন তুরস্কের কুনিয়ায়। কবরের ওপর একটি বিশালাকার গম্বুজ, আরেকটি গম্বুজ বাঁ দিকের শেষ মাথায়। একপাশে রয়েছে সুউচ্চ মিনার।
বিশাল আয়তনজুড়ে রুমির মাজার। তার কবরের একপাশে তার পিতার কবর, অন্যপাশে মায়ের কবর। চারদিকে রয়েছে তার শিষা ও বরেণ্য বুজুর্গদের কবর। কুনিয়ায়। বিশাল এলাকাজুড়ে তার সমাধি কমপ্লেক্স। মাওলানা রুমির শামসুদ্দিন তাবরেজ কমপ্লেক্স। মাওলানা রুমির আধ্যাত্মিক গুরু শামসুদ্দিন তাবরেজি (১১৮৫-১২৪৮ খ্রিষ্টাব্দ)। তুরস্কের কুনিয়ায় মাওলানা রুমির সমাধি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তার সমাধি কমপ্লেক্স। আছে উবু জামে বা শামসুদ্দিন জামে মসজিদ। কবরের ওপর রাখা আছে শায়খ ভাবরেজির ব্যবহৃত বিখ্যাত পাগড়ি। এ আধ্যাত্মিক মহান সাধকের হৃদয়-আলোতেই জীবনের মোড় পরিবর্তন হয়ে যায় মাওলানা রুমির। জনতার মাঝ থেকে হারিয়ে গিয়ে নির্জনতার জীবনে প্রবেশ করেন মারেফাতের করি জালালুদ্দিন রুমি। ইতিহাস বলে, মাওলানা রুমি ও শামসুদ্দিন তাবরেজির মধ্যে ভাব হতে বেশ সময় লাগে।
সেসব সময়ের অনেক শিক্ষণীয় গল্প ও চিন্তাজাগানিয়া কাহিনি আজও মুখে মুখে ফেরে কুনিয়ার লোকদের। আলাউদ্দিনের মসজিদ ও সমাধি: সুলতান আলাউদ্দিনের মূল নাম আলাউদ্দিন মুহাম্মদ কায়কোবাদ। আনাতোলিয়া সেনজুক সাম্রাজ্যের এ সুলভান তুরস্কের অন্যতম প্রাচীন মসজিদটি তৈরি করেন। কুনিয়াকে বলা হয় প্রেমনগরী বা মারেফাতের শহর। সেলজুক আমলে তুরস্কেত রাজধানী ছিল এ কুনিয়া। সে সময়কার অনেক স্মৃতি ছড়িয়ে আছে এ মসজিদের নানা প্রান্তে। সুলতান তুরস্কের ঐতিহ্য ও সভ্যতার কথা ইসলামের ইতিহাসে তুরস্ক ও ইস্তাম্বুল আলোচিত নাম। ইস্তাম্বুলের প্রাচীন নাম কনস্টান্টিনোপল। একে আরবিতে বলে ‘কুস্তানতিনিয়া’। বেশ কয়েকজন নবী ও মুসলিম মনীষীর পদচারণে মুখরিত শহর এটি আলাউদ্দিনের সমাধির পাশের বিশাল মসজিদটির বয়স প্রায় সাড়ে নয়শ বছর। এটি নির্মাণ শুরু করেছিলেন সুলতান মাসুদ, সমাপ্ত করেন সুলতান আলাউদ্দিন।
মসজিদের মিম্বরের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। আরবি ও রোমানশৈলীতে নির্মিত এ মিম্বরে রয়েছে নানা কারুকার্য ও আরবি ক্যালিগ্রাফি। হরফগুলো কুফিধারায় অঙ্কিত। কোথাও আছে আয়াতুল কুরসি, কোথাও কোরআনের সুরা, কোথাও বা আয়াত। কালো রঙের প্রাচীন দামি তাঠে নির্মিত এ মিম্বরটি মসজিদের সৌন্দর্য ও আভিজাত্য প্রকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। দানিয়াল (আ.)-এর কবর সানুরফা থেকে কুনিয়ার পথে তুরস্কের প্রাচীন সভ্যতার শহর তারতুস। এখানে আছে বনি ইসরাইলের বিখ্যাত নবী দানিয়ান (আ.)-এর কবর। ইতিহাসে আলোচিত বুখতে নসরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন তিনি। তবে বহুকালব্যাপী কেউ জানত না- কোথায় তার কবর। এমনকি এখানকার অনেক অধিবাসীও নায়। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রা.)-এর সময়কালে তারতুসের পুরোনো একটি কবর ভেঙে গেলে প্রাচীন সূত্র থেকে আবিষ্কৃত হয়, এখানেই শুয়ে আছেন নবী দানিয়ান দানিয়ান (আ.)।
কবর ভেঙে গেনে নতুন করে দাফনের প্রয়োজন দেখা দেয়। হাজার বছর পরে যখন দানিয়াল (আ.)-কে তারতুসে নতুন করে দাফনের কাজে ওমর (রা.)-এর পক্ষ থেকে এ মহান কাজে অংশ নেন বিখ্যাত সাহাবি আবু মুসা আশআরি (রা.)। এভাবেই বনি ইসরাইলের একজন নবীর দাফন হয় শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সাহাবির হাতে। মোল্লা নাসিরুদ্দিন হোজ্জার সমাধি। তাকে কেউ বলেন মোল্লা, কেউ ডাকেন হোল্ডা। স্থানীয় পরিভাষায় বলা হয় হোজা। কেউ লিখেছেন খাজা। কারো কলমে নাসিরুদ্দিন আফেন্দি। সাধারণত সবাই তাকে বলেন, মোল্লা নাসিরুদ্দিন হোজ্জা। পৃথিবীখ্যাত এ মানুষটির পুরো নাম নাসিরুদ্দিন মাহমুদ আল-খায়ি। আফিনান প্রদেশের প্রাচীন কবরস্থানে হোজ্জার। হোজ্জার সমাধি। হোজ্জার কবরের দু’পাশে সবুজ কাপড়ে সোনালি সুতায় লেখা দুটি আয়াত। ওপরে কাঁচের আবরণ। মাথার পাশে তার ব্যবহৃত পাগড়ির রেপ্লিকা। তার শহরে যেভাবে তাকে তুলে ধরা হয়েছে, এতে করে বোঝা যায়, হোজ্জা ছিলেন ছোটখাটো, কিছুটা বেঁটে। মাথায় পরতেন পাগড়ি আর গায়ে চড়াতেন জুব্বা। সফরের বাহন হিসেবে থাকত গানা। হোজ্জাকে নিয়ে হাজারেরও বেশি গল্প চালু আছে। কোনো গল্পে তাকে মনে হয় খুব বুদ্ধিমান, আবার কোনো গল্পে তার আচরণ সাধারণ চোখে একেবারেই বোকা। কিন্তু এর পেছনে থাকত কোনো প্রজ্ঞা বা শিক্ষা। তার সূক্ষ্ম রসবোধে সবসময়ই থাকত কোনো না কোনো সবক। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন বিচারক। রসবোধের অনন্য ছোঁয়ায় তিনি সমাজের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরতেন। পৃথিবীর প্রায় সব ভাষায় তার গল্পের চর্চা রয়েছে। নাসিরুদ্দিন হোজ্জার প্রতি সম্মান জানিয়ে ইউনেস্কো ১৯৯৬ সালকে ‘হোজ্জাবর্ষ’ হিসেবে ঘোষনা করে। আসহাবে কাহফের বিখ্যাত গুহা: আসহাবে কাহফের সেই ঐতিহাসিক গুহ্য কোথায় অবস্থিত, প্রাচীনকাল থেকেই তা নিয়ে মতবিরোধ আছে। তবে বেশিরভাগ তাফসিরবিদ ‘আফসুস নগরীকে আসহাবে কাহফের স্থান সাব্যস্ত করেছেন।
এটি এশিয়া মহাদেশের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত রোমকদের সর্ববৃহৎ নগরী ছিল। এর ধ্বংসাবশেষ তুরস্কের ইজমির শহর থেকে ২০-২৫ মাইল দক্ষিণে পাওয়া যায়। মাওলানা আশরাফ আলী খাননি (রহ.) যয়ানুল কোরআনে আসহাবে কাহফের স্থান সম্পর্কে ঐতিহাসিক তথ্য উদ্ধৃতি করে লিখেছেন, যে অত্যাচারী শাসকের ভয়ে পালিয়ে গিয়ে আসহাবে কাহফ গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন, তার সময়কাল ছিল ২৫০ খ্রিষ্টাব্দ। এরপর ৩০০ বছর পর্যন্ত তারা ঘুমন্ত ছিলেন। ৫৫০ খ্রিষ্টাব্দে আদের জন্নাত হওয়ার ঘটনা ঘটে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে জন্যগ্রহণ করেন। এভাবে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্মের ২০ বছর আগপর্যন্ত আসহাবে কাহফ নিদ্রা থেকে জাগ্রত হন। তাফসিরে হক্কানিতেও তাদের স্থান ‘আফসুস’ অথবা ‘তারতুস’ শহর সাব্যস্ত করা হয়েছে। তুরস্কের তারতুসে অবস্থিত গুহাটিই আসহাবে কাহফের সঠিক গুহা। এমনটাই দাবি স্থানীয় গবেষকদের। বর্তমানে এর ধ্বাংসাবশেষের নানা স্মৃতিচিহ্ন বিদ্যমান আছে তারতুসে। তৎকালীন অত্যাচারী রোমান সম্রাট থেকে পালিয়ে ঈমান রক্ষায় এ গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন সাত যুবক। তাদের সঙ্গে ছিল কিতমির নামের এক কুকুর।
এ প্রসঙ্গে কোরজানে ‘সুরা কাহফ’ নামে আলাদা একটি সুরা রয়েছে। প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় জামিয়া হাররানা। হাররানায় ছিল পৃথিবীর প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়। নাম ‘জামিয়া হাররানা’। এখানকার অধিবাসীদের দাবি, এটি পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। দ্যালয়। ধারণা করা যায়, পুরো পৃথিবীর প্রথম না হলেও এটি তুরস্কের সবচেয়ে প্রাচীন ও প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। এর পাশেই রয়েছে জামে মসজিদ। যাকে এখানকার ভাষায় বলা হয়, ‘উলু জামে’। বিশাল আকৃতির মসজিদ। মসজিদ কমপ্লেক্সের একপাশে প্রায় ৬০ ফুট উচ্চতার চারকোণা মিনারা। লাল ইটের বলে কেউ কেউ এটিকে লাল মিনারাও বলেন। এ প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় আব্বাসীয় আমলে।
তখন সারা পৃথিবীতে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিস্ময়কর জাগরণ সৃষ্টি হরেছিল বাগদাদের আব্বাসি খলিফাদের তত্ত্বাবধানে। সে সময়ে তুরস্কের এ হাররানে গড়ে তোলা হয় প্রাচীন এ জানশহর। প্রতিষ্ঠা করা হয় জামিয়া হাররান ও শহরের সবচেয়ে বড় মসজিদ। কালের বিবর্তনে যা আজ হারানো সভ্যতার শেষ সাক্ষী হয়ে আছে। মসজিদের প্রধান দরজার সামনের তোরণটি এখনও দাঁড়িয়ে আছে কালের স্মৃতি ধারণ করে। সভ্যতার এ অনন্য কীর্তি চাপা পড়েছিল মাটির নিচে। সেখান থেকে তুলে এ সভ্যতার সঙ্গে পৃথিবীকে নতুন করে পরিচয় করান হাররান আধুনিক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. মুহাম্মদ উনাল।
আসিফ ইবনে বরখিয়া। ননী সোলাইমান (আ.)-এর অন্যতম সাহাবি ও আলেম ছিলেন। সাবার রানি বিলকিসের রাজসিংহাসন চোখের পলকে ফিলিস্তিনে নিয়ে এসেছিলেন তিনিই। কোরআনের ‘সুরা নামলে’ তার ঘটনা বিবৃত হয়েছে। সোলাইমান (আ.)-এর দরবারে বিলকিস আসবেন। কিন্তু দরবারে উপস্থিত হওয়ার আগেই চাই রানির বিখ্যাত সেই রাজকীয় সিংহাসন। কিন্তু কে আনতে পারবে সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে। জিনদের মধ্য থেকে ‘ইফরিত’ নামে একজন দাঁড়াল। প্রতিশ্রুতি দিল, সোলাইমান (আ.)-এর দরবার শেষ হওয়ার আগেই সে উপস্থিত করবে। সোলাইমান (আ.) দরবারে আরও তলব করলেন। তখন একজন কিতাবের ইলম ধারণকারী বললেন, চোখের পলকেই সোটি উপস্থিত করা যাবে। সোলাইমান (আ.)-এর সেই আলেম সাহাবির নাম আসিফ ইবনে বরখিয়া। তুরস্কের ঐতিহাসিক শহর দিয়ারবাকার থেকে ৫২ কিলোমিটার দূরে এলজিন নামক এলাকায় তার সমাধি। তার ছেলে হারুন ইবনে আসিফ (আ.) শুয়ে আছেন তার পাশেই। লেখক। গবেষক, প্রাবন্ধিক ও ইতিহাসবিদ