তৃণমূলের সংবাদ ডেস্ক নিউজ:
মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, স্বল্পমেয়াদে তাদের কোনো রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নেই। তবে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র এমন একটি বিষয়—যেটা কখনই পুরোপুরি বাদ দেয়া যায় না। তারা আসলে কখনই হারিয়ে যায় না।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক থিংকট্যাংক উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি, মার্কিন নীতি ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিষয়ক অন্যতম শীর্ষ বিশ্লেষক তিনি। দীর্ঘদিন বাংলাদেশের রাজনীতি ও নীতি–প্রক্রিয়া ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন কুগেলম্যান। সম্প্রতি তিনি আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশের অবস্থান এবং দক্ষিণ এশিয়ার পরিবর্তনশীল ভূরাজনীতির প্রভাব নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহফুজ রাহমান
সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। এ বাস্তবতায় বাংলাদেশ ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে?
সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ায় বেশকিছু বড় ধরনের ভূরাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে, যার মধ্যে একাধিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। একসময় এ অঞ্চলের অন্যতম দৃঢ় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছিল বাংলাদেশ-ভারতের, যা এখন টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বহু বছর ধরে স্থবির থাকা বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক হঠাৎ করেই নতুন করে ঘনিষ্ঠতর হচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে জড়িত এ দুই বড় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে পরিবর্তন নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মূলত ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্ব দীর্ঘস্থায়ী। পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তান, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে বহুমাত্রিক সম্পর্ক রয়েছে, যা এ ভূরাজনৈতিক গুরুত্বকে আরো দৃঢ় করে।
আপনি বহু বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? আপনার মতে, বাংলাদেশ কোন দিকে এগোচ্ছে?
এক বছরেরও বেশি আগে যখন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়, তখন জনসাধারণের তাদের প্রতি ছিল অত্যন্ত উচ্চ প্রত্যাশা। সরকার নিজেও উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল—বিস্তৃত সংস্কার কার্যকর করা, অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করা, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি। এখন পর্যন্ত মূল্যায়ন করলে দেখা যায়, সংস্কারের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে ঘাটতি স্পষ্ট। অর্থনীতি এখনো নাজুক অবস্থায় আছে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সংস্কার প্রক্রিয়ায় ঠিক কী অগ্রগতি হয়েছে তা নিয়েও স্পষ্ট ধারণার অভাব রয়েছে। আমার সাম্প্রতিক সফর এবং গত জানুয়ারির সফরে লক্ষ্য করেছি, জনগণের ধৈর্য ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে আসছে। তারা প্রত্যাশিত ফল পাচ্ছে না, বিভিন্ন বিষয়ে আরো স্বচ্ছতা চাইছে।
এ প্রেক্ষাপটে আসন্ন নির্বাচনের গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। আমার মনে হয়, জনগণের বড় অংশই চায় সময়মতো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হোক—যাতে জনগণের ম্যান্ডেট পাওয়া একটি সরকার ক্ষমতায় আসে। যারা অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে থাকা কাজগুলো এগিয়ে নিয়ে যাবে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন, সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া এবং বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক সম্পর্ক শক্তিশালী রাখা—এগুলোই হবে সে সরকারের বড় দায়িত্ব।
আপনার মতে, আগামী দিনে বাংলাদেশ কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে?
আমার মনে হয়, সব দিকেই চ্যালেঞ্জ রয়েছে। স্থানীয় দিক থেকে শুরু করলে—যেমন আগে বলেছি অর্থনীতি এখনো বড় সমস্যা। তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জ হলো সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা আনা ও মূল্যস্ফীতি কমানো। দীর্ঘমেয়াদে চ্যালেঞ্জ হলো এমন একটি অর্থনীতি তৈরি করা, যা টেকসই হবে। এজন্য বাংলাদেশের রফতানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে—কারণ বহুদিন ধরে তৈরি পোশাকের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা চলছে। আমার মতে, প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোও দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।
রাজনৈতিক দিক থেকেও সমস্যা আছে। বহু বছর ধরে বাংলাদেশের যে প্রতিশোধমূলক রাজনীতি রয়েছে, সেটি এখনো গভীরভাবে প্রোথিত। তাছাড়া আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে বাদ দেয়া হয়েছে (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) এবং এর সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক পরিস্থিতি মিলিয়ে সহিংসতার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
আপনি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে বলছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবিও উঠতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে আপনার মত কী?
সোজাসুজি বলতে গেলে, আমি মনে করি রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা ভালো ধারণা নয়। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পেছনের যুক্তিগুলো আমি অনুধাবন করতে পারি। আমরা যখন হাসিনার ভারত থেকে দেয়া বক্তৃতা শুনি, সেখানে কোনো অনুশোচনা নেই। অতীতের নৃশংসতার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা নেই। কিন্তু সমস্যাটা হলো, যখন আপনি পুরো একটি দল নিষিদ্ধ করেন, তখন প্রথমেই ঝুঁকি থাকে। আমি আগেই যে প্রতিশোধমূলক রাজনীতির কথা বলেছি, সেটি আরো গভীরভাবে টিকে থাকবে। আপনি জানেন, রাজনৈতিক মেরুকরণ অনেক দেশেই থাকে। কিন্তু এটা যখন প্রতিশোধমূলক ও সহিংস হয়ে ওঠে, তখনই সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের কারণ তৈরি হয়। আর যদি আপনি একটি শক্তিশালী ও সুসংহত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চান, তাহলে বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে সামলাতে হবে।
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার মত কী?
আমার মনে হয়, স্বল্পমেয়াদে তাদের কোনো রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নেই। তবে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র এমন একটি বিষয়—যেটা কখনই পুরোপুরি বাদ দেয়া যায় না। তারা আসলে কখনই হারিয়ে যায় না। ভারতের উদাহরণ ধরুন—একটি পরিবারের নেতৃত্বাধীন দল দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী দলে। পাকিস্তানেও একই চিত্র—সেখানে একাধিক রাজনৈতিক বংশধারার দল এখনো সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে আছে। আগামী পাঁচ বা ১০ বছরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন হয়, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দেয়া যায় না। তবে সৎভাবে বললে, স্বল্পমেয়াদে আমি এমন কোনো পরিস্থিতি কল্পনা করতে পারছি না যেখানে তিনি (শেখ হাসিনা) ফিরে আসতে পারবেন। নির্বাচনে যে-ই জিতুক না কেন, তারা তাকে স্বাগত জানাবে—এটা ঘটবে না।
বলা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ানমার নীতিতে পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে। ট্রাম্প মিয়ানমারের রেয়ার আর্থ মিনারেলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছেন। এটি দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে নতুন মাত্রা আনবে?
এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বাংলাদেশের ওপরও বড় প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ এখানে সীমান্ত সংকট এবং রোহিঙ্গা ইস্যু দুটোই জড়িত। এটি এমন এক উদাহরণ, যা দেখায় কেন ট্রাম্প সম্পর্কে পূর্বাভাস দেয়া কঠিন। একদিকে তিনি ইঙ্গিত দিচ্ছেন, চীনের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে চান। হয়তো কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে চান। অন্যদিকে তিনি মিয়ানমারে এমন কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছেন, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মার্কিন নীতির সম্পূর্ণ বিপরীত— সবকিছুই চীনকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে।
ট্রাম্প মিয়ানমারের কিছু জেনারেলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করছেন, যাতে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সঙ্গে সহজে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে এবং সেখানকার রেয়ার আর্থে প্রবেশাধিকার পেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটি বাস্তবায়ন করা অনেক কঠিন, তারা এমন দেশগুলোর রেয়ার আর্থ ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজে আগ্রহী, যেগুলো খুবই অস্থিতিশীল ও ঝুঁকিপূর্ণ। তবে মনে হচ্ছে ট্রাম্প এটিই করতে চান, যা বাংলাদেশের জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ।
আপনি কি মনে করেন, নিকট ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব?
এটি বিশ্বের অন্যতম বড় ট্র্যাজেডি। বলা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং অবহেলিত ট্র্যাজেডিগুলোর একটি। হতাশাজনক বিষয় হলো, পৃথিবীর খুব কমসংখ্যক মানুষই রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কে জানে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অবশ্যই এ বিষয়ে অবগত, কিন্তু সামগ্রিকভাবে সচেতনতা খুবই সীমিত। বর্তমানে মিয়ানমারে যা ঘটছে, তা বিবেচনা করলে দেখা যায়—না আরাকান আর্মি, না মিয়ানমার রাষ্ট্র, না সরকার, না বেসামরিক অংশ, না সামরিক বাহিনী—কারো ওপরই রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার জন্য ভরসা করা যায় না। আমি বুঝতে পারি বাংলাদেশের সরকারি অবস্থান হলো দ্রুত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও স্বেচ্ছামূলক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতিতে এটি বাস্তবসম্মত নয়। আমি পরবর্তী সরকারের কথা বলতে পারছি না, তবে আমার মনে হয় না অন্তর্বর্তী সরকার বর্তমানে মিয়ানমারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে শরণার্থীদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে বাস্তবসম্মত কোনো প্রত্যাশা রাখছে।
তার মানে আপাতত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কোনো সম্ভাবনা নেই?
আমার মনে হয়, দীর্ঘমেয়াদে বা এমনকি মধ্যমেয়াদেও কিছু অগ্রগতি সম্ভব। অর্থাৎ, এটি এমন একটি সংঘাত নয়, যা কোনোভাবেই সমাধান করা যাবে না। সবচেয়ে জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতগুলো সাধারণত ভূখণ্ডসংক্রান্ত বা ধর্মীয় পার্থক্যের কারণে হয়ে থাকে। কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুটি মূলত একটি মানবিক সংকট, একটি সংঘাত যেখানে বহু পক্ষ জড়িত। বিষয়টি খুবই জটিল, কিন্তু একেবারেই অমীমাংসিত থেকে যাবে, এমনটা বলা ঠিক হবে না।
আপনি কি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ানমার নীতি পরিবর্তন হলে এ সমস্যা আরো জটিল হয়ে উঠবে?
আসলে বিষয়টি নির্ভর করছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কী করতে চান তার ওপর। বর্তমানে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা তেমন কোনো বড় চাপের মুখে নেই—কারণ তাদের পেছনে রাশিয়া ও চীনের সমর্থন আছে। ভারত এখনো জান্তার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা শুরু করে এবং জান্তার সঙ্গে কাজ করার উদ্যোগ নেয়, তবে এটি বড় একটি পরিবর্তন হবে। আমার কাছে পরিষ্কার নয়, তখন দেশটির ওপর আন্তর্জাতিক চাপ কোথা থেকে আসতে পারে—হয়তো ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইউরোপের কিছু দেশ থেকে আসতে পারে।
বাংলাদেশের হাতে তেমন কোনো কূটনৈতিক প্রভাব নেই, যা দিয়ে তারা চাপ প্রয়োগ করতে পারবে, আর আমার মনে হয় না বাংলাদেশ সেটি করতে চাইবে। বরং বাংলাদেশ সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখতে চায়—একদিকে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা এবং অন্যদিকে আরাকান আর্মির সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাওয়া।
আপনি বলছেন আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ আরো বাড়ানো উচিত?
অবশ্যই। আমার মনে হয়, এখানে বাংলাদেশের কোনো বিকল্প নেই। আমার ধারণা, বাংলাদেশের কর্মকর্তারাও এমনটাই ভাবছেন। কারণ আরাকান আর্মি বর্তমানে প্রায় পুরো সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করছে—তাদের উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। আর ভবিষ্যতে যদি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করতে হয়, তাহলে অবশ্যই আরাকান আর্মির সঙ্গে কাজ করতে হবে। এটা অনিবার্য বাস্তবতা।
দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। সম্প্রতি ট্রাম্পের বাণিজ্য শুল্ক ভারতের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে এসেছে। আপনার কী মনে হয়—ভারত ও চীন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বড় পরিবর্তন আসছে?
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত-চীন সম্পর্কের সমীকরণে বড় পরিবর্তন ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের সংকট এ অঞ্চলের জন্য উদ্বেগের বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের প্রতি তার আস্থার একটি বড় অংশ হারিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে মানুষে মানুষে যোগাযোগ, বাণিজ্যিক লেনদেন, কৌশলগত সহযোগিতা এবং দুই দেশের নেতাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কেও, যা একসময় খুবই দৃঢ় ছিল। ভারত-চীন সম্পর্কের প্রকৃতি ভিন্ন এবং আরো জটিল। প্রায় এক বছর ধরে দুই দেশই টানাপড়েন কমাতে উদ্যোগ নিচ্ছে। সাত বছর পর প্রধানমন্ত্রী মোদির সাম্প্রতিক চীন সফর তারই অংশ। তবুও এ সম্পর্কের সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। সীমান্ত বিরোধ এখনো বড় অবিশ্বাসের কারণ, আর পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ জোট অপরিবর্তিত রয়েছে। এমনকি সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে পাকিস্তান প্রথমবার চীনা অস্ত্র ব্যবহার করেছে। সব মিলিয়ে আমার মনে হয়, সম্পর্ক কিছুটা উষ্ণ হতে পারে, কারণ উভয় দেশেরই টানাপড়েন হ্রাসে স্বার্থ রয়েছে। কিন্তু এটি কোনো নতুন কৌশলগত জোটে রূপ নেবে না।
মানে আপনি বলছেন চীনের পক্ষে একই সঙ্গে ভারত ও পাকিস্তানের বন্ধু হওয়া সম্ভব নয়?
আসলেই তাই। এর মূল কারণ চীন-পাকিস্তান ঘনিষ্ঠতা। চীন ভারতের সঙ্গে কার্যকর একটি সম্পর্ক রাখতে পারে, কিন্তু আগেই বলেছি, চীন সবসময় পাকিস্তানকেই ভারতের ওপর অগ্রাধিকার দেবে। পাকিস্তান চীনকে আরব সাগরে প্রবেশাধিকার দেয়, যা কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীন ভালোভাবেই জানে, পাকিস্তান ও ভারতের সম্পর্ক শিগগিরই বদলাবে না। ভারত-চীন সম্পর্কের টানাপড়েন কমলেও এর উন্নতির সীমা থাকবে এবং খুব বেশি অগ্রগতি আশা করা ঠিক হবে না।
এসসিও সম্মেলনে শি জিনপিং, ভ্লাদিমির পুতিন ও নরেন্দ্র মোদিকে একসঙ্গে দেখা গেছে। এটা আসলে কী বার্তা বহন করে?
মোদির দুই পাশে পুতিন ও শি, দৃশ্যটি অত্যন্ত শক্তিশালী। পুতিন হচ্ছেন সেই নেতা, যার থেকে যুক্তরাষ্ট্র চায় ভারত দূরত্ব বজায় রাখুক। আর শি হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। এটা এমন সময়ে ঘটছে যখন যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক মারাত্মক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয়, বলা যেতে পারে—এ তিন নেতার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা ছবিটি আসলে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি এক ধরনের চ্যালেঞ্জ।
আপনি বাংলাদেশে এসে প্রায় এক সপ্তাহ কাটালেন। কেমন লাগছে? বাংলাদেশের বিষয়ে আপনার সামগ্রিক ধারণা কী?
এখানে যখনই আসি, আমার ওজন কয়েক পাউন্ড বেড়ে যায় (হাসি)। কারণ আমি এখানকার অসাধারণ খাবার অনেক বেশি খেয়ে ফেলি। সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত তরুণদের সঙ্গে আলাপচারিতা। গত বছরের গণ-আন্দোলনে তরুণদের নেতৃত্বে যে বড় অর্জন এসেছে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করা একজন বিশ্লেষক হিসেবে আমার মনে হয় তরুণদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং তাদের কথা শোনা খুব জরুরি। তারা আমাকে যা বলেছেন, তা আমার মনে গেঁথে থাকবে।