Home » ছাত্রদলের কমিটিতে হত্যা মামলার আসামি, ছাত্রলীগের কর্মী

ছাত্রদলের কমিটিতে হত্যা মামলার আসামি, ছাত্রলীগের কর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

0 মন্তব্য গুলি 10 জন দেখেছে 4 মিনিট পড়েছেন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের বর্ধিত কমিটি এবং ১৭টি আবাসিক হলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এসব কমিটিতে পদ পেয়েছেন হত্যা মামলার আসামি এবং ছাত্রলীগ কর্মীরাও। এ ছাড়া ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত না থেকেও পদ পেয়েছেন কেউ কেউ।

গতকাল শুক্রবার ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ৩৭০ সদস্যের বর্ধিত কমিটি ঘোষণা করা হয়। একই দিনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন (বাবর) ও সদস্যসচিব ওয়াসিম আহমেদ স্বাক্ষরিত পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে ১৭টি আবাসিক হল ও ১টি অনুষদের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর আগে গত ৬ জানুয়ারি ১৭৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। সেই হিসাবে কমিটির সদস্যসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪৭ জনে।

নবগঠিত বর্ধিত কমিটি ও ১৭টি হলের কমিটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম মোল্লাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলার আসামি (বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কৃত) হামিদুল্লাহ সালমান, রাজু আহমেদ ও মোহাম্মদ রাজন মিয়া ছাত্রদলে পদ পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে হামিদুল্লাহ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ছাত্রদলের সভাপতি, রাজু শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং রাজন সদস্যপদ পেয়েছেন।

এ বিষয়ে হামিদুল্লাহ সালমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ওই হত্যার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনোরকম তদন্ত ছাড়াই মবের চাপে তড়িঘড়ি করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়। এ ঘটনায় আমাকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কারও করেছিল। এখন আমি নিয়মিত শিক্ষার্থী। ওই মামলা এখনো তদন্তাধীন। মামলার সঠিক তদন্ত হলে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হব।’

পদ পেয়েছেন ছাত্রলীগ কর্মীরা

নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, এমন কয়েকজন ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রোকেয়া হলে সভাপতি পদ পেয়েছেন কাজী মৌসুমী আফরোজ। তিনি শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে তাঁকে। ২১ নম্বর ছাত্র হলে সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া ফিরোজ আহমেদ এবং একই হলের সহসভাপতি সাইদুর রহমানও ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতেন।

১০ নম্বর হল ছাত্রদলের সভাপতি সাইফ বিন মাহবুব, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রাকিব মাওলা, বর্ধিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পাওয়া মো. শাকুর বাপ্পী, বর্ধিত কমিটির সদস্য শুভজিৎ বিশ্বাস, শাবাব সবুজ অর্ণব, ইমরান আজিজ—তাঁদের সবাইকে বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের মিছিল-সমাবেশে দেখা গেছে। তবে তাঁরা ছাত্রলীগের কোনো পদে ছিলেন না। এ ছাড়া শহীদ সালাম-বরকত হল ছাত্রদলের সভাপতির পদ পাওয়া সাইদুল ইসলাম ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের একাংশের বিগত কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন।

জাবি ছাত্রদলের ২১ নম্বর হলের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ছাত্রলীগ কর্মী ফিরোজ আহমেদ।ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁর ছবি
জাবি ছাত্রদলের ২১ নম্বর হলের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ছাত্রলীগ কর্মী ফিরোজ আহমেদ।ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁর ছবিফেসবুক থেকে সংগৃহীত

আ ফ ম কামালউদ্দিন হল ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতির দায়িত্ব পাওয়া খাইরুল ইসলাম (নাহিদ) ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ নিতেন। শাখা ছাত্রদলের বর্ধিত কমিটির সদস্য হয়েছেন আল আমিন, ইমন মোল্লা, তানভিরুল আরেফিন কবির পাপন। তাঁদের ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা গেছে। এ ছাড়া তাঁরা হলে ছাত্রলীগের রাজনৈতিক ব্লকের কক্ষে থাকতেন।

জানতে চাইলে ২১ নম্বর হল ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া ফিরোজ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগ করতাম না। তবে ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে ছাত্রলীগের দু-একটি কর্মসূচিতে গিয়েছিলাম। হলে সিট পেতে ও গণরুম কালচারের কারণে ছাত্রলীগ আমাকে জোরপূর্বক কয়েক দিন কর্মসূচিতে নিয়ে গিয়েছিল।’

রাজনীতি না করেও পদ

নবগঠিত হল কমিটির অন্তত তিন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না থাকার পরও কমিটিতে তাঁদের পদ দেওয়া হয়েছে। ওই তিনজন হলেন বীর প্রতীক তারামন বিবি হলের যুগ্ম সম্পাদক নোসিস মোকাররমা তেরেসা, রিফা নানজীবা হিয়া এবং নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক উম্মে হাবিবা।

এ বিষয়ে উম্মে হাবিবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ছাত্রদলের কোনো ধরনের মিছিল-মিটিং করিনি। তারপরও আমার নাম কমিটিতে দেওয়া হয়েছে। আমি ছাত্রদলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তারা বলেছে যে আমার নাম বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।’

‘অভিযোগের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা’

অভিযোগের বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, যথেষ্ট যাচাই-বাছাই করে কমিটি করা হয়েছে। এরপরও বিতর্কিত অনেকে হয়তো থেকে গেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পেলে অবশ্যই সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া কাউকে না জানিয়ে কমিটিতে পদ দেওয়া হয়নি। কমিটির জন্য ফরম পূরণ করা হয়েছিল। যাঁরা পূরণ করেছিলেন, তাঁদের মধ্য থেকে পদ দেওয়া হয়েছে।

পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের হল কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ মিছিল করেন পদবঞ্চিত ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। গতকাল শুক্রবার রাতে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের হল কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ মিছিল করেন পদবঞ্চিত ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। গতকাল শুক্রবার রাতেছবি: প্রথম আলো

কমিটি ঘোষণার পর শাখা ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত অন্তত ৩০ জন নেতা-কর্মী গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে হল কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে আবার বটতলায় গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে তাঁরা ‘বৈষম্যমূলক কমিটি মানি না, মানব না’, ‘ছাত্রলীগের কমিটি মানি না, মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

মিছিল শেষে বিক্ষোভকারী কয়েকজন বলেন, কমিটিতে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। নিজেদের লোক নিয়ে কমিটি করার মাধ্যমে সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই ‘পকেট কমিটি’ বিলুপ্ত করতে হবে। অন্যথায় তাঁরা কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবেন।

এই সম্পর্কিত আরো পোস্ট দেখতে পারেন

কমেন্ট লিখুন