সিলেটের ভোলাগঞ্জে পাথর লুটপাটের বিষয়টি তদন্তে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে দুদক সিলেট কার্যালয়ের পাঁচ সদস্যের একটি তদন্তদল সাদাপাথর পরিদর্শন শেষে জানিয়েছে, ‘এখানে কয়েক শ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ পাথর উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। এককথায় আত্মসাৎ করা হয়েছে।’
তারা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা যেটা জেনেছি, স্থানীয় লোকজন, এমনকি আরো উচ্চ স্তরের যারা ব্যবসায়ী, প্রভাবশালী ব্যক্তি তারা এর সঙ্গে জড়িত।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে সাদাপাথরে দুপুরে পৌঁছায় দুদকের তদন্তদল। তারা সেখানে স্থানীয় প্রশাসন, জনসাধারণসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন এবং নানা তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন। লুটপাটের এলাকাও সরেজমিন পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন শেষে দুদক সিলেট কার্যালয়ের উপপরিচালক রাফি মোহাম্মদ নাজমুস সাদাত বলেন, ‘দুদকের প্রধান কার্যালয়ের এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের নির্দেশ পাওয়ার পর আমরা ভোলাগঞ্জের সাদাপাথরে অভিযানে এসেছি।
কয়েক শ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ-পাথর বিগত কয়েক মাসে এখান থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। এককথায় আত্মসাৎ করা হয়েছে।’
স্থানীয় মানুষ ও বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকরা এমন কর্মকাণ্ড দেখে আফসোস করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এত সুন্দর পাথরগুলো যা কিনা সিলেটের একটা ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত, সেগুলো বেশ কয়েক মাস ধরে এখান থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে, আত্মসাৎ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা যা দেখেছি, এই সম্পদগুলো নিয়ে যাওয়া হয়েছে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে।
যারা এগুলো নিয়ে গেছেন তারা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কিংবা পর্যটন—এসবকে মাথায় না রেখেই ব্যবসায়িক স্বার্থে নিয়ে গেছেন।’
জড়িতদের শিগগিরই আইনের আওতায় আনা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটার সঙ্গে এখানকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আছেন, স্থানীয় লোকজন, এমনকি আরো উচ্চ স্তরের ব্যবসায়ী, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এটির সঙ্গে জড়িত। আমরা এটা নিয়ে আরো কাজ করব, এ তথ্যগুলো উদঘাটনের চেষ্টা করব। এগুলো বের করতে পারলে আমরা খুব শিগগির আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
সাদাপাথরের প্রায় সব পাথর লুটের পর এত দেরিতে কেন অভিযান শুরু করল দুদক—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের সিলেট দপ্তর হেড অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে।
আমাদের যখন এ অভিযান চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তখনই আমরা কাজ শুরু করেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘সিলেট থেকে যে ভৌগোলিক দূরত্ব আছে, সেটাও একটা বিষয়। আমাদের জনবলও কম, আবার আরো অনেক কাজ আছে। যে জনবল নিয়ে কাজ করি সে হিসেবে সীমাবদ্ধতার মাঝেও আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে হয়।’
এই লুটপাটের জন্য স্থানীয় প্রশাসনেরও দায় আছে বলে মনে করে দুদক। দুদকের উপপরিচালক রাফি মোহাম্মদ নাজমুস সাদাত বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে সাদাপাথর ভৌগোলিকভাবে কাছে। তাদের আরো সতর্ক থাকা প্রয়োজন ছিল। পাশাপাশি অন্য যেসব ডিপার্টমেন্ট এর সঙ্গে যুক্ত যেমন খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় তাদের ভূমিকা থাকা দরকার ছিল বলে আমরা মনে করি। আমরা আমাদের দায়িত্বটুকু পালনের চেষ্টা করছি।’
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ